সিদ্ধিরগঞ্জে কদমতলী এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেট তৈরি করে একের পর এক অবৈধভাবে তিতাসের গ্যাস সংযোগ দিয়ে যাচ্ছে সিরাজুল- সাইফুল নামে একটি চক্র। নাসিক ৭নং ওয়ার্ডস্থ কদমতলী নয়াপাড়া, মধ্যপাড়া, উত্তরপাড়া, দক্ষিণপাড়া, ভুইয়াপাড়া, নাভানা’সহ প্রতিটি এলাকায় রাতের আধারে এই চক্রটি তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগ দিয়ে থাকে। এর বিনিময়ে বাড়ির মালিকদের কাছ থেকে আদায় করে
মোটা অংকের টাকা। যার ফলে গ্যাস খাতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
জানা যায়, কদমতলী এলাকায় কয়েকটি সিন্ডিকেটের কারণে তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগ কোনভাবেই বন্ধ হচ্ছেনা। এর মধ্যে অন্যতম সিরাজুল-সাইফুল চক্র। রাতের আঁধারে বিভিন্ন আবাসিক ভবনে অবৈধ গ্যাস লাইন সংযোগ দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। ত্রুটিপূর্ণ এসব সংযোগ লিকেজ হয়ে ফিস্ফোরণ ঘটে প্রাণ হানির ঘটনা ঘটে প্রায়ই। অসাধু তিতাস কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে এসব চক্র চালাচ্ছে সরকারি প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাস হরিলুটের মহোৎসব।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আবাসিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় তিতাসের এক শ্রেণির ঠিকাদার ও অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে বিভিন্ন এলাকায় তৈরি হয়েছে অবৈধ গ্যাস সংযোগের এসব দালাল চক্রের। অবৈধ উপায়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের
নিয়ে গড়ে তুলেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট।
এসব সিন্ডিকেট তিতাসের কিছু কর্মকর্তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এক থেকে পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন আবাসিক ভবনে অবৈধভাবে গভীর রাতে গ্যাস সংযোগ দিচ্ছে। সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী এলাকায় সিরাজুল-সাইফুল অন্যতম একটি সিন্ডিকেট, যারা অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি টাকারও বেশি। তারা এককালিন মোটা অংকের অর্থ নিয়ে গ্যাস সংযোগ দিয়েও ভবন মালিকদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোয়ারা নিচ্ছে। এই চক্র ও তিতাসের অসাধু কিছু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে হরিলুট করা হচ্ছে সরকারি সম্পদ প্রাকৃতিক গ্যাস। অবৈধ উপায়ে সহজেই গ্যাস সংযোগ ও বিল পরিশোধের ঝামেলা না থাকায় বাড়ীর মালিকরা হয়ে পড়েছেন সিন্ডিকেট নির্ভরশীল। ফলে থানা এলাকায় দিন দিন বেড়েই চলছে অবৈধ গ্যাস সংযোগের এই খেলা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সপ্তাহখানেক আগে কদমতলী উত্তরপাড়া গ্যাসলাইন এলাকায় সর্বশেষ গ্যাস সংযোগ দিয়েছে সিরাজুল। নোয়াখালী জেলার বাসিন্দা ৫ ভাই মিলে একটি ৬ তলা ভবন নির্মাণ করছেন। তারা সবাই প্রবাসী। বাড়িটির নির্মাণ কাজের দায়িত্বে রয়েছেন তাইজুল ইসলাম নামে তাদের এক আত্মীয়। কয়েক লাখ টাকার চুক্তিতে ঐ ভবনে গ্যাসের পাইপ সংযোগ দিয়েছে সিরাজুল। অভিযুক্ত সিরাজুল তার এই অবৈধ কর্মের কথা অস্বীকার করেন।
তিনি জানান, আমি কোন গ্যাসের লোকনা। গ্যাস সংযোগ দেওয়া আমরা কাজ নয়, এর সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিরাজুল ও সাইফুল কদমতলী এলাকার মৃত সিদ্দিক খানের ছেলে। তারা এসব অবৈধ সংযোগ দিয়ে একাধিক বাড়ির মালিক হয়েছেন। দৃশ্যমান সিরাজুলের একটি ওয়ার্কশপের দোকান
রয়েছে। বিভিন্ন বসত-বাড়ির গেইট, দরজা, জানালার ঝালাইয়ের কাজের
আড়ালে রাতের আধারে গ্যাস সংযোগের পাইপেরও ঝালাই দেয়। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, বিভিন্ন এলাকায় বৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীর চেয়ে অবৈধ ব্যবহারকারীর সংখ্যাই বেশি। এছাড়াও বহু বাড়ীর মালিকরা বৈধ সংযোগ নিলেও অবৈধভাবে ব্যবহার করছেন একাধিক চুলা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বাড়ীর মালিক
জানান, আমারা চাইনা অবৈধ গ্যাস ব্যবহার করতে। কিন্তু বৈধভাবে সংযোগ দিতে না পারায় বাধ্য হয়ে স্থানীয় দালাল ঠিকাদারদের মাধ্যমে লাইন সংযোগ নিয়ে গ্যাস ব্যবহার করছি।
নাম প্রকাশে অনুচ্ছিক কদমতলীর একাধিক বাসিন্দা জানান, অদক্ষ লোকেরা ত্রুটিপূর্ণ লাইন সংযোগ দিচ্ছেন। রাতের আধাঁরে তরিঘড়ি করে লাইন সংযোগ দেওয়ায় লিকেজ হয়ে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে গ্যাস জমে বিস্ফোরণ ঘটে অনাকাঙ্খিতভাবে প্রাণ হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
তিতাস কর্তৃপক্ষ মাঝে মাঝে কোন বাড়ীতে অভিযান চালিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলেও দুই একদিনের মধ্যে আবার সংযোগ দিচ্ছেন সিন্ডিকেট সদস্যরা। এর মধ্যে সিরাজুল-সাইফুল অন্যতম একটি অবৈধ গ্যাস সংযোগকারী চক্র।
এ বিষয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন এর নারায়ণগঞ্জ জোনের সহকারী প্রকৌশলী মো. নাজমুল ইসলাম জানান, অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করি। অভিযানে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা সহ নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জরিমানা আদায় এবং নিয়মিত আইনে মামলা দিয়ে থাকেন। অবৈধ সংযোগের কোন তথ্য পেলে তিতাসের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।