সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে চাষাড়া পর্যন্ত ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের লিংক রোড ৬ লেনে উন্নতীকরণ প্রকল্পের কার্যক্রমের ধুলা আর দূষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। দিন দিন ক্রমাগত বেড়েই চলেছে এই দূষণ। অতিরিক্ত ধুলাবালি বাতাসে যোগ হয়ে মাঝে-মধ্যেই ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে পুরো এলাকা। ধুলা এমনভাবে বাড়ছে যে শ্বাস-প্রশ্বাসে বিশুদ্ধ বাতাস নেয়ারও সুযোগ নেই। প্রতিনিয়ত ধুলায় মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন স্থানীয়রাসহ যানবাহনে চলাচলকারীরা।
এতে অনেকেই হাঁচি-কাশিসহ ব্রঙ্কাইটিসের মতো নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে অ্যাজমা, এলার্জি, কাশিসহ শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। হাসপাতাল, ক্লিনিক ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চেম্বারে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। এমন দূষণে চরম হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপরিকল্পিত ও সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ি, উন্নয়ন প্রকল্পে ধীরগতি, পরিবেশ অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথসহ উন্নয়ণ প্রকল্পের ঠিকাদারি সংস্থাগুলোর উদাসীনতায় ধুলা-বালুতে এমন দূষণ ও দমবদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর সাথে যোগ হয়েছে যানবাহন ও কল-কারখানার কালো ধোঁয়া।
পথচারী, যানচালক ও স্থানীয়বাসীরা বলছেন এই দূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তর ও সড়ক ও জনপথসহ উন্নয়ণের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘ কিংবা স্বল্প মেয়াদি তেমন কোনো উদ্যোগই চোখে পড়েনি।
এদিকে বিগত এক বছর যাবৎ চলমান কাজের শম্ভুক গতির কারণে সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে পড়ছেন যাত্রী ও যানবাহনের চালকেরা। এতে ধুলা আর দূষণের শিকার হচ্ছে তারা।
একাধিক পথচারী জানান, এ সড়কে হাঁটার মতো পরিবেশে আর নেই। পাঁচ মিনিট হাঁটার পর চেহারা ধুলার কারণে বিকৃতি হয়ে যায়। প্রায় দুই বছর ধরে এ সড়ক উন্নয়ণে কাজই চলছে। দ্রæত এ সড়কের উন্নয়নের কাজ শেষ না হলে এ ধুলাবালি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না ।
সরজমিনে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড ঘুরে দেখা যায় সর্বত্রই ধুলাময় পরিবেশ। শীতের কুয়াশার মতো ধুলায় আচ্ছাদিত রাস্তা। চলন্ত যানবাহনের পেছনে কুÐলি পাকিয়ে বাতাসে উড়ছে ধুলা-বালু। সড়কে দুই পাশের দোকান-পাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়ি ঘর ধুলায় সয়লাব।
উন্নয়ন কাজের জন্য রাস্তা, নালা-নর্দমা খুঁড়ে রাস্তায় রাখা মাটি আর বালু রাখা হয়েছে। গণপরিবহনের যাত্রীরা ধুলায় নাকাল হচ্ছেন। গায়ের পোশাক, মাথার চুল বিবর্ণ হচ্ছে ধুলায়। সড়কের পাশের শো-রুম, খাবারের দোকান, হোটেল, রেস্তোঁরা ধুলা বালুতে একাকার।
আশপাশের ভবন আর গাছপালায় জমেছে ধুলার আস্তরণ। সবচেয়ে বেশি নাজেহাল হচ্ছেন রাস্তায় দায়িত্বরত পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশের সদস্য, ভ্যানগাড়ি, রিকশা চালকসহ গণপরিবহনের চালক ও যাত্রীরা।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপদ বিভাগের সূত্রমতে, সড়ক ৬ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৪৪৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। সড়ক উন্নতীকরণ পরবর্তী সড়কটি প্রায় প্রশস্থ হবে ১২৯ ফুট। এই প্রকল্পের আওতায় সড়কের ৩টি পয়েন্টে হবে আন্ডারপাস ও দুটি পয়েন্টে ফুটওভারব্রিজ হবে।
সাইনবোর্ড ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হবে ও শিবু মার্কেট, জালকুড়ি ও ভুইগড়ে আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে।
জানা যায়, যানযট নিরসনের উদ্দেশ্যে ২০১৯ সালের ৮ জুলাই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোড ৬ লেনে উন্নতীকরণ প্রকল্পের প্রস্তাব পরবর্তী প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হলে প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়।
২০২১ সালের ৯ ফেব্রæয়ারি প্রকল্প বাস্তবায়নে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর এনডিই-টিবিএল-এইচটিবিএল-জেভি নামক যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করে। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ নির্ধারন হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত।
কিন্তু মেয়াদ পূর্তির শেষ সময়েও প্রকল্পের বৃহদাংশ কাজ অবশিষ্ট রয়েছে। কার্য সম্পাদনে প্রকল্পের নতুন মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারিত হয়েছে। এদিকে সড়কে দীর্ঘ সময়ের দৃশ্যমান কার্যক্রমের ফলে অধিক যানযট হওয়ায় ধুলাবালি ও দূষণের ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। বিগত কয়েকমাসে এই ভোগান্তি চরমে দাড়িয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সাইনবোর্ড, ভূইগড়, জালকুড়ি সহ শিবুমার্কেট এলাকায় সড়ক প্রশস্তকরণের কার্যক্রম চলছে। সাইনবোর্ড থেকে শিবুমার্কেট পর্যন্ত একাধিক স্থানে আংশিক কাজ করা হয়েছে। সড়কের একাধিক স্থানে এক লেন দিয়েই গাড়ি যাওয়া-আসা করায় সময় অন্তর অন্তর দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। আধঘন্টার সড়ক পাড়ি দিতে দেড় থেকে দুই ঘন্টা সময় পেরিয়ে যায়। কবে প্রকল্প শেষ হবে, তার অপেক্ষায় দিন গুনছেন যাত্রীরা।
উৎসব পরিবহনের যাত্রী ভুক্তভোগী মো. শফিকুল ইসলাম আরজু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মনে হচ্ছে যেনো অপরিকল্পভাবে সড়ক উন্নয়ণের কাজ চলছে। এতে অল্প একটু রাস্তার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমাদের জ্যামে বসে থাকতে হচ্ছে। ফলে সৃষ্টিকৃত ধুলো ও বায়ু দূষণে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে যাতায়াত করতে হয়। সড়কে নিয়মিত পালি ছিটালে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।
নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শেখ মোজাহীদ জানান, সড়ক উন্নয়ণের কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান এনডিইকে ধুলোবালি ও দূষণ রোধে নিয়মিত পানি ছিটানো ও নির্মাণ সামগ্রী তেরপাল দিয়ে ঢেকে রাখার জন্য বলা হয়েছে যাতে কোনভাবেই পরিবেশ দুষন না হয়। এছাড়া জেলা প্রশাসনের সমন্বয় সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। প্রয়োজনে পরিবেশ দুষণরোধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বলেন, সড়কে ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণের জন্য ইতোমধ্যেই পানি ছিটানো হচ্ছে। শীত মৌসুমের শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে সড়কে ছিটানো পানি দ্রæত শুকিয়ে যাচ্ছে। প্রয়োজনে কোনো কোনো এলাকায় একাধিকবার পানি ছিটানো হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে ধুলো রোধে পানি ছিটানোর পরিমান আরো বাড়িয়ে দেয়াসহ প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।