খাদিজা আক্তার সন্তানের হাত ধরে চাষাড়া শহীদ মিনারের বিপরীত দিকে দাড়িয়ে আছেন। পথের যানবাহনের গতি কিছুটা কমলেই তিনি রাস্তা পাড় হবেন। কিন্তু গতি আর কমে না। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর যানবাহনের সংখ্যা কমে হলে মেয়েকে নিয়ে দ্রুত গতিতে রাস্তা পাড় হয়ে সড়কের মাঝখানের ডিভাইডারে দাঁড়ান। সেখানেও তাকে অপেক্ষা করতে হয়, কখন গাড়ির সংখ্যা একটু কমবে। রাস্তার অপর পাশে গিয়ে আলাপ হয় এই পথচারীর সঙ্গে। কথা বলে জানা যায়, এভাবেই প্রতিদিন জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার হন খাদিজা আক্তার। তার মেয়ে নাজিাফা আমলাপাড়ার আদর্শ শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাকে নিয়ে প্রতিদিনই এ পথে চলতে হয়।
খাদিজা আক্তার বলেন, ‘চাষাড়া চত্বরে ফুটওভার ব্রিজ প্রয়োজন। সেটা না হলেও অন্তত জেব্রা ক্রসিং থাকলে মানুষের চলাচল অনেকটাই নিরাপদ হয়। এই রাস্তা পারাপার ঝুঁকিপূর্ণ। জেব্রা ক্রসিং বছর খানেক আগে করা হলেও এখন রং উঠে গেছে। একারণে কোনো গাড়িই গতি থামায় না। রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কমলে
দৌড়ে রাস্তা পার হই।
শহরের এই জায়গার যে এমন চিত্র, তা নয়। নগরীর ব্যস্ততম বঙ্গবন্ধু সড়কে পথচারীদের স্বস্তিতে চলাচল ও যাতায়াতের উদ্দেশ্যে একসময় জেব্রা ক্রসিং তৈরী করা হলেও বর্তমানে জেব্রা ক্রসিং এর আর দেখা মিলে না। কয়েক বছর পূর্বে শহরের একাধিক পয়েন্টে জেব্রা ক্রসিং তৈরী হয়। নগরীর চাষাড়া চত্বরের চারপাশে ৩টি পয়েন্টে সোনালী ব্যাংক হতে শহীদ মিনার ও খাজা সুপার মার্কেট হতে সুগন্ধা বেকারী, বায়তুল আমান ভবন থেকে আল জয়নাল ট্রেড সেন্টার পর্যন্ত। সেই সাথে বঙ্গবন্ধু সড়কের চাষাঢ়া মর্ডান ডায়গনেস্টিক সেন্টারের সামনে, কালির বাজার ব্যাংকের মোড়, নারায়ণগঞ্জ ক্লাব, দুই নং রেলগেট সংলগ্ন চত্বরে, ডিআইটি আলী আহম্মদ চুনকা পাঠাগার ও মিলনায়তনের সামনে, জিমখানা মোড়ে জেব্রাক্রসিং নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু বছর না পেরুতেই জেব্রাক্রসিংয়ের রং হালকা হয়ে যায়। কিন্তু এখন জেব্রা ক্রসিং এর রং পুরোপরি উঠে গেছে। জেব্রা ক্রসিং পথচারী ও
চালকদের চোখের আড়ালে। তাই বেশিরভাগ পয়েন্টে জেব্রা ক্রসিংয়ের সেখানে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কোনো গাড়িই গতি কমায় না। ফলস্বরূপ প্রায় সময়েই আতঙ্কিত হয়ে পথচারীরা পারাপার হন।
কালিবাজার মোড়ে একজন মোটরসাইকেল আরোহীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাস্তায় সব গাড়ি চলমান থাকলে তখন সবাইকে একই গতিতে চলতে হয়। কেউ থামে না বা গতি কমায় না।
ব্যস্ত রাস্তায় পথচারীদের পারাপারের জন্য সাদা-কালো ডোরাচিহ্নিত নির্দিষ্ট অংশ জেব্রা ক্রসিং নামে পরিচিত। জেব্রা ক্রসিংয়ের কাছাকাছি এলে গাড়ির গতি কমানোর নিয়ম রয়েছে। কিন্তু জেব্রা কসিং এর রং না দেখা যাওয়ায় সে নিয়ম মানা হচ্ছে না।
পথচারীদের পারাপারের সময় কিংবা হাত দিয়ে ইশারা দেওয়া হলেও গাড়ির গতি কমে না।
কথা হয় চাষাড়া মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বে থাকা জীবনের সঙ্গে। তিনি বলেন, জেব্রা ক্রসিং না থাকায় পথচারীরা একেকজন একেক দিক দিয়ে পাড় হয়। আর চালকেরাও এ কারণে গাড়ির গতি কমায় না। মানুষও গাড়ির ভয়ে আতঙ্কে রাস্তা পাড় হয়। জেব্রা ক্রসিং থাকলে যাতায়াত করা সুবিধা হয়। মাঝে মাঝে আমরা নিজেদের তাগিদে অনেক অসুস্থ কিংবা বয়স্ক পথচারীকে গাড়ি থামিয়ে পার করে দিই। জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার হলে সড়কের বিশৃঙ্খলা রোধ করা সম্ভব।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলামের সঙ্গে এই বিষয়ে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।