নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় ৮০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা কার্যালয়ের অডিটোরিয়াম হলরুমে দিনব্যাপী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (এসইডিপি) অন্তর্ভুক্ত স্ট্রেংদেনিং রিডিং হ্যাবিট অ্যান্ড রিডিং স্কিলস অ্যামাং সেকেন্ডারি স্টুডেন্টস স্কিম-এর আওতায় পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার জনাব মো. রিফাত ফেরদৌসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেলিনা জামান, উপ পরিচালক (মনিটরিং এন্ড ইভালুয়েশান), মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।
এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান এবং সংগঠকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এসএম আবু তালেব। কর্মশালার বিষয়বস্তু এবং উদ্দেশ্য তুলে ধরে স্বাগত বক্তব্যে তিনি বই পড়ার গুরুত্বের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে এই কর্মসূচিটি সফলভাবে পরিচালনার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সহকারী শিক্ষকদের সহযোগিতা আহ্বান করেন।
তাঁরা বক্তব্যের প্রথমে বিশ্বসাহিত্যকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এই পাঠাভ্যাস কর্মসূচি চালু করার জন্য। এরপর তিনি শিক্ষার্থীদের মাঝে বই পড়ার গুরুত্ব তুলে ধরেন ও বর্তমান সমাজের পরিবর্তনে বইয়ের ভূমিকা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা বই পড়ে তাদের মেধা ও মননের বিকাশের পাশাপাশি নিজেদের মানবীয় গুণাবলি সমৃদ্ধ গড়ে তুলবে যা আমাদের দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর হবে এবং বই বাস্তব জীবনের সন্ধান দেয়।
কর্মশালায় বিশেষ অতিথি নারায়ণগঞ্জ জেলা অফিসার মো. শরিফুল ইসলাম পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির বিভিন্ন বিষয়ের উপর দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন শিক্ষার্থীরা বই পড়ে তাদের মেধা ও মননের বিকাশের পাশাপাশি নিজেদের মানবীয় গুণাবলি সমৃদ্ধ গড়ে তুলবে যা আমাদের দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর হবে।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মনিটরিং এন্ড ইভালুয়েশন বিভাগের উপ-পরিচালক জনাব সেলিনা জামান তাঁর বক্তব্যে বলেন, তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহারের ফলে বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মাঝে বই পড়ার আগ্রহ কমে গেছে। এই কর্মসূচির দ্বারা শিক্ষার্থীদের মাঝে বই পড়ার পাশাপাশি পাঠ দক্ষতাও বৃদ্ধি পাবে।
সারাদেশের ৩০০ উপজেলার ২৫ লক্ষ শিক্ষার্থী এই কর্মসূচির আওতায় থাকবে। তিনি আরো বলেন, কর্মসূচির বই পড়ে শিক্ষার্থীদের চিন্তার দ্বার খুলে যাবে, দৃষ্টিভঙ্গি বড়ো হবে। ভালো মন্দ বই বলে কিছু নেই। সব বই থেকেই শিক্ষনীয় বিষয় আছে।
উন্নত বিশ্বে নেতৃত্ব দিবে যে প্রজন্ম তাদের গড়ে তুলতে আমাদের পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি’ সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। তিনি শিক্ষকদের আহবান জানান শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ বৃদ্ধি করতে। উপজেলাার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে তিনি সার্বিক সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।
উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালার মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপনের মাধ্যমে ‘পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি’র কর্মপরিকল্পনা, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তুলে ধরেন মো. মারুফ হোসেন, টিম ম্যানেজার, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। তিনি বলেন, উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালার অন্যতম উদ্দেশ্য মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তাদের মন এবং বয়স উপযোগী বই পড়ায় আগ্রহী করে তোলা। পাঠাভ্যাসের প্রসার ও সুযোগ বৃদ্ধি করা।
কর্মসূচি পরিচালনার জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন, বইপড়া শেষে মূল্যায়নের ভিত্তিতে পুরস্কার প্রদান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লাইব্রেরি টেকসই ও কার্যকর করার লক্ষ্যে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।
এরপর ২০২৩ সালে কর্মসূচি বাস্তবায়নের কর্মপরিকল্পনা সভায় উপস্থাপন করেন ফৌজিয়া আক্তার রিতা, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি।
কর্মশালায় সভাপতি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার জনাব মো. রিফাত ফেরদৌস। সভাপতি তাঁর বক্তব্যে বলেন, বই হলো সেই মাধ্যম যা শিক্ষার্থীদের সফল মানুষ হতে ও বড়ো স্বপ্নের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে।
এমনকি বই পড়ার একটা প্রভাব আমরা তার একাডেমিক পড়ার মাঝেও দেখতে পাবো। তাদের সৃজনশীলতা ও বুঝার দক্ষতা বাড়লে সেটা তাদের একাডেমিক পড়া আত্মস্থ করতেও সহায়ক হয়ে উঠবে এবং এই শিক্ষার্থীরাই পরে অনেক দূর যেতে পারে।
বই পড়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কল্পনাশক্তি বাড়ে, স্বাধীনচেতা হয়ে উঠে এবং তাদের ন্যায়- অন্যায়, বিবেকবোধ জাগ্রত হয়, তারা মানবিক বোধ সম্পন্ন হয়ে গড়ে উঠতে পারে ।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বাংলাদেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মাঝে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার আন্দোলন করে আসছেন।
তিনি আরো বলেন, এমন সুন্দর উদ্যোগ গ্রহণের ফলে মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বইপড়ার আগ্রহ ও সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। ভবিষ্যতে পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের সকল কাজে সার্বিক সহযোগিতা করবেন বলে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন এবং কর্মসূচির সফলতা কামনা করে কর্মশালার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
কর্মশালায় আরো উপস্থিত ছিলেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাজ্জাত হোসেন, উম্মে কুলসুম, সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জনাব মো. আবদুল গণি, একাডেমিক সুপারভাইজার জনাব এইচ এম এ আবদুল মালেক ।