বরিশালে গৃহবধু ও সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সদস্য মোর্শেদা আক্তার সাথীর হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি ও ঘরে- বাহিরে নারী নির্যাতন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখা।
শুক্রবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন
অনুষ্ঠিত হয়।
সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি মিমি পূজা দাসের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শরীফ, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আক্তার, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম নারায়ণগঞ্জ জেলার দপ্তর সম্পাদক খায়রুনুুনাহার, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি মুন্নি সরদার ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, গৃহবধু মোর্শেদা আক্তার সাথীকে দীর্ঘ দিন ধরে তার স্বামীসহ শশুর বাড়ির লোকজন নির্যাতন চালায়। এ বিষয়ে তিনি নারী নির্যাতন আইনে একটি মামলা করেন। এই মামলা করায় ক্ষুব্ধ হয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর মোর্শেদা আক্তার সাথীকে তার ননদসহ ৩ জন মিলে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এই নৃশংস অগ্নিকান্ডে তার মুখমন্ডল, বুক, পেট, শ^াসনালীসহ শরীরের ৩০ শতাংশ পুড়ে যায়। পরে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে তার অবস্থার অবনতি দেখে ডাক্তাররা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার শেখ হানিসা বার্ন ইনস্টিটিউশনে পাঠানো হয়। সেখানে ৭ দিন লাইফ সার্পোটে থেকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সকাল ১০ টায় মৃত্যুবরণ করেন। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, মোর্শেদা আক্তার অত্যন্ত দরিদ্র ও পারিবারিকনির্যাতনের শিকার হলেও তিনি বিভিন্ন নারীনির্যাতন বিরোধী
কর্মসূচিতে অংশ নিতেন। আদালতে পারিবারিক নির্যাতনের মামলা করায় তার এই নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার হওয়ার ঘটনা আইনের শাসনের জন্য অত্যন্ত মর্মান্তিক ও ন্যাক্কারজনক। ২৩ সেপ্টেম্বর এই ঘটনা ঘটলেও এখনো পর্যন্ত সকল আসামী গ্রেফতার
হয়নি। অথচ স্বাধীনতার ৫১ বছর পরে এসেও সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী, সেই নারী সমাজের আজকে কী ভয়াবহ অবস্থা? নারীরা আজ ঘরে- বাইরে, পাহাড়ে- সমতলে, পথে – গণ পরিবহনে, কর্মক্ষেত্র- শিক্ষাক্ষেত্রে সব জায়গায় নির্যাতিত।
নারীর প্রতি সহিংসতা দিন দিন আরো বেড়েই চলেছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুসারে ২০২১ সালে সারাদেশে ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট ১ হাজার ৩২১ জন নারী। প্রতিনিয়ত নারীর প্রতি বিভৎসতা ও বর্বরতা বেড়েই চলেছে। ধর্ষণের ক্ষেত্রে নারীর বয়স কোন বিষয় নয়।
৬ বছরের শিশু থেকে ৬০ বছরের বৃদ্ধা কেউই রেহাই পাচ্ছে না এই বিভৎসতা থেকে। কঠোর আইনের বিধান থাকা সত্ত্বেও ধর্ষকের কোন উল্লেখযোগ্য শাস্তি হয়নি। গণপরিবহনে নারী নির্যাতন ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে । খুনির বিচার না হওয়ায় দিন দিন এই নির্যাতন বেড়েই যাচ্ছে। নারী-শিশু-নির্যাতন-ধর্ষণ-হত্যা এসব অপরাধের বিচার না হওয়ার ক্ষেত্রে একটি বড় কারণ সরকার প্রশাসনের সাথে ঘনিষ্ঠতা ও
ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি। নারী শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ সামাজিক প্রতিরোধ। সামাজিক প্রতিরোধ আন্দোলনই সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচার ত্বরান্বিত করতে সরকারকে বাধ্য করতে পারে এবং একই সাথে অপরাধীও কোণঠাসা হয়ে পড়বে। নেতৃবৃন্দরা এই নৃশংস হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা জানান এবং অবিলমম্বে এই ঘটনায় জড়িত ব্যাক্তিদের গ্রেফতার ও দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জোর দাবি জানান।