প্রায় ৩৫ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ রেল স্টেশনে জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন বিক্রম দাস। বয়স ষাটের উপর। স¤প্রতি ঢাকা নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রায় বন্ধ হয়ে এসেছে উপার্জন। নিজের জীবনের কথা বলতে গিয়ে এক ফাঁকে বিক্রম বলেন, মেয়ের বিয়েতে মুরগীর মাংস ব্যবস্থা করেছিলেন। খাসির মাংস খাওয়াতে পারেননি। এমনকি তিনি নিজেও প্রায় ১৫ বছর আগে খাসির মাংস খেয়েছিলেন। আর খেতে পারেন নাই।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ রকম একটি সংবাদ চোখে পড়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাসদ শামীম ওসমানে সহধর্মীনি ও নারায়ণগঞ্জ জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান সালমা ওসমান লিপির। রেলস্টেশনে লোক পাঠিয়ে খোঁজ খবর নেন বিক্রম দাসের।
পর জানতে পারেন বিক্রম পরিবারের সদস্য প্রায় ৮-১০ জন।
রবিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে ওই ১ নং রেলস্টেশনে বিক্রমের পরিবারের জন্য রান্না করা খাসির মাংস ও পোলাও পাঠিয়েছেন লিপি ওসমান।
লিপি ওসমানের ররান্না করা খাসির মাংস পেয়ে আবেগ আপ্লæত হয়ে পড়েন বিক্রম। ওই সময় রান্না করা খাবার পৌছে দেয়া সমাজ কর্মী নিজাম হোসেনের মাধ্যমে বিক্রম লিপি ওসমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
মূলত পদ্মা সেতু রেললাইন নির্মাণ কাজের জন্য নারায়ণগঞ্জ টু কমলাপুর ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এই ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন জুতা সেলাই করা বিক্রম। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত আয় হয়েছে ১০০ টাকারও কম।
নিজের কথা জানিয়ে বিক্রম বললেন, মাত্র ছয় মাস আগে ছোট মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। বড় মেয়ের বিয়ে দিছি অনেক আগে। দুই মেয়ে এখন থাকে জামাইর সাথেই। এক জামাই কাজ করে গ্রীলের আরেকজন সিএনজি ওয়ার্কশপে। নব্বই বছরের বয়স্ক মা, স্ত্রী আর ছোট ছেলেকে নিয়ে পরিবার চালাতে হয়।
ছেলেটা হোসিয়ারি কারখানায় কাজ শিখছে। কোন বেতন দেয় না তাকে, ভালো মত কাজ পারলেই মাসিক বেতন জুটবে তার। এরই মধ্যে কিস্তি তুলে ছোট মেয়ের জামাইকে দেয়া যৌতুকের টাকার কিস্তি আটকে গেছে। আগে পরিশোধ করা হয়েছে ২৬ হাজার, আরও ৩০ হাজার পরিশোধ করতে হবে ছয় মাসের মধ্যে। কিভাবে সেই টাকা জোগাড় হবে জানেন না বিক্রম।
এর বাইরে ঘর ভাড়া, দৈনন্দিন বাজার খরচ তো আছেই। এমনেই চলতাছে সব। মাইয়ার বিয়াতে মুরগি খাওয়াসি। মাইনশেরে তো ডাইল ভাত খাওয়াইতে হয়, নাইলে তো মাইনশে বদনাম কইবো।
বিয়েতে খাসি ছিল কিনা এমন প্রশ্ন শুনেই লাজুক হাসি দিয়ে বললেন, খাসি তো কিন্না খাইসি যখন দাম কম আছিল। তাও অনেক বছর হইসে, অন্তত ১৫ বছর আগে খাসির মাংস খাইসি।