রূপগঞ্জে রাকিব হাসান (২২) নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা
হয়েছে। নিহত যুবকের স্বজন ও অনুসারীদের অভিযোগ, দেলোয়ার
হোসেন নামের এক শ্রমিক লীগ নেতা এ হত্যাকান্ডে সঙ্গ জড়িত।
নিহত রাকিব সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী ছিলেন।এদিকে এ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে লাশ নিয়ে মিছিল করেছেন নিহত ব্যক্তির স্বজন ও অনুসারীরা। পরে তাঁরা ক্ষুব্ধ হয়ে একটি বাড়ি ও পাঁচটি দোকান ঘরে আগুন দেন ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অন্তত পাঁচটি যানবাহন ভাঙচুর করেছেন। বুধবার রাত ১০টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত
গোলাকান্দাইল কাঠপট্টি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এরআগে বুধবার রাত ৯টায় উপজেলার গোলাকান্দাইল কাঠপট্টি এলাকায়
রাকিবকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। পরে তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য
কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক রাকিবকে মৃত
ঘোষণা করে।নিহত রাকিব হাসান ওই গোলাকান্দাইল কাঠপট্টি এলাকার হারুন
মিয়ার ছেলে ও মো. কাউসারের ছোট ভাই। রাকিব হাসান উপজেলা
ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক আতিকুর রহমানের অনুসারী ছিলেন।
অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন পরিবহন শ্রমিক
লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তিনিও একই এলাকার বাসিন্দা।
নিহত রাকিব এক সময় ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন বলে নিশ্চিত
করেছেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক আতিকুর রহমান বলেন,
বর্তমানে আমি যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ছাত্রলীগ করা অবস্থায়
রাকিব আমার অনুসারী কর্মী ছিলেন।
পুলিশ জানায়, রাকিবের ভাই কাউসার তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী ও
ডাকাত দলের সদস্য। স¤প্রতি ছিনতাই ও মাদক মামলায় রাকিবকে পুলিশ
গ্রেপ্তার করেছিল। মাদক ব্যবসা ও পরিবহন চাঁদাবাজিসহ এলাকায়
আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দেলোয়ারের সঙ্গে রাকিব ও তাঁর ভাই মো.
কাউসারের দ্ব›দ্ব চলছিল।
ওই বিরোধের জেরে গত মাসে দেলোয়ার হোসেনের লোকজন রাকিবের
বাড়িতে আগুন দিয়েছিলেন। পরে রাকিব বেশ কয়েকবার দেলোয়ারকে
অস্ত্রসহ ধাওয়া করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল। চলমান এই
দ্ব›েদ্বর জেরেই বুধবার রাতে রাকিবকে খুন করা হয়েছে বলে ধারণা করছে
পুলিশ।
তবে দেলোয়ার হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন,
আমি হত্যা করিনি। কারা করেছে, জানি না। গত শুক্রবার রাকিব আমারে
গুলি করার পর থেইকা আমি বাড়ির বাইরে। ওরা আমার বাড়িঘরে আগুন
দিছে।
পুলিশ ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল রাত
নয়টার দিকে গোলাকান্দাইল কাঠপট্টি এলাকায় একদল সন্ত্রাসী রাকিব
হাসানের ওপর হামলা চালান। এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে রাকিব হাসানকে
উপর্যুপরি কোপানো হয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে
স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।পরে উত্তেজিত হয়ে রাকিবের স্বজন ও অনুসারীরা লাশ নিয়ে মিছিল শুরুকরেন। পরে তাঁরা দেলোয়ার হোসেনের তিনতলা বাড়ি ও পাঁচটি দোকানঘরে আগুন দেন। এ সময় বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্ধকারে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নেভাতে এলে মিছিলকারীরা
তাঁদের আগুন নেভাতে বাধা দেন। পরে পুলিশ ও র্যাবের সদস্যদের সহায়তায়
ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করে। মিছিলকারীরা ঢাকা-
সিলেট মহাসড়কে পাঁচটি যানবাহন ভাঙচুর করে।
কাঞ্চন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, রাত একটার
মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া
যায়নি। অগ্নিকান্ডের সময় ওই বাড়িতে থাকা ১৪ নারী ও শিশু বাড়ির
ছাদে অবস্থান নিয়েছিলেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাঁদের উদ্ধার
করে নিরাপদে নিয়ে এসেছেন।
এেিদক রাত সোয়া ১২টায় ভুলতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ব্যারিষ্টার
আরিফুল হক ভুঁইয়া ও গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান
আলহাজ্ব কামরুল হাসান তুহিন ঘটনাস্থন পরিদর্শন করেছেন।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএফএম সায়েদ বলেন, এলাকায়
অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। লাশ উদ্ধার করা মর্গে প্রেরণ করা
হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে। সুষ্ঠু তদন্ত করে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার
করা হবে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে।
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (গ-সার্কেল) আবির হোসেন বলেন,
হত্যার ঘটনার পর থেকেই পুলিশ তৎপর রয়েছে। ওই এলাকার পরিস্থিতি
নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ ও র্যাব সতর্ক অবস্থানে আছে। রাকিবের লাশ
ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।