দুই সন্তানের জননী খোদেজা বেগম (৩৭)। তার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্য জায়গায় চলে যাওয়াতে জীবনের তাগিদে চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ থেকে এসেছেন সিদ্ধিরগঞ্জে। গ্রামের এক চাচাতো বনোনের সহযোগিতায় উঠেছেন রাজ্জাক মিয়ার এক রুমের টিন সেড বাসাতে।
সেই বোনের সুবাদে একটি কারখানায় কাজ নিয়েছেন তিনি। প্রতিদিন দুই সন্তানকে বাসায় রেখে কাজে চলে যান তিনি, বাসায় ফিরতে প্রায় অনেক রাত হয়ে যায়। তাই সন্তান্দের জন্য সকালে খাবার রান্না করে কাজে যেতেন। কিন্তু এই সংকটের পর থেকে এখন আর সকাল হলে তার চুলায় আগুন জ্বলছে না। তার এই টাটানির সংসারে সে তার বাচ্চাদেরকে হোটেল থেকে খাবার কিনেও খাও্য়াতে পারছেন না। তাই বাধ্য হয়ে তাকে লাকড়ি চুলায় রান্না করে কাজে যেতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, রান্না করার লেইজ্ঞা লাকড়ি লাগে অনেক, এখন শহরে এত লাকরি কই পামু ভাই। আমি অফিসে গেলে আমার পোলাপান গিলি (তার সন্তান) এইখন ওইখান থিক্কা বাশ কাট টোকায় আনে আর আমি কারখানা থিকা আহার সময় রাস্তায় রাস্তায় বাশ কাট যা পাই তা নিয়া আহি এডি দিয়া কোনো মতে কয়ডা রাইন্দা পোলাপান ডিরে খাওয়াই। আর মাঝে মাঝে গ্যাস আহে তখন আর লাকরি লাগে না।
মঙ্গলবার (০৪ অক্টোবর) সকালে সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদি নতুন মহল্লায় সহ বিভিন্ন এলাকায় এমন চিত্র দেখা যায়। এদিকে কিছু দিন আগে সারেদেশের সাথে অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে অতিষ্ট সিদ্ধিরগঞ্জ বাসিও।
লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি এবার ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে গ্যাস নিয়ে। এই গ্যাস সংকট শুধু সিদ্ধিরগঞ্জেই নয় চলছে নারায়ণগঞ্জ শহর জুড়ে।
এই গ্যাস সংকটের কারনে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের কেউ কেউ বাড়তি খরচ দিয়ে বিকল্প হিসেবে ইলেক্ট্রিক চুলা অথবা এল পি গ্যাস ব্যবহার করলেও নিম্ন আয়ের মানুষদের ভরসা এখন শুধুই লাকরি চুলায়।
বর্তমানে আদমজী ইপিজেডের জন্য বাংলাদেশর অন্যতম রপ্তানিকারক বাণিজ্য এলাকায় পরিণত হয় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ । এ ইপিজেড ছাড়াও সিদ্ধিরগঞ্জে রয়েছে আরো শত শত ছোট বড় কারখানা । আদমজী ইপিজেড সহ এসকল কারখানা ও ফ্যাক্টরিতে কাজ করে লাখ লাখ শ্রমিক যাদের বেশিরভাগ নিম্ম আয়ের।
এমনিতে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের জীবন চালাতেই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে তার উপর এই গ্যাস সংকটে তাদেরকে আরো বিপদে ফেলে দিচ্ছে। রান্না করার জন্য সময় মত গ্যাস না থাকায় তাদেরকে বাড়তি পরিশ্রম করে জোগাড় করতে হচ্ছে লাকরি ।
আদমজী ইপিজেডের একটি কারখানায় শ্রমিক আকলিমা জানান, সকালে অফিস জাওয়ার আগে পোলাপানের জন্য রান্না করতে গেলে চুলায় গ্যাস থাকে না তখন লাকড়ি চুলায় রান্না করে অফিস যেতে হয়।
এবিষয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী শাকির আহমেদ জানান, শুধু নারায়ণগঞ্জ না পুরো বাংলাদেশেরই একই অবস্থা। জ্বালানী সংকটের কারণে মূলত এই সমস্যাটি হচ্ছে। এদেশে এখন স্বাভাবিকভাবে জ্বালানী সংকটের কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন ঠিক রাখার জন্য তাদেরকে বেশি গ্যাস দিতে হচ্ছে। এর ফলে এই চাপটা চলে এসেছে গ্যাসের গ্রাহকদের উপর। খুব শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।