সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল গ্রামের চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ি ১১ মামলার আসামি মনিরুল ইসলাম এবার জাতীয় শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মতির মাস্টারের মালিকাধীন জায়গা দখলের চেষ্টা চালিয়েছে। সন্ত্রাসী পাঠিয়ে টিনের বাউন্ডারি ভেঙ্গে জমিটি দেখা শোনার দায়িত্বে থাকা লোকজনকে হুমিক-ধামকিও দিয়েছে সে। এবং জায়গা দখল করবে বলে হুশিয়ারি দিয়ে যায়।
এ ঘটনায় শনিবার (১৯ নভেম্বর) রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় জিডি করেছেন আব্দুল মতির মাস্টার।
এদিকে কেন্দ্রীয় শ্রমিকলীগের টানা ৯ বছর দায়িত্বপালনকারী আব্দুল মতিন মাস্টারের জায়গা দখলের চেষ্টা চালানের ঘটনায় চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে।
জিডির তথ্যমতে, সিদ্ধিরগঞ্জের ৩নং ওয়ার্ডের নিমাইকাশারী এলাকায় ১৯৯৮ সালের ৯ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ৪৪৫০ নং দলিল মুলে এবং ৩৫ শতাংশ জমি ক্রয় করেন আব্দুল মতিন মাস্টার। পরে ১৯৯৯ সালের ১২ এপ্রিল এওয়াজ বিনিময় দলিল মুলে জমিটি ভোগ দখল করে আসছেন। কিন্তু মনিরুল ইসলাম কাঁচপুর ও বিহরাগত এলাকার সন্ত্রাসী ও কিশোরগ্যাংদের নিয়ে জমিটি দেখা শোনার দায়িত্বে থাকা লোকজনকে ভয়ভীতি দেখায় এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়।সবশেষ ১৮ নভেম্বর জমিটি দখলের উদ্দেশ্যে মনিরুল ইসলাম সন্ত্রাসী দলবল নিয়ে জমিতে থাকা টিনের বাউন্ডারি ভেঙ্গে ফেলে এবং জমিটি দখল করবে বলে হুমকি দিয়ে যায়।
এ বিষয়ে আব্দুল মতিন মাস্টার জানান, যে জমিটি মনিরুল ইসলাম দখল করতে চায় সেই দলিলে সাক্ষী হিসেবে মনিরুল এর সাক্ষরও রয়েছে। আমি হতবাক হয়েছি মনিরুলে কান্ড দেখে। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল তাই আইনের আশ্রয় নিয়েছি।
কে এই মনির পুলিশ সূত্র মতে, শিমরাইল গ্রামের মৃত ধনু মেম্বারের ছেলে মনিরুল
ইসলামের বিরুদ্ধে ডেমরা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ডাকাতি, ছিনতাই, মাদকসহ ১১টি মামলা রয়েছে।
২০১৪ সালে সাতখুনের পর পুরো শিমরাইল এলাকার নিয়ন্ত্রন নেয় মনিরুল ইসলাম মনির। শিমরাইল ট্রাক টার্মিনাল, শীতলক্ষ্যা নদীর শিমরাইল ও আটি মৌজার বিস্তীর্ণ এলাকা, শিমরাইলের পরিবহন কাউন্টার, মাছের খামার, বালুমহাল, ল্যান্ডিং স্টেশন, কারখানায় চাঁদাবাজিসহ সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ মনিরুল ইসলামের মনিরের নেতৃত্বে তার ভাই ও সহযোগিরা। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের বিএনপির সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিনের শেল্টারে মনিরুল ইসলাম একক অধিপতি বনে যায় ওই এলাকায়।
মনিরুল ইসলাম একসময় নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সেই সুবাদে তিনি অনেক তথ্যই জানতেন। এ কারণে নুর হোসেন পালিয়ে যাওয়ার পর মনির পুলিশের বড় সোর্সের ভূমিকা পালন করে। এই সুবাদে ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিলের পর থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত শিমরাইল গ্রামে প্রবেশের তিনটি পথে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে বন্ধৃকত তাজ জুট মিলের ভেতর মাদক বিক্রির মহোৎসব চালায় মনির। এছাড়া শিমরাইলে নুর হোসেনের বাড়ির পার্শে¦র ফিলিং স্টেশনের পেছনের ডিপো ছিল ফেনসিডিলের গোডাউন। সেখানে কালা নাসিরকে দিয়ে মাদক বিক্রি করায় মনির। শীতলক্ষ্যা নদীর বালু গদির ওখান দিয়ে রাতের বেলায় বড় বড় মাদকের চালান আসতো। সকাল থেকে গভীররাত পর্যন্ত শত শত মোটর সাইকেল, সিএনজি ও প্রাইভেটকারের করে লোকজন আসতো মাদক সেবনে।
এক পর্যায়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান ওই সময়ের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি সরাফত উল্লাহকে নির্দেশ দিয়েছিলেন মনিরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার এবং সিসি ক্যামেরা খুলে আনার জন্য। কিন্তু পুলিশ মনিরুল ইসলামের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা পায় বিধায় কখনো মনিরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেনি। যদিও শামীম ওসমানকে দেখানোর জন্য পুলিশ অভিযান চালাতো তবে তার আগেই মনিরুল ইসলামকে ঘটনাস্থল থেকে সরে যেতে বলতো পুলিশ।
স্থানীয়দের সূত্র মতে, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সিদ্ধিরগঞ্জ-ডেমরা এলাকার ত্রাস ছিল জামান-সেলিম নামের ক্যাডার জুটি। তারা এলকায় কেরামুন-কাতেবিন নামেও ব্যাপক পরিচিত। তারা গিয়াস উদ্দিনের লোক। জামান-সেলিমের অনেক সহযোগী নুর হোসেন পালিয়ে যাওয়ার পর মনিরুল ইসলামের সঙ্গে যুক্ত হয়। শীতলক্ষ্যার তীরে ড্যানিশের কারখানার পাশে মনিরুল ইসলামের নিজস্ব অফিসে চলতো সব ধরনের অপকর্মের হিসেব নিকেষ।
কাঁচপুর ব্রিজ থেকে তাজ জুট মিল পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকার বালু ও পাথরের ব্যবসায়ীরা মনিরগংদের ভাড়া দিয়ে ব্যবসা করতে হয়েছে। অন্তত ৪০টি গদিঘর থেকে মাসিক ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা ভাড়া আদায় করেছে মনির গংরা। ড্যানিশ, অ্যাপোলো, রাসেল, রোবেল ঢেউ টিন, আরবাপলিসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠানের পণ্য পরিবহন এবং বর্জ্য অপসারণের বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ নেয় মনিরুল ইসলাম। বালু গদির ওখানে কিছু জায়গা মনিরুল ইসলাম নিজেই দখল করে নেয়। ২০১৪ সালের
৬ জুলাই বিআইডাব্লিউটিএর অভিযানের সময় দখলের অভিযোগে মনিরুল ইসলামসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে।
২০১৭ সালের ৮ ডিসেম্বর গভীর রাতে মনিরুল ইসলাম তার তিন সহযোগিসহ গ্রেপ্তার হয়। ডেমরা থানার এস আই শাহাদাত হোসেন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ডেমরা ঘাট মইনিয়া টেলিকম দোকানের সামনে থেকে ধাওয়া করে তাদের গ্রেপ্তার করে। ইয়াবা উদ্ধার ও তাদের ব্যবহৃত একটি নীল রংয়ের টয়োটা প্রাইভেট কার (ঢাকা মেট্টো-গ-১৭-৪৯৮৮) জব্দ করে। এবং পরদিন ৯ ডিসেম্বর এস আই শাহাদাত হোসেন বাদী হয়ে ডেমরা থানায় মাদক দ্রব্য আইনে করেন।