নারায়নগঞ্জ আাদলত চত্বরের সামনে ঢাকা-নারায়নগঞ্জ লিং রোডের ওপরে সকালে দেখা যায় নীল রংয়ের (পুলিশ লেখা) একটি লক্কড়ঝক্কড় গাড়িতে টহল দিচ্ছেন থানার চার-পাঁচজন পুলিশ সদস্য। গাড়িটির রং নষ্ট হয়ে গেছে। সামনের দুটি হেডলাইট আছে, কিন্তু ডানে-বাঁয়ে মোড় নির্দেশক বাতি নেই।
ইঞ্জিনের সামনের অংশ ভাঙা। কয়েক জায়গায় তার দিয়ে বাঁধা। কিছু অংশে ঝালাই দেওয়া। চলছে খুব ধীরগতিতে। সামনের দুই দরজাও নড়বড়ে। চালক জানান, গাড়িটি ১৫ থেকে ২০ বছরের পুরোনো। মাঝেমধ্যেই পথে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। তখন ধাক্কা দিয়ে চালু করতে হয়।
টহলের নেতৃত্বে থাকা পুলিশের এক উপপরিদর্শক বলেন, ‘গাড়ির ফিটনেস নেই, আমরাও জানি। কিন্তু কিছু করার নাই। থানা থেকে যে গাড়ি দেবে, তাতেই ডিউটি করতে বাধ্য আমরা।’
এই চিত্র ফতুল্লা মডেল থানার। তথ্য মিলে, ফতুল্লা মডেল থানায় মোট দুটি গাড়ি আছে। একটি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) যা প্রায় সময় ভি,আই,পি ডিউটিতে ব্যবহৃত হয়। বাকি একটি টহলের। যা লক্কর-ঝক্কর মার্কা। যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দূর্ঘটনা।
এটি একেবারেই পুরোনো। কাগজপত্রের ঠিক নেই। এক পুলিশ সদস্য বলেন, এ গাড়ী বহু পুরানো। ফিটনেস নাই। কাগজপত্র আর কী ঠিক থাকব। বেশির ভাগ সময়ই নষ্ট থাকে। তখন বাইরে থেকে গাড়ি নিয়া ডিউটিতে যেতে হয়।’ অপর এক পুলিশ সদস্য (এসআই) জানান, গত কয়েকদিন পূর্বে নিয়মিত টইল ডিউটি করার সময় গাড়ীর দরজা রশি দিয়ে বাধতে ভুলে যাওয়ায় গাড়ী টার্ন করার সময় দরজা খুলে তিনি রাস্তায় পরে যান। এতে তিনি সামান্য আহত হন।
তিনি আরো জানান, গাড়ীর স্প্রিড ২০ কিলোর ওপরে না উঠায় তিনি বড় ধরনের দূর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফতুল্লা মডেল থানার মোট ১০ টি টহল দল কাজ করে। এর মধ্যে ফতুল্লা মডেল থানার নিজস্ব গাড়ি আছে দুটি । দুটির মধ্যে নিয়মিত টইলের জন্য ব্যবহৃত হয় একটি আর রিকুইজিশন করে আনতে হয় আরও ৯ টি গাড়ি।
লেগুনা, সিএনজি এবং অটোরিক্সা নিয়ে টইল দিতে দেখা যায় পুলিশ সদস্যদের। বিশেষ করে রাতে তাদের এ দৃশ্য দেখা যায়। গাড়ীর জন্য তাদের সড়কে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। রিকুইজিশন গাড়ী পেতে তাদের রাস্তায় দাড়িয়ে থেকে গাড়ি নিয়ে তারপর টইলে বের হতে হয়। কোন এক এলাকায় অপরাধ সংগঠিত হয়েছে বা হচ্ছে স ক্ষেত্রে সংবাদ পেলেও গাড়ীর জন্য বা গাড়ী রিকুইজিশন করতে বিলম্ব হওয়ায় নির্দিস্ট সময়ের মধ্যে সেখানে যেতে পারছেনা পুলিশ সদস্যরা। ফলে সঠিক সময়ে সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে পুলিশ।
ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ রিজাউল হক দিপু বলেন, ফতুল্লা এক জনবহুল এলাকা এখানে প্রায় ৫০ লাখেরও অধিক লোকের বসবাস। সেই অর্ধকোটি মানুষের নিরাপত্তায় দ্ধায়িত্বে ওসি,দারোগা,সহকারী দারোগা,কনেস্টবল নিয়ে ১২০ পুলিশ সদস্য কাজ করছে।
আমরা আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছি এলাকার জনগনের সেবা দেওয়ার জন্য। কিন্তু এ থানায় গাড়ি সংকটের কারনে দ্রুত তাদের সেবা দিতে পারছিনা। এই জনবহুল এলাকায় জনসেবা নিয়মিত টইলের জন্য ফতুল্লা মডেল থানায় গাড়ি মাত্র একটি। প্রতিদিন এ থানা থেকে টহল টিম বের হয় ১৫টি।
প্রতিদিন ডিউটিরত টিম রাস্তায় দাড়িয়ে থাকতে হয়বঅটোরিক্সা, সিএনজির জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা। ফলে সেবা ঠিক মতো দিতে ব্যর্থ হচ্ছি। থানায় কিছু গাড়ি হলে জনগনের সেবা দিতে আমার তেমন কোন অসুবিধা হবেনা।
এ বিষয়ে নারায়নগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক অঞ্চল) নাজমুল হাসান জানায়,গাড়ী সংকট ও পুলিশ সদস্যদের সংখ্যা অনেক কম, আমরা এ বিষয়টি পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের অবগত করেছি, তাঁরা দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।