ভারতে কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন চলছে। এরই মধ্যে উত্তরপ্রদেশে আন্দোলনরত চার কৃষককে গাড়িচাপায় হত্যা করা হয়েছে। আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে বুধবার চিত্রকর্ম ও স্লোগানে সাজানো হয়েছে কলকাতার একটা পূজামণ্ডপকে- এএফপি ।
ভারতের উত্তরপ্রদেশে মন্ত্রীপুত্রের গাড়িচাপায় কৃষক হত্যার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গত রোববার চার কৃষককে হত্যার পর থেকে দেশজুড়ে আন্দোলন চলছে। গতকাল বুধবারও উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব ও পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ওই ঘটনায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় কুমার মিশ্রের ছেলে আশিস মিশ্রের বিরুদ্ধে মামলা হলেও গতকাল পর্যন্ত তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এরই মধ্যে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির বিরুদ্ধে ওই ঘটনা আড়াল করার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি ঘটনাস্থল লাখিমপুর খেরিতে বিরোধী নেতাদের যেতেও বাধা দিয়েছে ওই রাজ্যের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার। তবে এত কিছুর পর এখনও মুখ খোলেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
গত রোববার উত্তরপ্রদেশের লাখিমপুর খেরিতে সহিংস ঘটনায় চার কৃষকসহ আটজন নিহত হন। সেখানে দুই মন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে এ সহিংস ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আশিস মিশ্রের বিরুদ্ধে গাড়িচাপা দিয়ে চার কৃষককে হত্যার অভিযোগ এনে মামলা হয়। এরপর নিহতদের স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন কংগ্রেসনেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধীসহ এক ডজনের বেশি বিরোধী নেতা। এরপর সোমবার প্রিয়াঙ্কা গান্ধীসহ উত্তরপ্রদেশ কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অজয় কুমার লাল্লু, দিপেনদার সিং হুদা ও দীপক সিংকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
স্থানীয় হারগাঁও থানার পুলিশ কর্মকর্তা ব্রিজেশ কুমার ত্রিপাঠি বলেন, সোমবার লাখিমপুর খেরিতে যাওয়ার পথে ভোরে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে থামানো হয়। পরে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করায় তাকে আটক করে গেস্ট হাউসে বন্দি রাখা হয়।
এদিকে, লাখিমপুর খেরিতে বিরোধী নেতাদের যেতে না দেওয়ায় বিজেপির কড়া সমালোচনা করেছে শিবসেনা। ওই সংগঠনের এমপি সঞ্জয় রাউত ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, ওটা (উত্তরপ্রদেশ) কী পাকিস্তান, যে সেখানে ভারতীয়দের যেতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রিয়াঙ্কাকে গ্রেপ্তারের পর এ ঘটনার কড়া প্রতিবাদ জানান বিরোধী নেতারা। এরপর সোমবার ঘটনাস্থলে যাওয়ার জন্য উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কাছে চিঠি লেখেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তবে তাকে সেখানে যাওয়ার জন্য প্রথমে অনুমতি না দিলেও গতকাল দুপুরের পর প্রিয়াঙ্কাকে মুক্তি এবং রাহুলসহ পাঁচজনকে সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেয় রাজ্য সরকার।
রাজ্য সরকার জানায়, রাহুল-প্রিয়াঙ্কার পাশাপাশি ছত্তিসগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভুপেশ বাঘেল, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ চন্নী ও রাজস্থানের কংগ্রেস নেতা শচিন পাইলটকে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এরপরই উত্তরপ্রদেশের শিতপুরে যেখানে প্রিয়াঙ্কাকে রাখা হয়েছিল সেখানে যান রাহুল। পরে তারা লাখিমপুর খেরিতে যান। এরই মধ্যে গতকাল পাঞ্জাবের কংগ্রেস সভাপতি নভজোৎ সিং সিধু জানান, আজ পাঞ্জাব থেকে উত্তরপ্রদেশের লাখিমপুর খেরি পর্যন্ত মিছিল করবে কংগ্রেস। কৃষক হত্যার প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে। এর আগে সোমবার নিহত কৃষকদের স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিদলসহ বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা।
এরই মধ্যে চাপে থাকা বিজেপির শীর্ষ নেতা ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ওই ঘটনায় অভিযুক্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। গতকাল দিল্লিতে তাদের বৈঠকের পর সরকারি সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী পদত্যাগ করতে চাইলেও তা প্রত্যাখ্যান করেছে কেন্দ্র। তবে ওই ঘটনার বিষয়ে
শুরু থেকে আশিস মিশ্র জড়িত নন বলে দাবি করে আসছেন তার বাবা ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। খবর এনডিটিভি ও পিটিআইয়ের।