আদমজী ইপিজেডের অভ্যন্তরে চার্মিন নামে একটি
নির্মানাধীন গার্মেন্টেসের নির্মান সামগ্রি সরবরাহকে
কেন্দ্র করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহবায়ক কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি’র নির্দেশে সিদ্ধিরগঞ্জ পুলিশের তালিকাভুক্ত কিশোরগ্যাং লিডার একাধিক মামলার আসামী পানি আক্তারগ্যাং আদমজী আঞ্চলীক শ্রমিকলীগের সদস্য সচিব সাদ্দাম হোসেন ও তাঁতীলীগের আহবায়ক গুজা লিটনের লোকজনের উপর হামলা চালিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট ) বিকালে সিদ্ধিরগঞ্জ আদমজী ইপিজেডের অভ্যন্তরে চার্মিন নামে একটি নির্মানাধীন গার্মেন্টেসের নির্মান সামগ্রি সরবরাহকে কেন্দ্র করে এঘটনাটি ঘটে।
কিশোরগ্যাং লিডার পানি আক্তারগংদের হামলায় আদমজী আঞ্চলীক শ্রমিকলীগের হাসান, থানা তাতীলীগের আহবায়ক লিটন আহমেদ, আলাউদ্দিন, সেলিম মজুমদারসহ ৭/৮জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে । আহতদের উদ্ধার করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, নারায়ণগঞ্জ খানপুর এবং ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সংরক্ষিত এলাকা আদমজী ইপিজেডের ভিতরে চার্মিন গার্মেন্টের সামনে মতিউর রহমান মতির নির্দেশের দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র ও সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে কিশোরগ্যাং লিডার পানি আক্তার বাহিনীর হামলায় ইপিজেড এলাকায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। পানি আক্তার কিভাবে সংরক্ষিত এলাকায় অস্ত্র ঢুকালো এর ফলে ইপিজেডে নিরাপত্তা নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এদিকে ইপিজেডের ভিতর সাদ্দাম ও লিটনের লোকদের উপর হামলার ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে পানি আক্তার তার নিজের অফিস ভেঙ্গে সেই পুরোনো নাটক সাজিয়েছে বলে আহতরা অভিযোগ করেছে। যেমন নাটক সাজিয়েছিলো গত ৩বছর আগে সাবেক কাউন্সিলর সিরাজ মন্ডল ও হান্নান প্রধানের সাথে সংঘর্ষের সময়। পানি আক্তার নিজেদের অফিসে আগুন দিয়ে নাম দিয়েছিলো সিরাজ মন্ডল ও হান্নান প্রধানের যা সে সময় বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়েছিলো। ঠিক তেমনি গতকালও পানি আক্তারের অফিসে গুজা লিটন বাহিনীর হামলার নাটকের ঘটনা দেখিয়ে তারা লিটনের সোনামিয়া বাজারস্ত রেললাইন তাতীলীগের কার্যালয় ভাংচুর করেছে বলে অভিযোগ করেছেন লিটনের বোন। এদিকে হামলা ও মারামারির খবর পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক শওকত জামিল পুলিশ নিয়ে সুমিলপাড়া ও ৬নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। পুলিশ আসার আগেই আক্তার বাহিনীর তার দলবল নিয়ে চলে যায়। যার ফলে পুলিশ কোন সংঘর্ষ ঘটনা পাইনি। তবে তারা অফিস ভাংচুর দেখতে পেয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন রাখতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুরো এলাকায় থমথমভাব বিরাজ করছে।
এই ঘটনায় এলাকাবাসী কাউন্সিলর মতি’র প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। একজন কাউন্সিলর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে কাজ না করে উল্টো মারধনের নির্দেশ প্রদানই এলাকাবাসীর ক্ষোভের কারন বলে জানায় তারা। আক্তার বাহিনীর হামলায় আহত সিদ্ধিরগঞ্জ থানা তাঁতী লীগের আহবায়ক লিটন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আদমজী চার্মিন গার্মেন্টসের নির্মাণ সামর্গী সরবরাহের কাজ আমি পেয়েছিলাম। পার্টনার হিসেবে হীরাকে নেই। আমি হীরার থেকে ১০লক্ষের উপরে টাকা পাই। সেই টাকা না দিয়ে আমার সাথে পল্টি মেরে হীরা আমার সাথে বিশ্ববাসঘাতক করে কিশোরগ্যাং লিডার পানি আক্তারের সাথে হাত মিলিয়ে আমাকে বাদ দিতে চায়। আমি প্রতিবাদ করায় বিষয়টি স্থানীয় কাউন্সিলরকে অবহিত করা হয়। তিনি এর মিমাংসা না করে গতকাল দুপুরে ইপিজেডের ভিতরে এসে কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি প্রকাশ্যে আমাকে মেরে ফেলার হুমকী দিয়ে যায়। যার ফলে মতিউর রহমান মতি’র হুকুম পেয়ে কিশোরগ্যাং লিডার আক্তার তার প্রাইভেট কারের ভিতর ভর্তি করে লাঠি, রাম দা, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আসে। এরপর তার লোকজন এসে আমার উপর শ্রমিকলীগের লোকদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। পরে তারা আবার তাঁতী লীগের দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে মারধর ও ভাংচুর করে। এ হামলায় আদমজী আঞ্চলীক শ্রমিকলীগের হাসান, আমি, আলাউদ্দিন, সেলিম মজুমদারসহ ৭/৮জন আহত হই । হামলায় আহত শ্রমিকলীগের লোকজন জানায়, তাতীলীগের নেতা লিটন কাউন্সিলর মতির লোক ছিলো। কিন্তু কাউন্সিলরের সাথে থেকে তার শুধু খরচই হয়। কোন টাকা আয় হয়না। কিন্তু দলের কর্মসূচী পালনে তার অনেক খরচ। তাই সে ইপিজেডে কাজ নেয়। মহানগরের নেতাদের সাথে লিটন সম্পর্ক তৈরী করে। যা কাউন্সিলর মতিউর রহমান মেনে নিতে পারেনি। তাই লিটন ও শ্রমিকলীগ নেতাদের কিভাবে সাইজ করবে তা নীল নকশা আকতে থাকে। এ কাজে ব্যবহার করে তারই নাতিন জামাই কিশোরগ্যাং লিডার পানি আক্তারকে। এই পানি আক্তার মতিউর রহমান মতির নির্দেশে নাসিক ৬নং ওয়ার্ড এলাকায় বিশাল কিশোরগ্যাং তৈরী করেছে। চালিয়েছে একাধিক হামলা। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে হয়েছে একাধিক মামলা। পুলিশ সুপার জায়েদুল আলমের কাছে পানি আক্তার চিহ্নিত কিশোরগ্যাং হিসেবে পরিচিত পায়।যার ফলে সে পুলিশের নিকট চিহ্নিত কিশোরগ্যাং লিডার হয়ে যায়। ইন্টাররেট সার্চ করলেই ভেসে উঠে কিশোরগ্যাং লিডার পানি আক্তারের বিভিন্ন অপকর্মের নিউজ। কিশোরগ্যাং লিডার এই আক্তার ও তার বাহিনীর হামলায় আজ আমরা আহত হয়েছি।
আহত সেলিম মজুমদার জানায়. পানি আক্তার তার প্রাইভেট কারের ভিতর করে আদমজী ইপিজেটের ভিতরে লাঠি, রামদাসহ বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আসে। একটি সংরক্ষিত এলাকায় কিভাবে এভাবে অস্ত্র নিয়ে আসতে পারে তা আমাদের বোধগম্য নয়। বিষয়টি তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
আহতদের নারায়ণগঞ্জ খানপুর ৩’শ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে লিটনের বোন সাংবাদিকদের জানায়, পানি আক্তার তার লোকজন নিয়ে লিটনের তাতীলীগ অফিসে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করেছে। এ সময় পুরো এলাকায় আতংক বিরাজ করে।
আক্তারের ও মামুনের অফিস ভাংচুরের ব্যাপারে আহতরা সাংবাদিকদের জানান, আমরা কারো অফিস ভাংতে যাইনি। আমরা এমনিতেই আহত। চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ভর্তি। আমরা কিভাবে অফিস ভাংবো। এটা কিশোরগ্যাং লিডার পানি আক্তার ও দুদকের মামলা আসামী আমাদের কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতির সাজানো নাটক। আমাদের উপর হামলার ঘটনা ঢাকতে এবং আমাদের নামে থানায় মামলা করতেই এই ধরনের অফিস ভাংচুরের নাটক সাজিয়েছে। এর আগেও আপরানা মতিউর রহমান মতি ও পানি আক্তারের অফিসে আগুন দেয়া, নৌকায় আগুন দেয়া,শামীম ওসমানের ছবি ভাংচুর করার নাটক দেখেছেন।
সাবেক কাউন্সিলর সিরাজ মন্ডলকে দমাতে এমন নাটক সাজানো হয়েছিলো। এখন আমাদের বিরুদ্ধে এমন নাটক সাজানো হয়েছে। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবী করি।
এদিকে আদমজী ইপিজেডের ঠিকাদার হিরা উল্টো কথা সাংবাদিকদের জানিয়ে বলেন, ইপিজেড অভ্যন্তরে চার্মিন গার্মেন্টস কারখানায় নির্মান সামগ্রি দেয়ার কাজ পেয়েছি। কাজ প্রায় শেষের দিকে। লিটন ওরফে গুজা লিটন আমার কাজটি জোর করে নেয়ার চেষ্টা করে। তারই জের ধরে দুপুর আড়াইটার দিকে লিটন সেলিম মজুমদারের নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫ জন লোক ইপিজেডের ভিতরে চার্মিন গার্মেন্টসে গিয়ে আমার ম্যানেজাাকে টেনে হেঁচড়ে বেধরক মারধর করে। তাকে রক্ষা করতে গেলে ইব্রাহীম ও শামীমকেও মরধর করে তারা।
এ ব্যাপারে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এস আই জামিল জানান, সংঘর্ষের খবর পেয়ে দ্রæত ঘটনাস্থলে আসি। আমরা আসার আগেই হামলাকারীরা পালিয়ে গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মশিউর রহমান বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এঘটনায় কোন পক্ষ এখনো থানায় লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।