নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার বরপা এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা আ. হান্নানের হাত থেকে জমি ও বাড়ি রক্ষার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে দীর্ঘদিন থেকে অসহায় মানবেতর জীবন যাপন করেছে একটি পরিবার।

এক পর্যায়ে শনিবার (২৯ অক্টোবর) সকালে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ওই পরিবারের ৩ জন মা, মেয়ে ও ছেলে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। তারা হলেন- নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানার বরপা এলাকার শিরিন আক্তার (৩৫), তার মেয়ে শামীমা আক্তার (১৬) ও ছেলে মো. জহির খান (১০)।

এ সময় উপস্থিত জনতা বাধা দিলে তারা গায়ে আগুন লাগাতে পারেনি। কিন্ত এরআগে ওই তিনজন ঘুমের ঔষধ ও কীটনাশক পান করেন। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তিনজনের পাকস্থলী ওয়াশ করেন। পরে তাদের নতুন ভবনের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।

আত্মহত্যার চেষ্টা করা শিরিন খান বলেন, এর আগেও তিনি কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। ৮ বছর আগে সোনারগাঁও থানার বরপা এলাকায় জমি কিনে বাড়ি করেছি এবং সেখানে বসবাস করছি। কিন্তুস্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হান্নান দীর্ঘদিন ধরে আমাকে বাড়ি ছাড়তে চাপ প্রয়োগ করে আসছেন। শুধু তাই নয়, হান্নান আমার নামে মামলাও করেছেন এবং হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। গত ২ মাস ধরে আমাকে বাড়ি যেতে দিচ্ছেন না। জমির দলিলপত্র সব দিয়ে দিতে বলছে।
তিনি আরও বলেন, আমার স্বামী অসুস্থ। তিনি এসব যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। কোথায় আছেন তা আমি জানি না। আমি স্থানীয় লোকজন ও প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে ব্যর্থ হয়েছি। পুলিশকে জানালে তারা সহযোগিতা করছে। কিন্তু তাদের সঙ্গে পেরে উঠছে না।

তিনি বলেন, বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে ঘুরে কোনো উপায় না পেয়ে এই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছি। আমার আর কোনো উপায় নেই। আমার মেয়েটার ব্রেনে সমস্যা হয়ে গেছে। শাহবাগ থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুল্লাহ জানান,
তাদের তিনজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের তিনজনকেই ওয়াশ করা হয়েছে। তারা এখন বিপদমুক্ত।

সোনারগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহাবুব আলম সুমন জানান, আমি কিছুদিন আগে এ থানায় যোগদান করেছি। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি বরপা এলাকাটি তালতলা ফাঁড়ি (তদন্ত কেন্দ্র) এর আওতাধীন। ওই নারী তালতলা ফাঁড়িতে একটি অভিযোগ দিয়েছেন।

ওই ফাঁড়িতে কর্মরত এসআই ইলিয়াস অভিযোগ পেয়ে তদন্ত গিয়ে জানতে পারেন এ জমি নিয়ে একটি দেওয়ানি মামলা চলছে। পরে তিনি বিষয়টি নিয়ে আদালতের শরনাপন্ন হতে বলেন।

তিনি আরো বলেন, বরপা এলাকাটি সোনারগাঁয়ের শেষ সীমনা রূপগঞ্জের পাশাপাশি এলাকা। আর ওই আওয়ামী লীগ নেতা আ. হান্নান রূপগঞ্জ থানা এলাকার বাসিন্দা। বিষয়টি খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।