সোনানারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নুর বিরুদ্ধে এবার এক কোটি টাকার চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন শরিফ হোসেন নামের এক ব্যক্তি।
গত শনিবার ( ২৮ জানুয়ারি) চীফ জুডিশিয়াল মেজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন তিনি। মামলা দায়েরের পর বিজ্ঞ বিচারক মো: নূর মহসীন জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার অপর আসামি হলেন গোহাট্টা এলাকার বাদশা মিয়ার পুত্র আহাম্মদ। মামলা সূত্রে জানা যায়, প্রবাসী শরিফ
হোসেন দেশে ফিরে এসে সোনারগাঁ উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চর মেনিখালী মৌজায় লিটন মিয়া ওরফে ইব্রাহীমের কাছ থেকে ৮ শতক জমি ক্রয় করেন বাড়ি নির্মাণের জন্য। জমি নামজারি করে সেখানে মাটি ভরাটও করেন। এরপর দশতলা ভবন নির্মাণের জন্য মাটির পরীক্ষা সম্পন্ন করে সম্প্রতি জমিতে
রড, সিমেন্ট ও ইট-বালু নিয়ে আসেন। নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে আসার পর গত ১০ জানুয়ারি রফিকুল ইসলাম নান্নুর নেতৃত্বে ১০/১৫ জনের সন্ত্রাসী দল জমিতে এসে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার জন্য শ্রমিকদের হুমকি দেয়। খবর পেয়ে জমির মালিক শরিফ ছুটে আসেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন তার ভাই জসিম উদ্দিন, ফয়সাল, সামাদ ও বজলুর রহমান। তারা রফিকুল ইসলাম নান্নুকে কাজ বন্ধ করার জানতে চাইলে সাথে সাথে তাদেরকে লোহার রড, কাঠ ও বাঁশ দিয়ে বেধরক পেটাতে শুরু করে।
এ সময় শরিফকে বাঁচাতে তার ভাই ছুঁটে আসলে তাকেও পিটিয়ে আহত করে সন্ত্রাসীরা।তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসলে নান্নু এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে জমিতে কাজ করতে দেয়া হবে না বলেও হুমকি দেয়। এমনকি শরিফকে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়। এ ঘটনায় শরিফ মিয়া আদালতের দ্বারস্থ হলে বিষয়টি আমলে নিয়ে চীফ জুডিশিয়াল মেজিস্ট্রেট আদালত-৪ জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে শরিফ মিয়া জেলা পুলিশ সুপার বরাবর রফিকুল ইসলাম নান্নুর বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, রফিকুল ইসলাম নান্নুর বাবা বেবী টেক্সি চালক মোস্তফা মিয়া মহান মুক্তিযোদ্ধের সময় স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগি হিসেবে কাজ করেছেন। তার থ্রি হুইলার বেবী টেক্সি দিয়ে রাজাকারদের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যেতেন মোস্তফা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মোগড়াপাড়া ইউনিয়নের ষোলপাড়া এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা সাফিউর রহমান সাফি পিস্তলের বাট দিয়ে মোস্তফাকে ঘাড়ে আঘাত করেছিলেন। এক মাস অসুস্থ থেকে পরে মারা যান নান্নুর বাবা বেবী চালক মোস্তফা। নান্নুর বয়স ছিল তখন ৪/৫ বছর। অভাব অনটনের সংসারে নান্নুর পড়াশোনাও খুব বেশী দূর এগুয়নি।
সংসারের হাল ধরতে শুরু করেন ভারতীয় নিষিদ্ধ শাড়ি আমদানির ব্যবসা। নিজে চোরাই পথে শাড়ি আমদানি করতেন। এরপর শুরু করেন ফেন্সিডিলের ব্যবসাও। জুয়া খেলা ছিল তার নিত্য সঙ্গী। জুয়া খেলে গাড়িও জিতেছিলেন তিনি। এরপরই তার ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে। পরবর্তীতে তিনি সোনারগাঁয়ের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হাসনাতের হাত ধরে ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। উপজেলা
যুবলীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর সোনারগাঁ থেকে ঢাকায় চলাচলকারী স্বদেশ, দোয়েল, নাফ পরিবহন থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করতেন নান্নু। এছাড়া সিএনজি স্ট্যান্ড, অটোরিকশা, বেবী স্ট্যান্ডের চাঁদাও আসতো তার পকেটে। একটা
সময় শুরু করেন জমি দখল, বাজার দখল, টেন্ডারবাজি। নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডের সাথে তার নাম জড়িয়ে যায় খুব দ্রæত। এছাড়াও ২০১৯ সালের অক্টোবরে সোনারগাঁয়ে সরকারী কর্মকর্তাকে নিজ রুমে তালাবদ্ধ করে রাখারও অভিযোগ আছে উপজেলা যুবলীগের এই সভাপতির বিরুদ্ধে। একটি ব্রিজের
ঠিকাদারি কাজের বিল প্রাপ্তিতে বিলম্ব হওয়ায় নান্নু দলবল নিয়ে সোনারগাঁ উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আব্দুল জব্বারকে তার কক্ষের ভেতরে রেখে বাহির থেকে দরজা আটকে দিয়েছিলেন তিনি। গত বছর ১ জুন চাঁদা না দেয়ায় এক সিএনজি চালককে মারধর করার অভিযোগ উঠেছিল নান্নুর বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে সিএনজি চালকরা নান্নুর অপকর্মের বিরুদ্ধে মানববন্ধনও করেছিলেন। এছাড়াও কাইকারটেক হাটের ইজারা নিয়ে দলীয় লোকদের উপর ন্যাক্কারজনক হামলাও করেছিল নান্নু বাহিনী। তাছাড়া স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রকাশ্যে
নৌকার বিরোধীতা করে বেশ সমালোচিত হয়েছিলেন নান্নু।
প্রকাশ্যে নৌকার বিরুদ্ধে ভোট চেয়ে আওয়ামী লীগ কর্মীদের হুমকীও দিয়েছিলেন তিনি। যার ভিডিও সে সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালও হয়েছিল। নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডের সাথে জড়িত হয়ে দলকে কলুষিত করা এই নান্নুকে দল
থেকে বহি:স্কারের দাবি তুলেছেন আ’লীগের তৃণমূল কর্মীরা।