বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল ট্রাক স্ট্যান্ডটি। দীর্ঘদিন ধরে কোনো সংস্কার না করায় এটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। এর ফলে চালকরা এখানে ট্রাক পার্কিং করা কমিয়ে দিয়েছে।
রোববার (৭ আগস্ট) সকালে সরেজমিনে গিয়ে এমনই চিত্র লক্ষ্য করা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ট্রাক স্ট্যান্ডটির বিভিন্ন স্থানে বড় বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে এ সমস্যা আরো বড় আকার ধারণ করেছে। এর ফলে ট্রাক-পিকআপ চালকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সিলেট থেকে ট্রাক নিয়ে আসা চালক সোলায়মান মিয়া জানান, এই ট্রাক স্ট্যান্ডটির নাজুক অবস্থা হওয়ায় বাধ্য হয়ে মহাসড়কে ট্রাক পার্কিং করে রেখেছি। কারণ ভিতরে যে অবস্থা দেখলাম ওইখানে গাড়ি রাখা একদমই সম্ভব না।
বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ও পিকআপ মালিক সমিতির শিমরাইল শাখার সূত্রমতে জানা যায়, এই ট্রাক স্ট্যান্ডটি একসময় সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ইজারা দিয়েছিল। বর্তমানে সওজ এবং সিটি করপোরেশনের মধ্যে একটি মামলা চলমান রয়েছে। ফলে এটি দেখাশোনার কেউ না থাকায় তারা মালিক কর্তৃপক্ষ বর্তমানে এটার তদারকি করে আসছে। বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৫ শতাধিক ট্রাক-পিকআপ এই স্ট্যান্ডে রাখা হয়ে থাকে। এই মালিক সমিতি সংস্কার ও নিরাপত্তাকর্মীদের খরচ পরিচালনা করার জন্য প্রতি গাড়ি থেকে দিনে ৩০ টাকা করে উত্তোলন করে।
বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ও পিকআপ মালিক সমিতির শিমরাইল শাখার যুগ্ম সম্পাদক মোঃ মামুন হাওলাদার জানান, বর্তমানে পরিবহন খাতের অবস্থা খুব খারাপ। অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য খুব তাড়াতাড়ি এটির সংস্কার করার প্রয়োজন। দীর্ঘদিন এই জায়গাটি সংস্কার না করায় এটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। তাছাড়া কিছুদিন ধরে টানা বৃষ্টি হওয়ায় অবস্থা আরো খারাপ হয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, এই টার্মিনাল উন্নয়ন ফি বাবদ যে পরিমাণ টাকা উঠানো হয় তা দিয়ে ট্রাক স্ট্যান্ডটি সংস্কার করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। ট্রাক স্ট্যান্ডটির বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দের সৃষ্টি হওয়ায় গাড়িগুলো পার্কিং করতে আমাদের খুব সমস্যা হচ্ছে। ট্রাক স্ট্যান্ডের বেহাল দশার কারণে কিছু ট্রাক ড্রাইভার মহাসড়কে গাড়ি পার্কিং করছে। এর ফলে দুই ধরণের সমস্যা হচ্ছে। একটি হচ্ছে মহাসড়কে গাড়ি পার্কিং করার ফলে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে আরেকটি হচ্ছে আমরা মহাসড়কে পার্কিং করা গাড়িগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছি না।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ সাখাওয়াত শামীম বলেন, শিমরাইল ট্রাক স্ট্যান্ডটি সওজের নিজস্ব জায়গা। এটা বর্তমানে স্থানীয়রা দখল করে রেখেছে। এটির কারণে মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা খুব শীঘ্রই এই জায়গাটি দখলমুক্ত করবো। গতকাল সওজের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি দখল করে রাখা ট্রাক স্ট্যান্ডটি দখলমুক্ত করে এর অর্ধেক অংশ মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হবে এবং বাকি অংশতে উঁচু করে ড্রেন করে দেওয়া হবে। আমরা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই এই কাজ শুরু করবো।
জায়গাটি নিয়ে সওজ ও সিটি করপোরেশনের মধ্যে মামলা চলমান রয়েছে এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। এই সম্পূর্ণ জায়গাটি আমাদের। এটি সংস্কার কিংবা যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে আমরা নিবো। এটি এখন নূর হোসেনের একটি গ্রুপ দখল করে রেখেছে। ভবিষ্যতে এখানে যেনো কোনো ট্রাক-পিকআপ পার্কিং করতে না পারে আমরা সে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর উদ্দিন মিয়া জানান, এটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের জায়গা। এটিকে পূর্বে টার্মিনাল হিসেবে দেওয়া হয়। পূর্বে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এই জায়গাটি ইজারা দিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে এটি সওজের নিয়ন্ত্রণে। তাদের মধ্যে হয়তো কোনো ঝামেলা চলছে তাই এখনো এটির সংস্কার কাজ হচ্ছে না। এ বিষয়ে সওজ কর্তৃপক্ষ ও নাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিস্তারিত বলতে পারবেন।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোঃ শহীদুল ইসলাম জানান, আমি নতুন যোগদান করেছি। তাই এ বিষয়ে আমি বিস্তারিত জানি না।