সিদ্ধিরগঞ্জে নাসিক ১নং ওয়ার্ডে বেশ কয়েক বছর ধরে গড়ে উঠছে ভুমিদস্যু বাহিনী। এ ওয়ার্ডের মিজমিজি, পুর্বপাড়া, দক্ষিণ মজিববাগ, আলামিন নগর
এলাকায় বিভিন্ন নিরহ মানুষের জমি নিয়ে জোড় দখলের পায়তারা চলছে।
ভূমিদস্যুর অবাধ বিচরণ বেড়েছে এসব এলাকায়। তারা চাঁদাবাজি, জমি দখল,
ডাকাতি, মারামারিসহনানা অপকর্মে জড়িত। এসব ভুমিদস্যু বাহিনীর অধিকাংশ
সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন
অপরাধমূলক কর্মকান্ডের অপরাধে জেলও খেটেছে। একক আধিপত্য বিস্তারে নাসিক
১নং ওয়ার্ডসহ পুরো এলাকা জুড়ে তারা গড়ে তুলেছেন বিশাল বাহিনী। রয়েছে
তাদের নিজস্ব বিচার ব্যবস্থা। এভাবে অপরাধ সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে।
সিদ্ধিরগঞ্জের প্রভাবশালীদের নাম ব্যবহার করে রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাহিরে। এসব
বাহিনীতে রয়েছে ভাড়াটে মাস্তান ও সন্ত্রাসী। এদের অধিকাংশই এলাকার চিহ্নিত
অপরাধী।
এ বাহিনীর নজর যার জমির ওপর পড়েছে, সেই জমি ও পরিবারকে নিঃস্ব করেছে।
এ বাহিনীর কাছে শুধু সাধারণ মানুষই যে জিম্মি, তা নয়। জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু
করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও তাদের থাবা থেকে রেহাই পাননি! পুরো এলাকায়
রয়েছে তাদের অবাধ বিচরণ। বর্তমানে নাসিক ১ নং ওয়ার্ডে এভাবেই অভিযুক্ত
বিএনপি নেতা সালাউদ্দীন ও শাহাজালাল সাজু ওরফে ল্যাংড়া সাজু তার ক্যাডার
বাহিনী। তাদের রামরাজত্বে দিশেহারা সাধারণ মানুষ।
তাদের বাহিনীর সদস্যরা হলো- হলো মিজমিজি পূর্বপাড়া এলাকার আব্দুল মান্নানের
ছেলে শাহজালাল সাজু ওরফে ল্যাংড়া সাজু (৩৮), মৃত আলাউদ্দিন ভূইয়ার ছেলে
নূর কামাল (৪০), জজ মিয়ার ছেলে বাবু ওরফে কাইল্লা বাবু (৩০), সানাড়পাড়
এলাকার শহিদ উল্লাহর ছেলে আব্দুল কাইয়ুম (৩৬), বাতেনপাড়া এলাকার মফিজ
উদ্দিনের ছেলে মো. সুমন (৪০) এবং শিমরাইল এলাকার মো. কামালের ছেলে মো.
সারোয়ার (৩৮) সহ অজ্ঞাত কয়েকজন।
এছাড়াও রয়েছে মিজমিজি পশ্চিম মধ্যপাড়া এলাকার মো. কোরবান মিয়ার ছেলে
মো. বোরহান উদ্দিন (৪৫), মো. বোরহান উদ্দিনের স্ত্রী মোসা: শামীমা বেগম
(৩৮), মো. হাসান মিয়া বেপারী (৪০), আমির হোসেন বেপারীর ছেলে মো. দুলাল
মিয়া বেপারী (৪৩), শাহিনুর বেগম (৩২), হাজী রুস্তম মোল্লার ছেলে মো. রফিক
আহম্মেদ (৪৪), সুরুজ মিয়ার ছেলে মো. আব্দুল আউয়াল (৪৫), হাজী রুস্তম মোল্লার ছেলে আজগর আলী মোল্লা (৪৫), মোঃ রবিউল (৩৯), রাজ্জাক মিয়ার ছেলে মোজাম্মেল (৩৮), খলিল মিয়ার ছেলে মো: আলমগীর হোসেন (৪০) ও মৃত আমির হোসেনের ছেলে মোঃ সালাহ উদ্দিন (৩৫)।
অভিযুক্ত সালাউদ্দিন সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পাগলাবাড়ি এলাকার মৃত আমির
হোসেনের ছেলে। নানা অপকর্মে জড়িত এবং বিতর্কিত সালাউদ্দিনের অত্যাচারে
অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন এলাকাবাসী।
বিভিন্ন অপরাধ ও অপকর্ম করে প্রয়সমই পত্রিকার শিরোনাম হতে দেখা গেছে
ভূমিদস্যু, ফুটপাতের চাঁদাবাজ সালাউদ্দিনকে। সম্প্রতি অন্যের জমি জোরপূর্বক
দখলের চেষ্টা ও পঞ্চাশ লাখ টাকা চাঁদা দাবি এবং অপহরণের পর হত্যার হুমকির
ঘটনায় সালাউদ্দিনসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অভিযোগ (অভিযোগ
নং-৭৩১) দায়ের করেছেন এক ভুক্তভোগী।
কিছুদিন পূর্বে সিদ্ধিরগঞ্জপুলস্থ ফুটপাতে চাঁদাবাজির ঘটনায় সালাউদ্দিনকে আটক
করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরবর্তীতে থানা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের
তদবিরে ছাড়া পান চাঁদাবাজ সালাউদ্দিন।
সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির বিতর্কিত নেতা সালাউদ্দিন ১৯৯৮ সালে একটি ট্রাক
বোঝাই ভারতীয় কাপড়ের চালান ডাকাতি করে সিদ্ধিরগঞ্জের সিআই খোলা
এলাকায় রাখেন। পরবর্তীতে রাজধানী ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থা ডিবি পুলিশ
সালাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে মালামাল উদ্ধার করেন। কাপড় উদ্ধার করলেও তার
বেশ কিছুদিন পর কাপড় বহনকারী ওই ট্রাকটি জয়দেবপুর থেকে উদ্ধার করা হয়।
বর্তমানে এখনো সেই ডাকাতি মামলা আাদলতে চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।
ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর ছয় মাসের সাজা হয় সালাউদ্দিনের।
এসময় স্বীকারোক্তির জন্য সালাউদ্দিনকে ৭ দিনের রিমান্ডেও আনেন ডিবি পুলিশ।
দীর্ঘ ছয় মাস পর জামিনে বেরিয়ে এলাকায় এসে ত্রাসের রাজত্ব শুরু করেন। তার
ক্যাডার বাহিনী দিয়ে শুরু করে ভুমিদস্যুতা, চাঁদাবাজি ও মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করে
মোটা অংকের টাকা কামানোসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ড।
আরও জানা যায়, এই সালাউদ্দিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মোজাম্মেল ২০১২ সালে
মিজমিজি পাগলা বাড়ী এলাকার বাবুলের বাড়ির ভাড়াটিয়া আশা সমিতির
ম্যানেজারের মোবাইল চুরি করে থানা পুলিশের কাছে গ্রেফতার হন।
এদিকে এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শাহজালাল সাজু বিগত ২০১৬ সালে
ডাকাতি মামলায় জেল খেটেছে। তার বাসা থেকে ডাকতির মালামাল উদ্ধার
করেছিল প্রশাসন। মামলায় দীর্ঘ ৯ মাস জেল খেটেছে সে। ২০১৯ সালের মিজমিজি
পূর্বপাড়া এলাকায় ছেলে ধরা সন্দেহে এলাকাবাসীর গণধোলাইয়ে বাক প্রতিবন্ধি
সিরাজ হত্যা মামলার ১১ নাম্বার আসামী সাজু।
এছাড়াও সে একাধিক মামলার আসামি। ডাকাতি মামলার আসামি ভূমিদস্যু
শাহজালাল সাজু ওরফে লেংড়া সাজু গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর মিজমিজি পূর্বপাড়া
ক্যানেলপাড় এলাকায় হিজড়া দিয়ে মোসাঃ মোমেলা নামের এক বৃদ্ধ নারীর পৈতৃক
সম্পত্তিকে নিজের সম্পত্তি দাবি করে জোরপূর্বক দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে।
এর আগে বিগত ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার
বরাবর সাজু বাহিনীর সাজু, গোলাম হোসেন, নুরুল হক, বকুল, মন্টুদের বিরুদ্ধে
জমি দখলের অভিযোগ দিয়েছিলেন ভুক্তভোগী মোমেলা।
তাছাড়া বাবু ওরফে কাইল্লা বাবু এক সময় সিদ্ধিরগঞ্জ পুলে দোকান-পাট থেকে চাঁদা
উত্তোলন করতো। তার বিরুদ্ধে চাদাবাজি, মাদক সহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
নূর কামালের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া
এলাকাবাসীর কাছ থেকে। একাধিক নিরীহ মানুষ নূর কামালের কাছে টাকা পাবে
বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। সে তাদের টাকা ফেরৎ দিচ্ছেনা।
এ বিষয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগ তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা। প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ
কামনা করেন এলাকাবাসী।