সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল দারুস সুন্নাহ নেছারিয়া সালেহিয়া আলিম মাদ্রাসায় অনিয়মই নিয়মে পরিণত সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল দারুস সুন্নাহ নেছারিয়া সালেহিয়া আলিম মাদ্রাসায় সকল অনিয়মই নিয়মে পরিণত হয়েছে।
মাদ্রাসাটিতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা উপেজ্ঞা, শিক্ষকদের স্বেচ্ছাচারিতা, ঝুঁকিপূর্ণ অবকাঠামো, মাদ্রাসাকে বানিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত ও নানা অসংগতি রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন থেকে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা,অনৈতিকতার মধ্যে পরিচালিত হওয়ায় অনিয়মগুলো যেনো স্বাভাবিক নিয়মেই পরিণত।শিক্ষা মন্ত্রনালয়, মাদ্রাসা অধিদপ্তর, জেলা শিক্ষা অফিস ও উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে মাঝে মাঝে বিভিন্ন কর্মকর্তারা মাদ্রাসাটি পরিদর্শনে আসলেও রহস্যজনক কারনে এসব অনিয়ম
বন্ধ করতে কোনো ববস্থা গ্রহন করেননি। এ যেনো দেখার কেউ নেই।
এনিয়ে অভিভাবক মন্ডলী, স্থানীয় সমাজ ও বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ বিরাজমান রয়েছে। নাম না প্রকাশের শর্তে তাদের দাবি মাদ্রাসা ভবন সংস্কারসহ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদেরও সংস্কার করতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে মাদ্রাসাটির এ দুরাবস্থার অবসানসহ সরকারি টাকার অপচয় রোধ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত
হস্তক্ষেপ কামনাও করেন তারা।
এদিকে দাখিল উপযোগী অবকাঠামো না থাকা স্বত্বেও মাদ্রারাসাটির রয়েছে আলিম পর্যায়ে পাঠদানের স্বীকৃতি। আলিম ক্লাসগুলিতে শিক্ষার্থী উপস্থিতি মাত্র দুই-তিনজন।
এবতেদিয়া, দাখিল ও আলিম শাখাসহ প্রতিদিন গড়ে ছাত্র উপস্থিতির হার মাত্র ২৫০ থেকে ৩শ’। একটি সূত্র জানায়, আশেপাশের বিভিন্ন কওমি মাদ্রাসার অধিকাংশ ছাত্রই যারা শিমরাইল মাদ্রাসাকে তাদের সার্টিফিকেট বানানোর কারখানায় পরিণত করেছে। মাদ্রাসাটিতে ছাত্র না থাকলেও রয়েছে লিল্লাহ বোর্ডিং যা অধ্যক্ষসহ বিভিন্ন প্রভাষকরা তাদের বিশ্রামাগার হিসেবে ব্যবহার করছেন। আলিম শ্রেণিতে ছাত্র না থাকাতেই লিল্লাহ বোর্ডিংটি প্রভাষকদের ঘুমঘরে পরিণত হয়েছে। অনেক সময় ক্লাস চলাকালিন সময়ে শিক্ষকদের ওই বোডিং এ অবস্থান করতে দেখা হয়।
শিক্ষকদের এ সব অনিয়মগুলো নিয়মে পরিণত হওয়ায় মাদরাসার শিক্ষার
মান দিন দিন নেমে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আলিম পর্যায়ে পাঠদানের স্বীকৃতি থাকলেও এলাকাবাসীর প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে মাদ্রারাসা কর্তৃপক্ষ।
এদিকে দিনে দিনে মাদ্রাসার প্রশাসনিক কার্যক্রমও ঝিমিয়ে পড়েছে। শিক্ষকেরা তাদের ইচ্ছামতো কলেজে আসছেন। মনে চাইলে ক্লাস নিচ্ছেন, আবার চলে যাচ্ছে।
মাদ্রাসারএকাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, শিক্ষকরা নিয়মিত না আসায় এবং নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা না নেয়ায় লেখাপড়ার মান ক্ষতু হচ্ছে। প্রতিদিন সাড়ে ১২টার পর বেশির ভাগ শিক্ষককে আর পাওয়া যায় না।
সরিজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলার শেষ সীমানায় ডেমরা থানা সংলগ্ন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় অবস্থিত শিমরাইল দারুস্ধসঢ়; সুন্নাহ নেছারিয়া সালেহিয়া আলিম মাদ্রাসা। তবে মাদ্রাসাটি শিমরাইল মাদ্রাসানামেই পরিচিত।
মাদ্রাসাটি মাত্র চারকাঠা জায়গার উপরে একটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে অবস্থিত। তবে ভবনটি ঝটুকিপূর্ণ হলেও বাহির থেকে বোঝার কোন উপায় নেই। মাদ্রারাসাটি নানা অসংগতিতে পরিপূর্ণ। এখানে সরকারি নিয়ম-নীতির কোনই বালাই নেই।
অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারের আখড়ায় পরিণত। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাকে উপেজ্ঞা করে ক্লাস শুরু হয় সকাল নয়টায়, আবার ছুটি হয় দুপুর একটায়। অধিকাংশ শিক্ষক ইমামতি পেশায় যুক্ত বিধায় দুপুরের আগেই ছুটি দিয়ে দেয়া হয়। হজ্ব ব্যবসাসহ নানাবিধ ব্যবসায় জড়িত অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন কদাচিৎই মাদ্রাসায় থাকেন। মাদ্রাসা
অফিসটিও তার হজ্ব অফিসে পরিণত হয়েছে। জান্নাত টুরস্ধসঢ়; এন্ড ট্রাভেলস্ধসঢ়; লিমিটেড নামে হজ্ব কোম্পানির চেয়াম্যান তিনি, ম্যানেজিং ডিরেকটর তারই
মাদ্রাসার আরবি প্রভাষক নজরুল ইসলাম। প্রায় প্রতি বছরই নিয়ম
ভেঙ্গে এরা দুজন হজ্বে যান।
নজরুল ইসলামের আবার রয়েছে উম্মুল কোরা নামে আরেকটি
মাদ্রাসা। মাদ্রারাসার ইংরেজি প্রভাষক ফররুক আহম্মেদ খসরু
যখন খুশি তখন আসেন। আইসিটি প্রভাষক মাহমুদা আক্তার
ঢাকায় থাকেন। ইচ্ছে হয় আসেন, না হলে না। এভাবে মাসের পর
মাস বেতন নিচ্ছেন তারা। শিক্ষা মন্ত্রনালয়, মাদ্রাসা অধিদপ্তর, জেলা শিক্ষা অফিস ও উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে মাঝে মাঝেই বিভিন্ন কর্মকর্তারা মাদ্রাসাটি পরিদর্শনে আসেন। এ সকল বিভিন্ন অসংগতি দেখেও তারা বিভিন্নভাবে ম্যানেজ হয়ে যান। বলা হয়ে থাকে এটি অধ্যক্ষ সাহেবের মোজেজা।কিন্তু এই মোজেজা দিয়ে তিনি এলাকাবাসীকে ম্যানেজ করতে পারেননি। মাদ্রাসাটির পড়ালেখার মান, গভর্ণিং বডি গঠনসহ বিভিন্ন কারণে এলাকাবাসী তাকেই মাদ্রাসাটির অধপতনের
কারণ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
অভিভাবক ও স্থানীয়রা অবিলম্বে মাদ্রাসাটির এ দুরাবস্থার অবসানসহ সরকারি টাকার অপচয় রোধ করতে কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ম্রাদাসা অধিদপ্তরের পরিদর্শক বাদশা মিয়ার মুঠো ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এছাড়াও একই সময়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার আব্দুল মালেকের মুঠো ফোনে ফোন দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিনের সাথে মুঠো ফোনে কথা বললে তিনি এসব অভিযোগ সত্য নয় বলে জানিয়ে বলেন, মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম যথাযথ ভাবে চলছে। আমার জানামতে তিনজন শিক্ষক ইমামতি পেশার সাথে জড়িত। তারা ক্লাস না থাকলে যান। নামাজের পর ক্লাস থাকলে আবার চলে আসেন।
মাদ্রাসায় হজ্ব ব্যবসার কার্যক্রমের বিষয়টি তিনি এড়িয়ে গিয়ে মাদ্রাসা ভবনটি বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ নয় বলে জানান। কারণ জেলা শিক্ষা অফিসের প্রকৌশলির নির্দেশনা মোতাবেক নতুন করে পিলার স্থাপনা করে সংস্কার কাজ করা হয়েছে।