বিএনপি থেকে ফতুল্লা থানা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল আলম সেন্টুর ভূত যেন সরছেই না। বরং সময়ের পরিক্রমায় দলে আরো বেশি জেঁকে বসেছেন এই নব্য লীগার। এবার তার আপন দুই ভাইকে কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপ্র নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটিতে জায়গা করে দিয়ে তিনি যেন বুঝিয়ে দিলেন, বিএনপিতে তার প্রভাব ও মাইম্যান্প্র তিনিয়ত বাড়ছেই।
জানা যায়, শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপির ৫১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষিত হয়।
থানা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম টিটু ও সদস্য সচিব আব্দুল বারী ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে মো. বিল্লাল হোসেনকে। সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন মো. আনোয়ার হোসেন।
১৭ ও ১৮ নং সদস্য পদে যথাক্রমে রয়েছেন বহুল বিতর্কিত সেন্টুর আপন বড়ভাই মাজহারুল আলম মিথুন ও আপন ছোটভাই মামুন হাবিব। বিএনপির তৃনমূল পর্যায়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মী জানান, সেন্টুর ইচ্ছেতেই জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে, রাজপথে তুমুল সক্রিয় অনেক নেতাকে বাদ দিয়ে মিথুন-মামুনকে
কমিটিতে রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনোপ্রকার সিনিয়রিটিও মানা হয়নি। মিথুন ও মামুন দুজনেই ব্যবসায়ী। আন্দোলন- সংগ্রামে কখনোই তাদের দেখা যায়নি, বিএনপির কোনো ওয়ার্ড বা ইউনিট কমিটিরও সদস্য নন তারা। অথচ জেলা শ্রমিক
দলের সভাপতি মন্টু মেম্বার, জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান, সিনিয়র বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিন খান, আলিম উদ্দিন খন্দকার প্রমুখের নামের আগে রাখা হয়েছে তাদের দুজনের নাম। এ নিয়ে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে বিএনপি অভ্যন্তরে।
নেতাকর্মীরা আরো জানান, সেন্টুর ছোটভাই মামুন হাবিবের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও একেএম শামীম ওসমান এমপির ব্যাপক সমালোচনা
প্রকাশ্যেই করেন মামুন। বিএনপি শাসনামলে কুতুবপুরসহ ফতুল্লা অঞ্চলের ফেনসিডিল ব্যবসার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল মামুনের হাতে। তিনি ফেন্সি মামুন নামেও পরিচিত৷ নিয়মিত ফেনসিডিল সেবনেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া দল ক্ষমতায় থাকাকালীন সেন্টুর নাম ভাঙিয়ে ব্যাপক সন্ত্রাসী কর্মকা-, চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতায় লিপ্ত ছিলেন মামুন।
বর্তমানেও ভূমিদস্যুতায় জড়িত তিনি। পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি থাকাকালীন ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে সমালোচিত হন তিনি। তৎকালীন সময়ে ইউএনও কর্তৃক ভৎসনারও শিকার হন জনসম্মুখে।
সেন্টুর বড়ভাই মাজহারুল আলম মিথুন পাগলা বাজারের ব্যবসায়ী। দলে সক্রিয় না থেকেও তিনি কীভাবে পদ পেলেন তা নিয়ে কুতুবপুরে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
সেন্টু বিএনপি থেকে বহিস্কৃত নেতা। তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার দাবি করে থাকলেও এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। আওয়ামী লীগের কমিটিগুলোর সর্বশেষ ধাপ অর্থাৎ ইউনিট কমিটিতেও সদস্য পদেও নেই সেন্টু। মূলত যেকোনো
মূল্যে চেয়ারম্যান পদটি ধরে রাখার মিশনে থাকা সেন্টু প্রভাবশালী মহলকে ম্যানেজ করে গত ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক বাগিয়ে নেন। জনশ্রুতি রয়েছে, এজন্য তাকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে উপরমহলে। অথচ পুরোদস্তুর বিএনপির সেন্টু হিসেবেই তাকে চেনে সবাই, ছিলেন থানা বিএনপির দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে। একসময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অংশ নিয়েছেন সংঘর্ষে। সেন্টুর বিরুদ্ধে তৎ তৎকালীন আলোচিত ছাত্রলীগ নেতা শফিকুর রহমান মেছের হত্যা, পাগলা বাজারে আওয়ামী লীগের মিছিলে প্রকাশ্যে গুলি করে এক যুবলীগ নেতাকে হত্যাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অত্যাচার- নির্যাতন, হামলার অভিযোগে মামলা রয়েছে। এছাড়া ২০১৪ সালে বিএনপি জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াও, নাশকতা মামলারও আসামি তিনি।
একাধিক সূত্র জানায়, থানা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম টিটু, যুগ্ম আহ্বায়ক হাজী শহীদুল্লাহ, ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক বিল্লাল হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক বাবুল আহমেদ, নজরুল ইসলাম মাতবর, তারিকুল ইসলাম খান, আশরাফুল আলম
হিমেলসহ অন্যান্যদের প্রায় সকলেই মূলত সেন্টুর লোক। সেন্টুর সুপারিশেই সিনিয়র এডভোকেট ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আব্দুল বারী ভূঁইয়াকে পেছনে ফেলে, সিনিয়রটি লঙ্ঘন করে টিটুকে থানা বিএনপির আহ্বায়ক করা হয়। অথচ রাজনৈতিক
ব্যাকগ্রাউন্ড, দলের প্রতি আনুগত্য, যোগ্যতা, অবদানের দিক দিয়ে নোয়াখালীর টিটুর চেয়ে বারী ভূঁইয়া অনেক এগিয়ে বলে মতামত বোদ্ধামহলের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেবল চেয়ারম্যান পদ টিকিয়ে রাখতেই সেন্টু প্রকাশ্যে বিএনপির কমিটিতে আসছেন না, কিন্তু সেন্টুর হাত ধরেই সংগঠিত হচ্ছে দলটি। এর সর্বশেষ প্রমাণ মিলেছে ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে তার আপন দুই ভাইয়ের
অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে। তবে নৌকার চেয়ারম্যান বিএনপ্#ি৩৯;র শুভাকাঙ্খী সেন্টু আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী মহলের আস্থায় ঠিক কতদিন থাকতে পারেন সেটিই এখন দেখার বিষয়।