নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে প্রায় ৩ লক্ষ ৬৮ হাজার জনগণের জন্য ১০ টি ইউনিয়নে ৩৪ টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এসব ক্লিনিকের মাধ্যমে একজন নাগরিক টিকাদান কর্মসূচি, পুষ্টি, মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, প্রজনন স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, স্বাস্থ্যশিক্ষা, পরামর্শসহ বিভিন্ন সেবা পেয়ে থাকে। অযত্ন ও সংস্কারের অভাবে ৩৪ টির মধ্যে ১৬ টি ক্লিনিক নানা সমস্যায় জর্জরিত।
ক্লিনিকগুলো হলো: সাদীপুর ইউনিয়নের ভারগাঁও সিসি, নানাখী সিসি, জামপুর ইউনিয়নের মুন্দিরপুর সিসি, বুরমদী সিসি, বস্তল সিসি, সনমান্দি ইউনিয়নের চরভুলুয়া সিসি, কাফাইয়াকান্দি সিসি, সনমান্দি সিসি, মোগরাপাড়া ইউনিয়নের কাজিরগাঁ সিসি, বৈদেরবাজার ইউনিয়নের হামছাদী সিসি, দামোদরদী সিসি, পিরোজপুর ইউনিয়নের তাতুয়াকান্দা সিসি, দুধঘাটা সিসি, পিরোজপুর সিসি, জৈনপুর সিসি, শম্ভুপুরা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর সিসি।
এসব ক্লিনিকে ঝুঁকি নিয়ে চলছে চিকিৎসা। বহু ক্লিনিকে নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবল। এছাড়া কিছু ক্লিনিকে ওষুধের সংকট রয়েছে। কোথাও কোথাও দেখা গেছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই। নিয়মিত পানির সরবরাহ নেই। কোথাও আবার শৌচাগার নষ্ট। সংস্কার না হওয়ায় এসব কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সেবাগ্রহীতাদের। ভবনধসসহ অধিকাংশ ভবনের দরজা-জানালা খুলে গেছে, ছাদে ফাটল ধরেছে, পলেস্তারা খসে পড়েছে। এই অবস্থায় রোগীদের সঠিকভাবে সেবা দিতে পারছেন না সিএইচসিপিরা। এর ফলে অত্যাধুনিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার সনমান্দি ইউনিয়নের কাফাইয়াকান্দা কমিউনিটি ক্লিনিকে নারী, শিশুসহ গড়ে প্রতিদিন ৪০-৫০ জন রোগী আসেন সেবা নিতে। কিন্তু বেহাল ভবনের কারণে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
সেবা নিতে আসা হালিমা আক্তার শেফালী নামে এক রোগী জানান, আমার এখান থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অনেক দূরে হওয়ায় অনেকটা ঝুকিঁ নিয়ে এখান থেকে সেবা নিতে বাধ্য হই। তবে সবসময় ওষুধ পাই না এখানে। এটা যদি আধুনিক করা হয় তাহলে আমাদের ভোগান্তির অবসান হবে।
এ বিষয়ে কাফাইয়াকান্দা কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) ওমর ফারুক বলেন, তিনি এ কমিউনিটি ক্লিনিকে ২০১১ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। র্দীঘদিন ধরেই তার ভবনের অবস্থা খুব খারাপ। সামান্য বৃষ্টিতে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। এর ফলে অনেক চিকিৎসা সামগ্রী ও আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের সোনারগাঁয়ে যে ৩৪ টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে তার মধ্যে আমার এই কমিউনিটি ক্লিনিক বেশি ঝুকিঁর মধ্যে রয়েছে। যেকোনো সময় এটি ধসে পড়ে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধ না পাওয়ায় ওষুধের অভাবে রোগীদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠাতে বাধ্য হই।
জামপুর ইউনিয়নের মুন্দিরপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) হালিমা খাতুন চম্পা বলেন, এই ক্লিনিকটির সামনের জায়গাটি নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে থাকে। ফলে এই ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা রোগীরা বেশি ভোগান্তির শিকার হন।
এদিকে আধভাঙা ভবনে চলছে পিরোজপুর ইউনিয়নের জৈনপুর ও দুধঘাটা কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম। একই অবস্থা সনমান্দি ইউনিয়নের চরভুলুয়া কমিউনিটি ক্লিনিকেরও। ক্লিনিকের ভবন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নেই পানি ও বিদ্যুৎ। টিউবওয়েল অকেজো থাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট চরমে। এমন দুর্ভোগের মধ্যে সঠিকভাবে সেবা দিতে পারছেন না স্বাস্থ্যকর্মীরা।
এছাড়া হামছাদী, দামোদরদী, বুরুসদী কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে নিরাপত্তাবেষ্টিত দেয়াল না থাকায় যেকোনো সময় চিকিৎসাসামগ্রী চুরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সনমান্দি কমিউনিটি ক্লিনিকে দীর্ঘদিন ধরে বৈদ্যুতিক পাখাগুলো নষ্ট, নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা।
এ বিষয়ে সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: সাবরিনা হক জানান, এ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের অধীনে। আমাদের ডাক্তাররা ক্লিনিকগুলো পরিচালনা করলেও রিপেয়ারের দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পালন করে থাকে। যেসব কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর রিপেয়ার করা দরকার তার একটি তালিকা আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে দিয়েছি। এছাড়া হেলথ ইঞ্জিনিয়ারের দায়িত্বে যারা রয়েছেন তারাও তালিকা চেয়েছেন। আমরা তাদেরকেও তালিকা দিয়েছি। আমরা আশা করছি এ বছরের মধ্যেই সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মশিউর রহমান জানান, সংস্কারের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।