সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় শুক্রবার রূপগঞ্জের পূর্বাচলে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এদিন দুপুরের পর রাজধানী ও আশপাশের জেলার লোকজন মেলায় আসতে শুরু করেন। মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে কেনাকাটাও। বিক্রি বাড়ায় খুশি বিক্রেতারা।
শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মেলায় স্রোতের মতো মানুষ প্রবেশ করেছে। টিকিট কাউন্টার থেকে প্রবেশ মুখ-সব জায়গায় ছিল মানুষের ঢল।
ভিড় সামলে সুশৃঙ্খলভাবে দর্শনার্থীদের প্রবেশ করাতে নিরাপত্তারক্ষী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পোহাতে হয়েছে ভোগান্তি।
দুপুরে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বাণিজ্যমেলার গেটগামী বিআরটিসি বাসেও ছিল উপচে পড়া ভিড়। একটা বাস আসতে না আসতেই তা যাত্রীতে ভরে যায়। এমনকি বিআরটিসি কাউন্টারে টিকিটের জন্য যাত্রীদের অপেক্ষা করতেও দেখা গেছে। এদিকে, ছুটির দিনে দর্শনার্থী ও বিক্রি বাড়ায় খুশি বিক্রয় কর্মীরা।
বাণিজ্যমেলা ঘুরে দেখা গেছে, খাবার, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও ক্রোকারিজ পণ্যের স্টলে ভিড় বেশি। মেলায় কেউ এসেছেন বন্ধুদের নিয়ে। কেউবা এসেছেন পরিবার পরিজন নিয়ে। মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে তারা ছবি তুলে সময় কাটাচ্ছেন। অনেকেই পছন্দের পণ্য খুঁজছেন এবং কেনাকাটা করছেন।
প্রসঙ্গত : মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৬তম আসরের পর্দা উঠেছে নতুন বছরের ১ জানুয়ারি। রূপগঞ্জের পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) এ মেলা উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা চলবে। প্রবেশ মূল্য বড়দের জন্য ৪০ ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা।
সাধারণ দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে কুড়িল থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত বিআরটিসি ডেডিকেটেড সার্ভিসের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বাণিজ্য মেলা পর্যন্ত ৩০টি স্পেশাল বাস চলছে। ভাড়া জনপ্রতি ৩০ টাকা। মতিঝিল ও মিরপুর থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত বিআরটিসি বাস চলছে।
বাণিজ্য মেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোট ২৩টি প্যাভিলিয়ন, ২৭টি মিনি প্যাভিলিয়ন, ১৬২টি স্টল এবং ১৫টি ফুড স্টল দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা অন্য বছরের তুলনায় অর্ধেক। মেলায় মাত্র ১১টি প্রতিষ্ঠানের বিদেশি স্টল রয়েছে। মেলা কমপ্লেক্সের বাইরে প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন এবং ফুড স্টল নির্মাণ করা হয়েছে।
মেলায় দেশীয় বস্ত্র, মেশিনারিজ, কার্পেট, কসমেটিক্স অ্যান্ড বিউটিএইডস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স পণ্য, ফার্নিচার, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহসামগ্রী, জুতা ও চামড়াজাত পণ্য, স্পোর্টস আইটেম, স্যানিটারিওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, হস্তশিল্প পণ্যসহ হোম ডেকর পণ্য মেলায় প্রদর্শন করা হচ্ছে।
নিরাপত্তা অগ্রাধিকার বিবেচনায় এক্সিবিশন সেন্টারে বিল্ট ইন ১৬০টি সিসিটিভি বসানো হয়েছে। অতিরিক্ত ৬০টি সিসিটিভি ক্যামেরা মেলা প্রাঙ্গণের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপন করা হয়েছে। মেলার প্রবেশ গেটে পর্যাপ্ত আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধে মেলায় সার্বক্ষণিক ফায়ার ব্রিগেড নিয়োজিত রয়েছে।
মুজিববর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ ইত্যাদি বিষয়কে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করা হয়েছে। এই প্যাভিলিয়নের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, স্বাধিকার আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অবদান, বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন দিক জানা যাবে। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে নেওয়ার প্রকৃত ইতিহাস জানা যাবে।
বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মভিত্তিক বিভিন্ন আলোকচিত্র প্রদর্শন ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হবে। সর্ববৃহৎ পার্কিং সুবিধা রাখা হয়েছে। এক্সিবিশন সেন্টারের ভেতরে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ৫০০ আসনবিশিষ্ট একটি ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনা করা হচ্ছে মেলায় একটি অস্থায়ী সচিবালয় রয়েছে। যেখান থেকে মেলার সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিং করা হচ্ছে। দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে তথ্যকেন্দ্র, জনতা ব্যাংক, মসজিদ ও বেশ কয়েকটি ব্যাংক বুথ স্থাপন করা হয়েছে। মেলায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়েছে। মা ও শিশুদের কথা বিবেচনা করে মেলায় ২টি মা ও শিশু কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।