আজ কোজাগরী পূর্ণিমা লক্ষীপুজো। শ্রী শ্রী লক্ষ্মী ধন সম্পদের দেবী। শ্রী শব্দের অর্থ সুন্দর। লক্ষ্মী হচ্ছে সেই সুন্দরের সুন্দরতম দেবী। হিন্দু ধর্মাবলম্বী গৃহবধূরা নিত্য লক্ষ্মীপুজো করে থাকেন। লক্ষ্মীপুজো নিত্য পুজোর অংশ।
ধন সম্পদ ও কল্যাণ কামনায় গৃহবধূরা নিত্য ফুল-ফল বেলপত্র ধুপ দ্বিপ মিষ্টি নৈবেদ্য
সাজিয়ে পুজো করে থাকেন। পুজোঅন্তে দেবীর পাঁচালী পড়া ও প্রসাদ বিতরণের
মধ্য দিয়ে গৃহিনীরা মঙ্গলময়ীর শ্রী চরণে মঙ্গল কামনা করেন।
আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের পূর্ণিমা তিথিতে ঘটা করে লক্ষ্মী দেবীর পুজো করা হয়।
আশ্বিন মাসের এই পূর্ণিমাকে কেউ কেউ লক্ষ্মী পূর্ণিমা বলেন। শাস্ত্রকাররা বলেন
কোজাগরী পূর্ণিমা। গৃহবধূরা সারাদিন উপবাস থেকে নানা ধরনের আল্পনা
এঁকে ঘটে পটে বা মুর্তি দিয়ে কেউ কেউ মাটির পাত্রে ধানের ছড়া, হলুদ, কচু
ও কলা গাছের ভাড় সাজিয়ে লক্ষ্মীর পুজো করেন।
লক্ষ্মী স্বয়ং নারায়ণের স্ত্রী। লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা। সুন্দরী রূপবতী ঐশ্বর্যময়ী দেবীর বাহন তাও আবার পেঁচা। যাই হোক পেঁচা নিয়ে পরে কথা বলা যাবে। লক্ষ্মী পুজোয় ঘন্টা বাজানো নিষেধ। শ্রী লক্ষ্মী শব্দ পছন্দ করেন না। যা হোক স্বয়ং বিষ্ণু নারায়ণের অংশ থেকে শ্রী লক্ষ্মীর সৃষ্টি। লক্ষ্মী কল্যাণীয়া তিনি বর দান করেন, ওঁ নমস্তে সর্বভূতানাং বরদামি হরিপ্রিয়ে। যা গতিস্তং প্রপন্ন নাং সা মে ভূয়াত্ত্বদর্চনাৎ। হে দেবী তুমি সকলকে বর দিয়ে থাকো। আমি তোমাকে স্মরণ নিলাম আমাকে মা তুমি বর দাও।
শ্রী শ্রী লক্ষ্মীর বর সবার ভাগ্যে জোটে না। শ্রী শ্রী লক্ষ্মীর বহু ঘটনা রটনা শাস্ত্রীয়
উপাখ্যান রয়েছে। স্বর্গের রাজা ইন্দ্র ঐরাবত (হাতি) চড়ে যাচ্ছেন। পথিমধ্যে
দুর্বাসা মুনির সাথে ইন্দ্রের দেখা। রাজাকে রাজ সম্মান দিলেন মুনিবর তিনি
তার গলার পারিজাতের মালা ইন্দ্রকে উপহার দিলেন। পারিজাত স্বর্গীয় ফুল। সেই
প্রসাদি মালার প্রতি ইন্দ্র তেমন গুরুত্ব দিলেন না। মালা রাখলেন হাতির মাথায়।
পারিজাতের সুগন্ধে হাতি মাতাল হয়ে তার শুর দিয়ে মালাটি মাটিতে ফেলে দিল।
ফেরার পথে মহা মুনি দুর্বাসা তার দেয়া মালাটি মাটিতে ফেলা অবস্থায় দেখে,
স্বর্গের রাজা ইন্দ্রকে অভিশাপ করলেন, হে ইন্দ্র তুমি লক্ষ্মীভ্রষ্ট হও। ইন্দ্র হলেন লক্ষ্মীভ্রষ্ট। লক্ষ্মী
সমুদ্রের অতলে মহা পাতালে অবস্থান নিলেন। লক্ষ্মীভ্রষ্ট ইন্দ্রের রাজ্যের শ্রী বিনষ্ট হতে
লাগলো। অসুররা দখল করে নিল স্বর্গ রাজ্য। দেবতারা হলো লাঞ্চিত অপমানিত। অবশেষে সাগর মন্থন করে লক্ষ্মীকে উদ্ধার করা হয়। শ্রী রাম অবতারে লক্ষ্মী (সীতা) হারা হয়ে শ্রী রাম মহা কষ্টের সম্মুখীন হন। এ গেল রামায়নের কথা।
আবার মহাভারতে শ্রী বৎস চিন্তার উপাখ্যানে লক্ষ্মীর কৃপার কথা উল্লেখ রয়েছে।
ধনকুব জগৎশেটের মায়ের গঙ্গা স্নানের ঘটনার সাথে শ্রী শ্রী লক্ষ্মী দেবীর
অবস্থানের কিংবদন্তী রয়েছে। সুন্দর সুশ্রী ঐশ্বর্যময়ী লক্ষ্মী দেবীর বাহন পেঁচা।
মুলতঃ মা লক্ষ্মীর কৃপালাভ করেছেন যারা তাদের সুতীক্ষè দৃষ্টি এবং পেঁচার স্বভাব
লক্ষণীয়। পেঁচার স্বভাব না হলে লক্ষ্মীর ভার বহন করা যায় না। লক্ষ্মীকে ধারণ করা অনেক কষ্ট।
মানুষ স্বভাবতই মানুষের প্রতি ন¤্র বিনয়ী এবং দয়াশীল। অপরদিকে বেহিসেবী
ফুর্তিবাজ। আর সেই সব ফুর্তিবাজ বেহিসেবী মানুষের জীবনে দুঃখ এসে
যায়। আর সেই দুঃখের আগুনে পুড়ে যায় অনেকেই। আজ মানুষ লক্ষ্মীর সাধনা করছে।
কিন্তু লক্ষ্মীর সাথে জ্ঞানের মিশ্রন প্রয়োজন তবেই ধন জ্ঞান মানুষের কল্যাণে ব্যয়
হবে। নারায়ণগঞ্জ জেলার কাঞ্চনে প্রতিবছর দেশীয় পণ্যের সমারোহ লক্ষ্য করা যায়।
কাঞ্চনের প্রতিমা প্রদর্শনীর মেলা মুলতঃ হিন্দু মুসলমানের মহামিলন মেলায় রূপ
নেয়। আজ কোজাগরী পূর্ণিমার পুণ্য তিথিতে গৃহ বধূদের কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে
প্রার্থনা জানাই ওঁ বিশ্ব রূপস্য ভার্ষাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে। সর্বতঃ পাহি মাং
দেবী মহালক্ষ্মী নমহস্তুতে।