তৃতীয় জানাযা শেষে ফতুল্লার দেলপাড়া কেন্দ্রীয় কবরস্থানে বুয়েট ছাত্র ফারদিন নূর পরশের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় বাদ মাগরিব দেলপাড়া কেন্দ্রীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
দাফনের সময় স্থানীয় মুসল্লিরা এবং স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন। নিহত ফারদিনের নিজ বাড়ি পাগলা নয়ামাটি এলাকায়। এ সময় স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
এর আগে বিকেল সোয়া ৫টায় ফ্রিজিং গাড়িতে ফারদিন নূর পরশের লাশ দেলপাড়া কেন্দ্রীয় কবরস্থানে আনা হয়। এসময় তার বাবা কাজী নূর উদ্দিন রানা, চাচা আবু ইউসুফ, ছোট ভাই সালেহ নুর, তাদের বন্ধুরাসহ পরিবারের অনেকে সঙ্গে ছিলেন।
তাঁর এর আগে দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গ থেকে ঢাকায় বুয়েট ক্যাম্পাসে নিয়ে যাওয়া হয় ফারদিনের লাশ। সেখানে তাঁর প্রথম জানাজা হয়। এতে বুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। পরে সেখানে এ হত্যাকান্ডে বিচার দাবি করে মানববন্ধন ও প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন সহপাঠী ও শিক্ষার্থীরা। এরপর বিকেল ৩টায় লাশ নিয়ে আসা হয় ডেমরা কোনাবাড়ির ভাড়াবাড়িতে।
এসময় নিহতের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর মা ফারহানা ইয়াসমিন। বারবার মুর্ছা যেতে যেতে তিনি বলতে থাকেন, তিলে তিলে মানুষ করে গড়ে তোলা স্বপ্ন হত্যার বিচার চাই আমি। পরে সেখানে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন এলাকাবাসী ও স্বজনেরা। ছিলেন সহপাঠী ও বুয়েটের অনেক শিক্ষার্থীও। ফারদিন নূর পরশের বাবা কাজী নূর উদ্দিন রানা বলেন, শনিবার ছেলের টার্ম পরীক্ষা ছিল বুয়েটে। সেজন্য সে শুক্রবার দুপুরে বাসা থেকে বের হয়েছিল।
ওইদিন রাত ১১টার পর থেকে ছেলের মোবাইল বন্ধ হয়ে যায়। শনিবার সে যখন
পরীক্ষায় অংশ নেয়নি তখন ছেলের বন্ধু ও শিক্ষকরা বাসায় ফোন দেন। তারপর থেকে আমরা ছেলেকে খোঁজাখুজি শুরু করলাম। না পেয়ে থানায় নিখোঁজের জিডি করলাম। পরে জানতে পারলাম, শুক্রবার রামপুরা থানা এলাকায় পরশ তার এক বান্ধবীকে নামিয়ে দিয়ে এসেছে। আমার ছেলে কোনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না। শত্রুতার কারণে আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। ওর লাশের সঙ্গে মানিব্যাগ, ব্লুটুথ, অকেজো মোবাইল, ঘড়ি সবই পাওয়া গেছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।
তিনিও সন্তানের মা, তিনি বোঝেন, সন্তান হারালে কীভাবে একটা পরিবারের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। মেধাবী ছাত্রদের এভাবে মেরে ফেললে দেশের ভবিষ্যত কি দাঁড়াবে? ২৫ বছর ধরে তিলে তিলে গড়ে তোলা স্বপ্ন আমার, আজ হত্যাকান্ডের শিকার ।
পরশকে নিয়ে বাবা নূর উদ্দিন আরও বলেন, পরশ রুটিন ধরে পড়াশুনা করত, পড়ালেখায় অনেক মনযোগী ছিল। সে বুয়েট, ঢাবিসহ তিন জায়গায় ভর্তির সুযোগ পেয়েছিল। পরে সে বুয়েটে ভর্তি হয় কিন্তু হলে যায়নি। এর কিছুদিন পর আবরাব হত্যাকা- ঘটে। এরপর ছেলে আর হলে যেতে চায়নি, আমরাও যেতে বলিনি। বাসা থেকে লেখাপড়া করত, বুয়েটের ক্যাম্পাসে যেত। খুব প্রয়োজন হলে বুয়েটের হলে থাকতো পরশ। যে ভয়ে ছেলেকে বুয়েটের হলে আমরাও যেতে বলিনি আজ সেটাই সত্যি হলো। পরশের বাবা জানান, কিছু দিন পরে স্পেনের একটা আন্তর্জাতিক বির্তক
প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল পরশের। এজন্য নতুন এনআইডি কার্ড, পাসপোর্ট করা হয়েছে। কিন্তু তার আগেই পরশ হত্যার শিকার হলো।