নারায়ণগঞ্জে দিনে দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর হার বাড়ছে। জেলার সরকারি হাসপাতালে রোগী আসছে পূর্বের তুলনায় দ্বিগুণ। রাজধানীর হাসপাতাল গুলোর ন্যায় পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। মশক নিধনে ঢাকা সিটি করপোরেশনের উত্তর ও দক্ষিন বিভাগ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও,নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে চলছে গতানুগতিক কার্যক্রম। এদিকে এডিস মশা নিধনে তাৎক্ষনিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা
প্রয়োজন বলে মনে করছেন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
অন্যান্য বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সাধারণত জুন থেকে অক্টোবর হচ্ছে ডেঙ্গুর মৌসুম। আর ডেঙ্গু রোগী বেশি থাকে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে। অক্টোবরের পর আক্রান্তের হার কমতে শুরু করে। কিন্তু এবছর পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়ে অক্টোবর থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার বাড়তে শুরু করেছে।
শহরের প্রধান দুটি সরকারি হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন ৪০ জন রোগী ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা গ্রহণ করছে। এরমধ্যে গড়ে ১২ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। ৩০০ শয্যা হাসপাতালের সূত্রমতে, বহি.বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছে গড়ে ১০ জন । একই পরিস্থিতি শহরের জেনারেল হাসপাতালে (ভিক্টোরিয়া)। হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোরে প্রতিদিন গড়ে ২০ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা গ্রহন করছে বলে জানান হাসপাতাল
কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যে হাসপাতালের বহি.বিভাগ থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করছে ৯-১০ জন। এছাড়াও প্রাইভেট হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলছে রোগীর চিকিৎসা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এডিস মশা উড়ার গতি কম হওয়ার কারণে , এই মশা ৫০- ১৫০ মিটারের মধ্যেই বিচরণ করে থাকে। এডিস মশার পরিমাণ বাড়লে ১০-১৪ দিনের ব্যবধানে সেই এলাকায় রোগী বেড়ে যায়। এই অবস্থানকে অ্যাক্টিভ ক্লাস্টার বলে। এই অ্যাক্টিভ ক্লাস্টার দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। ডেঙ্গু বিস্তারেরক্ষেত্রে অন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ভাইরাসের স্ট্রেনের ধরন। ভাইরাসের ৪টি স্ট্রেনের কোনো এক স্ট্রেন দিয়ে একবার কেউ আক্রান্ত হলে তার জীবদ্দশায় ওই স্ট্রেন দিয়ে আর আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। কিন্তু নতুন স্ট্রেনের আসলে আবারও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সেজন্য অ্যাক্টিভ ক্লাস্টার এলাকার মশা ধরে এবং সম্ভাব্য রোগীদের নমুনা নিয়ে মাঝেমধ্যে পরীক্ষা করে বিষয়টা নিশ্চিত হওয়া জরুরি। নতুন স্ট্রেন শনাক্ত হলে বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। সেই এলাকার অধিবাসীদের সতর্ক করার পাশাপাশি মশা নিধন কর্মসূচিও জোরদার করতে হবে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে এডিস মশা নিধনের বর্তমান পদ্ধতি যথেষ্ট কার্যকর নয় বলে মনে করেন জেলার সচেতন মহল। ‘আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী’ সংগঠনের সভাপতি মো. নুরুদ্দিন বলেন,
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে একসময় যেভাবে মশা নিধন কার্যক্রম চলত, এখন সিটিতে কার্যকর পদ্ধতিতে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে না। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ কোনো ব্যবস্থা আমি দেখছি না। শহরে ও শহরের বাহিরে অনেক নির্মাণাধীন ভবন ও বাসাবাড়িতে পানি জমে থাকে।
এসব জায়গায় এডিস মশার লার্ভা বেশি থাকে। সিটি করপোরেশন থেকে এসব জায়গায় পরিদর্শন সহ অভিযান করত, জরিমানা করতে দেখা যেত কয়েকবছর আগে। ইচ্ছে করলে সিটি করপোরেশন বিশেষ ব্যবস্থা নিতে পারে, এমনটা হলে শহরবাসী উপকৃত হবে। অক্টোবর নভেম্বর মাসে কখনোই ডেঙ্গুর প্রকোপ এতো বেশি দেখা যায়না। এখন ডেঙ্গুর যে পরিস্থিতি, এটা একটা এলার্মিং সিচুয়েশন (উদ্বেগজনক পরিস্থিতি)। এখনই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তথ্যানুযায়ী, মশক নিধন ও ফগার মেশিনের জ¦ালানির জন্য ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। গত বছরে এই বাজেট ছিল ৪ কোটি ৬৪ লাখ ২ হাজার ৫৩৯ টাকা। মশক নিধন কার্যক্রমে ১৭০জন কর্মী নিযুক্ত রয়েছে। এর বাহিরে রয়েছে একটি টিম যারা জরুরি প্রয়োজনে মশক নিধন করে। নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান বলেছেন ডেঙ্গু পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বলেন, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এছাড়া
ডেঙ্গুতে মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটেনি। তবে পুরো দেশের মতো আমাদের জেলাতেও মশক নিধনে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ সচেতন না হলে পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। ডেঙ্গু রোগ থেকে রক্ষায় আমাদের সচেতন হতে হবে। এডিস বাসাবাড়ি বা নির্মাণাধীন ভবনে জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে জন্ম নেয়। বাড়ির আশেপাশে যেন পানি জমে না থাকে, সেইদিকে নজর রাখতে হবে। প্রশাসনিকভাবে জরুরি ভিত্তিতে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শ্যামল চন্দ্র পাল শহরে মশক নিধন কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা সিটি করপোরেশনের ২৭ টি ওয়ার্ডে মশক নিধনের জন্য নিয়মিত কাজ করছি। কিন্তু আমাদের যেহেতু নিজস্ব কোন ম্যাজিস্ট্রেট নেই, আমরা পূর্বের ন্যায় অভিযান করার মতো কঠোর হতে পারছি না। নির্মাণাধীন ভবন বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের আবদ্ধ পানিতে এডিস মশার লার্ভা পেলে জরিমানা করা হতো। কিন্তু এখন এটা হচ্ছেনা।