আরিফুর রহমান। কোন মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করা ডাক্তার নন। তার নেই কোন ডিগ্রীর সার্টিফিকেট। তদুপরি সিজার অপারেশন কাজে ব্যস্ত ছিলেন তিনি।
এ সময় খবর পান ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালাতে তাদের এই হাসপাতালেই আসছেন। খবর শুনে তড়িঘড়ি করে অপারেশন থিয়েটারে (ওটিতে) নবজাতক ও তার মাকে অসহায় ও বিপজ্জনক অবস্থায় ফেলে হাসপাতালের প্রধান ফটক তালা মেরে পালিয়ে যান। বেশ কয়েকঘন্টা পর ভ্রাম্যমান আদালত ঐ হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে নবজাতক ও তার মাকে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় উদ্ধার করে মাতুয়াইল শিশু-মাতৃস্বাস্থ্য হাসপাতালে ভর্তি করান।
লোমহর্ষক ঘটনাটি ঘটেছিলো চলতি সালের ২৯ মে সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল ডাচ-বাংলা ব্যাংক এলাকার হাজী রজ্জব আলী সুপার মার্কেটের বেসরকারী পদ্মা জেনারেল হাসপাতালে। ভ্রাম্যমান আদালত ঐ সময় হাসপাতাল সীলগালা করে দেন হাসপাতালটি। সেই থেকে হাসপাতালটি বন্ধই ছিলো। কিন্তু সম্প্রতি হাসপাতালটি অবৈধ উপায় সিভিল সার্জনকে না জানিয়ে সীলগালার তালাটি ভেঙ্গে আবারও চালু করেছে মার্কেটের এক মালিকের সহযোগীতায়।
এলাকাবাসী জানায়, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের শুরুতে সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল ডাচ বাংলা ব্যাংকের পাশে রজ্জব আলী সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় গড়ে তোলা হয় পদ্মা জেনারেল হাসপাতাল। কদমতলী জেনারেল হাসপাতাল নামে তাদের আরেকটি হাসপাতাল রয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলীপুল এলাকায়। মার্কেটের মালিক আহমদ আলীসহ এ হাসপাতালের অংশিদার (পার্টনার) হন কথিত ডাক্তার আরিফুর রহমান, এসএম নাসির হায়দার ও আরো ৫ জন।
ভূক্তভোগী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে ভুল চিকাৎসা, চিকিৎসার নাম অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়ম করে আসছিলো। যদ্ধরুণ ইতিপূর্বে র্যাব-১১ সদস্যরা অভিযান চালিয়ে হাসপাতালটি বন্ধ করে দেয়। পবর্র্তীতে আবারও হাসপাতালটি চালু করে কথিত ডাক্তার আরিফসহ তার সহযোগীরা। কোন মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করা ডাক্তার না হয়েও এ হাসাপাতালেই গর্ভবতীদের সিজার করাতেন হাসপাতালের অন্যতম অংশীদার আরিফুর রহমান। সর্বশেষ সিজার করতে গিয়ে ঘটে বিপত্তি। সিজার করানোর সময় তিনি খবর পান ভ্রাম্যমান আদালত তাদের হাসপাতালে অভিযান চালাতে আসছেন। আর সেই খবরে তিনি গর্ভবতী মা ও নবজাতককে বিপদজনক অবস্থায় অপারেশন থিয়েটারে রেখেই হাসাপাতালের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে পালিয়ে যান। পরবর্তীতে ভ্রাম্যমান আদালত ঐ হাসাপালে অভিযান চালিয়ে তালাবদ্ধ হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের মা ও নবজাতককে দেখে হতভম্ব হয়ে পড়েন। পরে তারা শিশুর মা ও নবজাতককে উদ্ধার করে ঢাকার মাতুয়াইলের শিশু-মাতৃস্বাস্থ্য হাসপাতালে ভর্তি করান। একই সময় ভ্রাম্যমান আদালত হাসপাতালটি সীলগালা করে দেন। লোমহর্ষক আলোচিত ঐ ঘটনা তখন বিভিন্ন ইলেক্টনিক মিডিয়াসহ গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারিত হলে হাসপাতালের প্রতি স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। হাসপাতালটি সীলগালা করে দেয়ার পর গত কয়েক মাস হাসপাতালটি বন্ধ ছিলো। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে সীলগালা তালা ভেঙ্গে আবারও চালু করে হাসপাতালের সেই সমালোচিত কথিত ডাক্তার আরিফুর রহমান।
খবর নিয়ে জানা যায়, পূর্বের ন্যায় তিনি আবারও সিজার অপারেশন করছেন। পাশাপাশি তিনি তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানার কালিশুরি এলাকায় নিউ পপুলার ক্লিনিক এ্যান্ড ডায়াগনস্ট্রিক সেন্টার নামে আরেকটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করে চিকিৎসা সেবার নামে অপচিকিৎসা দিয়ে আসছেন বলে জানা গেছে। ফলে এলাকাবাসী আশঙ্কা করছেন, না জেনে কোন রুগী চিকিৎসা করাতে গিয়ে তার মাধ্যমে আবারও অপচিকিৎসায় রোগীরা বিপদগ্রস্থ হতে পারেন। এদিকে পদ্মা জেনারেল হাসাপতালের একটি সূত্র জানায়, তিনি কোন মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করা ডাক্তার নন। তিনি ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফ্যাকাল্টি (ডিএমএফ)-এ পড়ালেখা করেছেন। তবে এখনও তিনি সনদ পাননি। সরেজমিন পদ্মা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে অন্যান্য সাধারণ ক্লিনিকের ন্যায় কার্য্যক্রম চলছে। কথিত ডাঃ আরিফের সাথে কথা বলতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নার্স জানায়, স্যারতো আজকে পটুয়াখালীর তার নিজস্ব হাসপাতালে আছেন। তবে ২-৩ দিন পর আসবেন। সীলগালা করে দেয়া হাসপাতাল তালা ভেঙ্গে কিভাবে চালু করলেন জানতে চাইলে হাসপাতালটির অন্যতম অংশীদার (পার্টনার) ও এমডি এসএম নাসির হায়দার জানায়, পদ্মা জেনারেল হাসপাতালটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার জন্য খোলা হয়েছে। এটি এখনো চালু করা হয়নি। লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা হয়েছে। লাইসেন্সের পেয়ে আবারও হাসপাতালটি চালু করা হবে। হাসপাতালটি খোলা রাখা হয়েছে স্যাররা হাসপাতালটি পরিদর্শনে আসবেন তাই। তিনিও স্বীকার করেন আরিফুর রহমান ডাক্তার নন। তিনি সহযোগী ছিলেন।