বিদেশে রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস পণ্য বিশাল চোরচক্রের সন্ধান পেয়েছে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। প্রশাসনিক এই সংস্থা দক্ষতার সাথে গত ৩১ মার্চ থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ১১ দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এই চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা মডেল থানায় দায়ের করা একটি মামলার তদন্তে নেমে এই চক্রের সন্ধান মিলেছে। উদ্ধার করেছে বিপুল পরিমাণ চোরাই পণ্য।
রোববার (১০ এপ্রিল) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ডে নিজ কার্যালয়ে পিবিআইয়ের জেলা পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে এইসব তথ্য জানান।
গ্রেফতার সাতজন হলেন: চোরাই চক্রের মূলহোতা মিজানুর রহমান সোহেল (৪০) সমন্বয়কারী সাইফুল ইসলাম রায়হান (৩২), চোরাই মালের বিক্রেতা তৌহিদুল ইসলাম কাউসার (৪২), চোরাই চক্রের দালাল মোতালিব হোসেন বাবু (৪৮), চোরাইকাজে ব্যবহৃত ট্রাকের মালিক ফারুক হোসেন (২৮), গোডাউনের বিল্লাল হোসেন (৩৪) এবং ট্রাকচালক মো. পারভেজ (৩০)। গ্রেফতার প্রত্যেক আসামির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
পিবিআই জানায়, গত বছরের ৫ মে ফতুল্লার বিসিক এলাকার ফেইম অ্যাপারেলস লিমিটেডের তৈরি পোশাক শিপমেন্টের জন্য পাঠালে সেখান থেকে ৩০ হাজার ৫৪৩ পিস চুরি হয়। বিদেশি ক্রেতার মাধ্যমে এই তথ্য জানতে পেরে থানায় মামলা করে কারখানা মালিকপক্ষ। মামলাটি গত ১৩ ফেব্রুয়ারি তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সহায়তায় গত ১১ দিন নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মিরপুর, সাভার, সীতাকুন্ড, ফটিকছড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চোরাই চক্রের মূলহোতাসহ সাতজনকে গ্রেফতার করে তদন্তকারী সংস্থাটি।
আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে পিবিআই জানায়, চোরচক্রের মূলহোতা সোহেলের নির্দেশ ও অর্থায়নে আসামি রায়হান চক্রের সমন্বয়কারী হিসেবে ভূমিকা পালন করে। কাভার্ডভ্যান চালককে আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে সিল ট্যাগ অক্ষত রেখে শিপমেন্টের এক-তৃতীয়াংশ পণ্য চুরি করে। চুরি করা পণ্যের জায়গায় ঝুট ঢুকিয়ে দেওয়ায় শিপমেন্টের সময় ওজন ঠিক থাকে বলে ধরা পড়ে না। পরে চোরাই পণ্য কিছুদিন গোডাউনে রাখা হয়। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ, ঢাকার ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার, মাতুয়াইলে এই ধরনের একাধিক গোডাউনের সন্ধান পেয়েছে পিবিআই। পরে এইসব চোরাই পণ্য বিমানের মাধ্যমে দেশের বাইরে মালেশিয়ার পেনাং, হাংকুয়া ও কুয়ালালামপুরে পাঠানোর ব্যবস্থা করে এই চক্রের মূলহোতা সোহেল।
পিবিআই পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম বলেন, গত ৮ এপ্রিল মিরপুরের গোডাউনে অভিযান চালিয়ে মালামালের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রবিহীন বিপুল পরিমান রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস পণ্য উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় পল্লবী থানায় একটি নিয়মিত মামলা করে পিবিআই।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এটি সাধারণ চুরি নয়। এতে বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশের পোশাক খাত নিয়ে বিরূপ ধারণা পোষণ করে। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়। কিন্তু এই ধরনের ঘটনায় সাধারণ চুরির মামলা হলে কয়েকদিন পর জামিন নিয়ে বেরিয়ে যায় আর মামলা দিনের পর দিন চলতে থাকে। এই কারণে এই ঘটনায় চুরির মামলা নিয়ে আমাদের আপত্তি আছে। দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে এই ঘটনার জন্য বিশেষ আইন ও আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানাই। এ নিয়ে আমরা বেশকিছু সুপারিশও ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে করেছি।