রাজধানীতে উড়াল পথের পর এবার পাতাল পথে তৈরি হচ্ছে মেট্রোরেল। এর
মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ মেট্রো রেলের যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। দেশের অবকাঠামোগত
উন্নয়নে এটি এক নতুন মাইলফলক তৈরি করতে চলেছেন শেখ হাসিনা সরকার।
দেশে প্রথমবারের মতো নির্মিত হতে যাচ্ছে মাটির নীচ দিয়ে পাতালরেল। আজ
বৃহস্পতিবার এমআরটি লাইন-১ এর পাতালরেল নির্মাণকাজের উদ্বোধন করবেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকায় বেলা ১১টায় এর উদ্বোধন করবেন। ১৪ লেনের
পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে বরাবর কাঞ্চন সেতুর প্রায় এক কিলোমিটার দক্ষিণে পিতলগঞ্জ
গ্রামে দেশের প্রথম ভূগর্ভস্থ মেট্রোরেল, এমআরটি লাইন ১-এর ডিপো নির্মাণের সমস্ত
প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ৩৫ দশমিক ৯০ শতাংশ হেক্টর
জমিতে নির্মিত হচ্ছে এই ডিপো।
উদ্বোধনের পরপরই কাজ শুরু করতে ইতোমধ্যেই নির্মাণ সাইটে বিভিন্ন প্রকারের
নির্মাণ সামগ্রী জড় করতে শুরু করেছে জাপানের টোকিউ কনস্ট্রাকশন এবং স্থানীয়
ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার।এই দুই কোম্পানির যৌথ উদ্যোগেই শুরু হচ্ছে প্রকল্পের কাজ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুমানিক ৫২ হাজার ৫৬১ দশমিক ৪৩ শতাংশ কোটি
টাকার এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পটির কাজ উদ্বোধন করবেন। সরকার প্রথম ভূগর্ভস্থ
মেট্রো রেলের নির্মাণ কাজ এবং অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকান্ড প্রদর্শনে একটি জমকালো
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে যাচ্ছে।
আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ১০ লাখেরও বেশি লোকের
সমাগম করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। এ উপলক্ষ্যে ব্রাহ্মণখালী
উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। এই অনুষ্ঠান থেকে ৬ লেনের
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নির্মাণকাজও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে ঘিরে
রূপগঞ্জে নেতাকর্মী সমর্থকদের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রকল্প এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে এখন সাজ সাজ রব। প্রতিটি মোড়ে মোড়ে একাধিক
তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে।
রং বেরংয়ের ব্যানার, ফেস্টুন আর তোরণে ছেয়ে গেছে মহাসড়কসহ জেলা-
উপজেলার প্রধান সড়ক। প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে জেলা প্রশাসনসহ দলীয়
নেতাকর্মীরা এখন মহাব্যস্ত সময় পার করছেন।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভূইয়া সাজনু
জানান, প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে উন্মুখ হয়ে আছেন এখানকার সর্বস্তরের
মানুষ। আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি, প্রধানমন্ত্রীর আগমনের দিন সর্বোচ্চ
সংখ্যক নেতাকর্মী সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত
ভূগর্ভস্থ মেট্রোরেল, এমআরটি লাইন-১নির্মাণের অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক
পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এলিভেটেড লিঙ্কের মাধ্যমে এমআরটি লাইন-১
নতুনবাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্তও সংযুক্ত করবে।
প্রকল্পটির জন্য জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ৩ হাজার
৯৪৫০দশমিক ৩২ কোটি টাকা ঋণ (সফট লোন) দেবে, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের প্রায়
৭৫ শতাংশ। ৩১দশমিক ২৪১ কিলোমিটার রেললাইনে মোট স্টেশন থাকবে ১৯টি,
এরমধ্যে ১২টি ভূগর্ভস্থ।
এছাড়া, এ লাইনে প্রতিটি ৮ কোচ বিশিষ্ট মোট ২৫টি ট্রেন চলাচল করবে। মোট
১২টি প্যাকেজে বাস্তবায়ন করা হবে এই প্রকল্প। প্যাকেজ-১ এর মাধ্যমে ৩৫ দশমিক
৯০ হেক্টর জমির উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন হবে বৃহস্পতিবার।
টোকিউ কনস্ট্রাকশন এবং ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারের যৌথ এই উদ্যোগকে আনুমানিক
৬০৭.৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ের প্যাকেজ প্রদান করা হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন,
মেট্রো পরিষেবার প্রস্তাবিত এই লাইনে প্রতি ঘন্টায় ২৭ হাজার ৭৭০ জন যাত্রী সেবা
নিতে পারবেন এবং ২০২৫ সাল নাগাদ দৈনিক যাত্রীর সংখ্যা দাঁড়াবে ১৮ লাখ ৮৭
হাজার ২০০ জনে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) কর্মকর্তারা জানান, মেট্রো
রেল পরিষেবা চালুর পর কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত যেতে ১৩৯ মিনিটের
জায়গায় সময় লাগবে মাত্র ২৪.৩ মিনিট। অর্থাৎ, এই পরিষেবা প্রায় ৮৫ শতাংশ
সময় বাঁচাবে।
পূর্বাচল থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত ভ্রমণে ৭০ শতাংশ এবং পূর্বাচল থেকে কমলাপুর
পর্যন্ত ভ্রমণে ৮২ শতাংশ সময় বাঁচাবে এমআরটি লাইন-১।
এছাড়া, প্রস্তাবিত মেট্রোরেল রাজধানী শহরের যানজট অনেকাংশেই কমিয়ে আনবে
এবং নগরবাসীর সময় বাঁচবে বলে মন্তব্য করেন ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা
পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে প্রকল্পটিতে উড়াল ও পাতাল মেট্রোরেলের
সমন্বয়ে ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ। ২০২৬ সালে শেষ হবে নির্মাণ কাজ। পাতালরেল
চলবে বিমানবন্দর থেকে, খিলক্ষেত, নতুন বাজার, রামপুরা, রাজারবাগ হয়ে
কমলাপুর পর্যন্ত।
এই রুটে মোট ১২টি স্টেশন থেকে মাটির নীচ দিয়ে যাত্রীরা চলাচল করতে পারবেন
বলে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।