সিদ্ধিরগঞ্জে আবাসিক এলাকায় পরিবেশ দূষণকারী চুনাভাট্টিগুলোতে দিনরাত জ্বলছে আগুন। আগুনে সৃষ্ট কালো ধোঁয়ার কু-লীর সঙ্গে উড়ছে ছাই। এই ধোঁয়ার কু-লীর
কারণে আশপাশের মানুষের জীবন অতিষ্ঠ। চুনাভাট্টির গ্যাসের কারণে নিশ্বাস নেওয়া কষ্টকর। দম বন্ধ হয়ে আসে। আশপাশের বাসিন্দাদের কমবেশি প্রায় সবার শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে। এরফলে ওই এলাকার পাঁচ লাখ মানুষের জীবনযাপন হুমকির মুখে পড়েছে। নানান রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে বাসিন্দারা। স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা।
পরিবেশ দূষণ রক্ষার্থে গত তিন বছর ধরে পরিবশে অধিদপ্তর ছাড়পত্র নবায়ন না করে আবাসিক এলাকা থেকে কারখানা সরিয়ে নিতে দিয়েছে একাধিক নোটিশ। এরকারণে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনও নবায়ন করছেন না ট্রেড লাইসেন্স। তবুও অদৃশ্য পন্থায় অবৈধভাবে চলছে পরিবেশ দূষণকারী চৌদ্দটি চুনাভাট্টি। চুন প্রস্তুতকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় আবাসিক এলাকায় নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও পরিবেশ নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই চুন তৈরি করে যাচ্ছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গ্যাসের আগুন যখন দাউ দাউ করে জ্বলে, তখন গন্ধ আর তাপে ঘরে থাকাই দায় হয়ে যায়। স্বাভাবিক নিঃশ্বাস নেওয়া যায় না। দিনের বেলায় গ্যাসের লাইন থেকে গ্যাস ব্যবহার করে চুনা পোড়ালেও রাতের বেলায় অবৈধভাবে
গ্যাস পুড়িয়ে মাত্র কয়েক বছরেই অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন এসকল চুনাভাট্টির মালিকরা। বৈধভাবে দুই ইঞ্চি একটি লাইন সংযোগ দেওয়া থাকলেও প্রতিটি কারখানাতে গোপনে আরেকটি অবৈধ লাইন সংযোগ রয়েছে। এতে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পরিবেশের ছাড়পত্র ও ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন না হওয়ায় কারখানাগুলো বৈধতা হারালেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর, স্থানীয়
প্রশাসন ও বিভিন্ন মহলকে অবৈধভাবে ম্যানেজ করে চালানো হচ্ছে এসব অবৈধ চুনাভাট্টি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের সিআইখোলা কাঠের পুলে নাসিক ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলামের মেসার্স জাজিরা লাইমস্ধসঢ়;, চিটাগাংরোড ঢাকা-
চট্টগ্রাম মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে ডাচ বাংলা ব্যাংকের পশ্চিমে মনির হোসেন বাবুলের এমসার্স ফয়সাল লাইমস, হীরাঝিলে ইউনুস মিয়ার মেসার্স মদিনা লাইমস, হাজী জালাল উদ্দিনের (মৃত) মেসার্স সুরমা লাইমস, আটি এলাকায় নারায়ণগঞ্জ-শিমরাইল সড়ক সংলগ্ন আব্দুল হাইর মেসার্স মেঘনা লাইমস, ওয়াপদা রোর্ড ডিএনডি পানি নিস্কাশন খালের দক্ষিন পাশে সোহেলের মেসার্স খাজা লাইমস, আটি
ছাপাখানা রোডে আমির হোসেনের মেসার্স বাদশা লাইমস, মক্কীনগর এলাকায় খোরশেদের মেসার্স ঢাকা লাইমস, মিজমিজি পূর্বপাড়া কাঠের পুল এলাকায় শহিদ হাসান বিটু ও আবুল বাশারের মেসার্স রহমান লাইমস, মিজমিজি পূর্বপাড়ায় শফিউল্লার মেসার্স শরীফ লাইমসসহ চৌদ্দটি চুনাভাট্টি চলছে অবৈধভাবে।
এসব চুনাভাট্টিতে পাথর পুড়িয়ে চুনা তৈরি করতে সারাক্ষণ জ্বলে আগুন। ফলে উদগিরণ হয় দূষিত ধোঁয়া। পাথর পুড়ানোর পর চুনের ডাস্ট (পাউডার) বাতাসে উড়ে আশপাশ এলাকা হয়ে পড়ে ধোঁয়াছন্ন। এতে দূষিত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ। ডাস্ট ও ধোঁয়া দুইটিই জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তিতাসের সার্কুলার অমান্য করে অনেক কারখানাতে ছাদ না দিয়ে খোলা আকাশে পুড়ানো হচ্ছে পাথর। যা সম্পূর্ণ নীতিবহির্ভূত।
তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের সার্কুলার মতে নির্ধারিত সাইজ চুনা পোড়ানোর নিয়ম অমান্য করে প্রতিটি চুনা ভাটি গুলোতে কয়েকগুন বেশি চুনা পাথর পুড়ানো হচ্ছে। তিতাস কর্তৃপক্ষের সার্কুলার থাকা সত্তেও তা কার্যকর নেই।
রহস্যজনক কারনে সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষ কারখানার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না। সিআইখোলার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী জানান, এলাকার
পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ চুনা কারখনা। ডাস্ট ও ধোঁয়ার জন্য বাসা বাড়ীতে ঠিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় মালিকরা তাদের মনগড়া মতো কারখানা চালাচ্ছেন।
হীরাঝিল এলাকার বাসিন্দা এবাদুর রহমান জানান, আবাসিক এলাকায় জনস্বাস্থ্য ক্ষতিকর চুনাভাট্টির মালিকরা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা পরিচালনা করে আসলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না স্থানীয় প্রশাসন। প্রশাসনকে বিষয়টি
করার পরও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। তাই এই এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় বাড়ি স্থানান্তরের চিন্তা ভাবনা করছি আমরা। চুনাভাট্টির বৈধতা না থাকা সত্তেও কিভাবে চলছে এবিষয়ে কথা বলতে রাজি নয় চুনাভাট্টির মালিকরা। তবে চুনাভাট্টি
স্থানান্তরে পরিবেশ অধিদপ্তরের চিঠি ও ছাড়পত্র নবায়ন না করার সত্যতা স্বীকার করেছেন অনেকই।
মেসার্স জাজিরা লাইমসের মালিক নাসিক এক নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলাম বলেন, চুনাভাট্টি করার সময় এলাকায় বসতি ছিলনা। এখন হয়েছে। তবে সরকার চাইলে কারখানা সরিয়ে নেব। কিন্তু কোথায় নেব সেই দিক নির্দেশনা ও স্থান নির্দারণ করে দিচ্ছেন না কর্তৃপক্ষ। উপযুক্ত জমি ও পরিবেশ পেলে অবশ্যই কারখানা সরিয়ে নেওয়া হবে।
নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এসব চুনাভাট্টিকে সরিয়ে নেয়ার জন্য বিভিন্ন মেয়াদে সময় দেয়া হয়েছিল। সরিয়ে না নেওয়ার বিষয়টি প্রধান কার্যালয়কে অবগত করেছি। এসব চুনাভাট্টির গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কাজ প্রক্রিয়াধিন রয়েছে। দ্রুত সময়ে অভিযান চালানো হবে।