নারায়ণগঞ্জ নিতাইগঞ্জ ডালপট্রি এলাকায় ছয়তলা ভবনের একটি ফ্ল্যাট বাসা থেকে মা-মেয়ের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেছে সদর থানা পুলিশ।
মঙ্গলবার (১ মার্চ) বিকেলে লাশ দুটি উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হলেন রুমা চক্রবর্তী (৪৬) ও তার সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে ঋতু চক্রবর্তী (২২)। নিহত দুজনের মধ্যে একজনের মরদেহ মেঝেতে রক্তমাখা ও আরেক জনের দেহ মেঝেতে করা বিছানায় পড়ে ছিল। এ ঘটনায় রুমার ছেলে ও ছেলের স্ত্রীও আহত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তাদেরকে বাসার ভেতরে ঢুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের সহায়তায় রক্তমাখা ছোড়াসহ জোবায়ের (৩৪) নামে এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, নিতাইগঞ্জের ডালপট্রি এলাকার ‘মাতৃসদন’ নামের ছয়তলা বিল্ডিং এর ৬ষ্ঠতলার একটি ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন রামপ্রসাদ চক্রবর্তি। সম্প্রতি তার ছেলে হৃদয় ধর্মান্তরিত হয়ে ফারজানা নামে এক নারীকে বিয়ে করেন। মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে উপর থেকে চিৎকার শুনে স্থানীয়রা বিল্ডিং এর মূল গেইটে তালা লাগিয়ে দেয়। খবর দেয়া হয় সদর থানা পুলিশকে। এরপর পুলিশ গিয়ে ওই ফ্ল্যাট থেকে মা ও মেয়ের লাশ উদ্ধার করে। এসময় আহত অবস্থায় ফারজানা বেগম ও তার স্বামী হৃদয়কে উদ্ধার এবং জোবায়ের হোসেনকে আটক করে। এসময় জোবায়েরের হাতে রক্তমাখা গ্লাভস পড়া ছিলো। পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে।
নিতাইগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শংকর সাহা জানান, চিৎকার চেঁচামেচি শুনে আমরা নিচে এসে ছয়তলা ভবনের প্রধান গেইটটি তালা মেরে দেই। এসময় একজন নারী বঁটি হাতে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মরদেহ উদ্ধার করে। আটক করার সময় জুবায়েরের কাছ থেকে রক্তমাখা ধারালো ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় জুবায়ের রক্তমাখা গ্লাভস পড়া ছিল।
নিহত রুমা চক্রবর্তীর স্বামী রাম প্রসাদ চক্রবর্তি জানান, আমি স্থানীয় একটি দোকানে কাজ করি। কি কারণে এ হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে তা জানা নেই। আমি খবর পেয়ে বাসায় এসে দেখি আমার সব শেষ। কারো সঙ্গে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই। আমি এ হত্যার বিচার চাই। আমার মেয়ে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। এটা তো দুজনকে হত্যা নয় এক সঙ্গে তিন জনের জীবন কেড়ে নিয়েছে ঘাতক।
তিনি আরও বলেন, জোবায়ের কে আমি চিনি না। কেন কি কারনে আমার স্ত্রী অন্তঃস্বত্তা মেয়েকে হত্যা করলেঅ তাও জানিনা।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ শাহজামান জানান, আটক জুবায়ের বেলা আড়াইটার দিকে নিহতদের বাসার দরজায় নক করেন। এ সময় রুমা চক্রবর্তী দরজা খোলামাত্র জুবায়ের তার পেটসহ পুরো শরীরে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করেন। পরে একইভাবে কক্ষে থাকা মিতুকেও ছুরিকাঘাত করে খুন করেন জুবায়ের।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. আমির খসরু গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, গ্রেপ্তার যুবক নানামুখি উত্তর দিচ্ছেন। আমরা তার দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করছি। তবে, কি কারণে খুন হয়েছে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। তদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।