নারায়ণগঞ্জের জেনারেল হাসপাতালে (ভিক্টোরিয়া) সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থেকেও যেন নেই। বরাদ্দকৃত দুটি অ্যাম্বুলেন্সের একটি যান্ত্রিক ত্রুটিতে বিকল হয়ে পড়েছে। অন্যটি দিয়ে করোনা ভাইরাসের নমুনার সংগ্রহসহ একাধিক কারণে পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছে না রোগীরা।
সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের অভাবে বাধ্য হয়ে রোগীরা প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সের শরণাপন্ন হচ্ছে। আর এতে করে রোগীদের অসহায়ত্বের সুযোগে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স চালকেরা দ্বিগুণ ভাড়া হাতিয়ে নিচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, বেসরকারী অ্যাম্বুলেন্সকে সুবিধা দিতে সরকারী অ্যাম্বুলেন্স মেরামতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।
ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের সূত্রমতে, হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসে দুটি অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ রয়েছে। এরমধ্যে একটি নষ্ট, অন্যটি অ্যাম্বুলেন্স সন্ধ্যা থেকে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত রোগী বহর করে। দুপুরে করোনার নমুনা সংগ্রহ করে অ্যাম্বুলেন্সটি।
হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনেই সরকারি ৩টি অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতালের গ্যারেজে তালাবদ্ধ। দুটো হাসপাতালের, অন্যটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য বরাদ্ধকৃত। এরমধ্যে দুটোই নষ্ট।
অপরটি দিনের এক বেলা রাতে রোগী বহন করে। তবে অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালের রোগীর স্বজনেরা অ্যাম্বুলেন্স খোঁজ করলেও সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভারের দেখা মিলে না।
এদিকে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের অভাব থাকলেও হাসপাতালের জরুরী বিভাগ সংলগ্ন প্রাঙ্গণে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সের স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। প্রয়োজনের সময় সরকারি অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে বাধ্য হয়ে রোগীর স্বজনেরা প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে। যেখানে ভাড়া গুণতে হয় দ্বিগুণ।
জানা যায়, অ্যাম্বুলেন্সের মতো একটি জরুরি পরিবহনসেবাকে ঘিরে হাসপাতালে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি চলছে বছরের পর বছর। এই স্ট্যান্ড মূলত নিয়ন্ত্রণ করেন সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের কিছু প্রভাবশালী কর্মচারী।
সরকারি নিয়মানুযায়ী, সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে প্রথম ১০ কিলোমিটারের ভাড়া ৩০০ টাকা। এরপর প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ২০ টাকা নির্ধারিত। এই হিসেব অনুযায়ী, জেনারেল হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া বিভিন্ন চার্জ সহ ৮৭০ টাকা।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের চালক এই দুরুত্বের ভাড়া ১ হাজার টাকার উপরে ধার্য করে। অন্যদিকে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স সরকারি চার্জের দ্বিগুণ ভাড়া নেয়।
হাসপাতাল প্রাঙ্গনের একাধিক প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স চালকের সাথে কথা বলে জানা যায়, একই দুরুত্বে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া সর্বনিন্ম ১ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।
বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকেরা রোগীর জরুরি কোনো পরিস্থিতি দেখলে জিম্মি করে বাড়তি ভাড়া আদায় করেন। একটি উদাহরণ দেওয়া যাক, গত বুধবার বন্দরের সোহাগ নামক এক ব্যক্তি তার মুমূর্ষ’ রোগীকে জেনারেল হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়। হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সের স্মরণাপন্ন হতে হন তিনি। অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া গুনতে হয় ২ হাজার টাকা।
কামাল বলেন, ভাইয়ের এক্সিডেন্ট (দুর্ঘটনা) হয়েছে, ডাক্তার এখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যেতে বলছে। কোন অ্যাম্বুলেন্স দুই হাজার টাকার কমে যাবে না। দরকষাকষির সময় নাই।
হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক মনির হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সেবার বিষয়ে বলেন, হাসপাতালের দুটো সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ছিল। একটা রোগী বহন করে অন্যটি করোনার নমুনা সংগ্রহ কাজে ব্যবহার হয়। একটা অ্যাম্বুলেন্স নষ্ট হয়ে গেছে।
এখন যেটা ভালো আছে ওইটা দিয়ে দুপুরে করোনার নমুনা সংগ্রহ করি । আর রাতে রোগীদের সেবা দেই। এছাড়া চালক আগে দুজন ছিল, এখন শুধু আমি চালাই। এ কারণে সার্বক্ষনিক সার্ভিস দিতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।
অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একজন কর্মচারী বলেন, দুপুরে করোনার নমুনা সংগ্রহ করে। এছাড়া সারা সকালে অ্যাম্বুলেন্স গ্যারেজে থাকে। মাসের বেশিরভাগ দিনে অ্যাম্বুলেন্স রাতের বেলাও গ্যারেজে পড়ে থাকে। সহজে চালক মনিরের খোঁজ পাওয়া যায় না।
জরুরি রোগীরা বাধ্য হয়ে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে। এমনও হয়, রোগীর স্বজনেরা মনিরের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে, তিনি প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সের নাম্বার দিয়ে দেন।
নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান এই বিষয়ে বলেন, ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স একটি নষ্ট। এছাড়া আমাদের একজন ড্রাইভার করোনায় মারা যাওয়ায় ড্রাইভার সংকট রয়েছে।
ড্রাইভারের পদে জনবল পেলে অ্যাম্বুলেন্স আনার ব্যবস্থা করা হবে। তবে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার মনির রাতে ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।