গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, আমরা এক দফা আন্দোলন করছি। অনেকে ভাবেন, এক দফা মানে একটা দাবি। এই একটা দফায় তিনটা উপাদান আছে। আমরা আন্দোলন করছি, কারণ আমরা ভোট দিতে পারি না। ভোটাধিকার নেই। ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা এই সরকার কিংবা বর্তমান শাসনব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না। সরকারের পদত্যাগ, অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন, শাসন ব্যবস্থার বদল এই তিন মিলে এক দফা। বাংলাদেশের মানুষ এক দফার সংগ্রাম করবে, এই সংগ্রাম কেউ থামাতে পারবে না । এই তিনটি উপাদানের একটি নিয়ে যারা গড়িমসি করবে, তারা আবার বাংলাদেশে
স্বৈরাচারী শাসন দিতে চায়।
শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গনতন্ত্র মঞ্চের সমাবেশে তিনি এমন মন্তব্য করেন। এদিন সরকার ও শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনের দাবীতে নারায়ণগঞ্জ জেলা গণতন্ত্র মঞ্চ সমাবেশের আয়োজন করে।
তিনি আরো বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ বাঁচার তাগিদে, দেশ রক্ষার তাগিদে আবারো সংগ্রাম করার জন্য উদ্ভুদ্ধ হচ্ছেন। গণজাগরণ সৃষ্টি হচ্ছে। এই গণজাগরণকে আর বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না। শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্যে আন্দোলন পরিচালিত করতে হবে। কোনরকম ভুলভ্রান্তি চলবেনা। জনগণ আন্দোলনের নির্বার শক্তি।
জোনায়েদ সাকি বলেছেন, আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে ভোট হবে কিন্তু আমরা ক্ষমতায় থাকব্ । তারা ক্ষমতায় থাকবেন কিন্তু মানুষের ভোটের অধিকার থাকবে না। নির্বাচন নির্বাচন করে খেলা হবে কিন্তু মানুষ ভোট দিতে পারবে না। আর ভোটের দাবীতে আন্দোলন করলে গুম, খুন, হামলা, মামলা, গ্রেপ্তার চলবে।
আওয়ামী লীগ একই বুলি বার বার শুনায়। ওই আগুণ সন্ত্রাস, বিএনপি জামাত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। এসব বলে বলেই পার করছেন, একটা নতুন কথা নাই। তারা শুধু পেছনের কথাই শুনায়। তারা নিজেরাও নিজেদের কর্মীদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে।
তিনি বলেন, এদেশে আওয়ামী লীগ দৃশ্যমান উন্নয়ন হচ্ছে। আইয়ুব খানের আমলেও বড় বড় স্থাপনা নির্মান করে উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। এরশাদের আমলেও বড় বড় উন্নয়ন দেখানো হয়েছে। এই থিওরি এখন আর চলে না। আজ ওএমএস এর লাইনে দাঁড়িয়ে চাল কেনার টাকা নেই দরিদ্র জনগোষ্ঠির। গ্রামের দরিদ্র মানুষ রাস্তায় শুকোতে দেয়া ধান চাল থেকে কুড়িয়ে চাল সংগ্রহ করছে। ক্ষমতার ১৪ বছরে এসে এই উন্নয়ন দুর্ভিক্ষে পরিণত হচ্ছে। আমরা বলি নাই, আপনি নিজে বলেছেন আগামী বছর দুর্ভিক্ষ আসবে প্রস্তুতি নেন। প্রতিদিন রিজার্ভ কমছে। কারণ উন্নয়নের নামে বছরে পঁচাত্তর হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক গত এক বছরে ৮ হাজারের বেশী অস্বাভাবিক লেনদেন পেয়েছে। আমদানির নামে আমাদের দেশের ডলার বিদেশে চলে যাচ্ছে। এই সরকার যেভাবে অবাধে লুটপাটকে উৎসাহিত করেছে তা বাংলাদেশের আগে ঘটে নাই। প্রতিপক্ষের হাত পা বেঁধে, পুলিশ প্রশাসনকে নিজেদের পক্ষে রেখে উনারা বলেন খেলা হবে। আগে আন্দোলন লড়াই হবে। তারপর নির্বাচনী খেলায় আইসেন। আপনাদের হাত পা বেঁধে রাখবো না। তখন দেখবেন
বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের কিভাবে নেয়। আজ ক্ষমতাসীনরা বলছে, বিরোধীরা নাকি বিদেশীদের কাছে ধর্না দিচ্ছে। আমরা বলি, এতদিন বিদেশীদের পৃষ্ঠপোষকতায় ক্ষমতায় আসীন ছিলেন। এখন গণজোয়ার দেখে বিদেশীরা সরে যাওয়ায় পায়ের তলায় আর মাটি নেই।
তিনি জাপানের রাষ্ট্রদূতের এক বক্তব্য টেনে বলেন, জাপানের রাষ্ট্রদূত যা বলেছেন তা অস্বীকার করার উপায় নেই। কারন আমরা ভোটে দাঁড়িয়েছি এবং ভোট দিতে গিয়ে দেখেছি কিভাবে ভোট ডাকাতি হয়েছে। দেশের মান সম্মান নিয়ে আমরা চিন্তিত, কারন আপনারাই ভোট ডাকাতি করে দেশকে অসম্মানিত করেছেন। র্যাব আর পুলিশকে দিয়ে যেভাবে গুম, খুন, ক্রসফায়ার করিয়ে বিদেশ থেকে স্যাংশন আনিয়েছেন।তাতে দেশের সুনাম ক্ষুণ্ধসঢ়;ণ হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের কাছে দেশের মর্যাদানিরাপদ নয়।
সমাবেশে এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি (জেএসডি) আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর, ভাষানী অনুসারী পরিষদের আহবায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম প্রমুখ।