শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বস্ত্র, সবজি, চাল-ডাল, ডিজেল-বিদ্যুৎ, মাছ- মাংস,ঔষধসহ পরিবহন থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসের দাম বেড়ে বিপাকে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার সাধারণ মানুষ।
নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীন বেড়েই চলেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন অনেকের।
আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় ধার-দেনায় চলছে সংসার। অনেক চাকরিজীবী আবার চড়াসুদে আগাম চেক বিক্রি করেও সংসারের চাহিদা মিটাচ্ছে। তাই নিত্যপণের দামের সঙ্গে বাড়ছে মানুষের ঋণের বোঝা।
সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার কাঁচাবাজারগুলোতে মাছ- মাংসের দাম চড়া। সবজির দামও ঊর্ধ্বমুখী। চিনি, আটা, ময়দা আগের বাড়তি দামে আটকে থাকলেও নতুন করে বেড়েছে ডাল ও ছোলার দাম। আগে যেখানে গরুর মাংস ছিল ৬০০ টাকা এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা দরে। গাউছিয়া কাঁচাবাজারের কসাই আব্দুল আলী মোল্লা বলেন, বাজারের যা অবস্থা, ব্যবসা আর নাই জনগণ গোস্ত কেনে না।
আগে ৪ থেকে ৫টা গরু জবাই হলেও এখন জবাই হয় ৩ থেকে ২টা আর খাসির মাংসের দাম প্রতি কেজি ৯০০ থেকে ১১০০ টাকা। খাসির মাংস বিক্রেতা আব্দুল জলিল বলেন, আগে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০টা জবাই করতাম এখন আমরা ৫ থেকে ৭টা খাসি জবাই করি।
কী করে যে সংসার চলবে মাথায় কাজ করে না। এদিকে বাজারে সব রকম
মাছের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। উত্তাপ ছড়াচ্ছে মুরগির দামেও। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ৩০ টাকা, আগে ছিল ২২০ টাকা এখন ২৫০ টাকা পাকিস্তানি মুরগি কেজিতে ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হলেও দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৪৬০ টাকা কেজি।
এদিকে ব্রয়লারের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা হালি যা আগের তুলনায় হালিতে ৫ টাকা বেশি। হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা হালি আর দেশি মুরগির ডিম ৭৫ টাকা হালি।
চাল নিয়েতো চালের বাজারে তো চালবাজি হচ্ছেই। গুটি স্বর্ণ ৪৫ টাকা কেজি, স্বর্ণ ৫০ টাকা কেজি, আটাশ চাল ৬০ টাকা কেজি, মিনিকেট ৭০ টাকা, নাজিরশাইল ৮০ টাকা কেজি, কাটারিভোগ ১১০ টাকা কেজি, আতব চাল মোটা ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি, আতব (কালিজিরা) ও আতব (চিনিগুঁড়া) ১২৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। চাল ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, চালের দাম বৃদ্ধির কারণে চাকরিজীবী,
শ্রমজিবী থেকে শুরু করে সকলেই চিকন চালের পরির্বতে মোটা চাল কিনছেন।
প্রতি কেজি মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা আর চিঁড়ার কেজি ৬০ টাকা। দাম কমেনি সবজিরও মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা কেজি, আলু ২৫ টাকা কেজি , পিয়াজ ৩৫ টাকা কেজি, আদা ১২০, রসুন ১০০ টাকা কেজি , কাঁচামরিচের কেজি ১২০ টাকা আর শুকনা মরিচ ৫০০ টাকা কেজি, পেঁপে ২০ টাকা, টমেটো ৩৫ টাকা, পটোল ৮০ টাকা, ফুল কপি ৩০ টাকা, বাঁধাকপি ৩০ টাকা পিস, করলা ৮০ টাকা, গাজর
৩০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০ টাকা, শসা ৩০ টাকা, বেগুন ৪০ টাকা কেজি, চালকুমড়া ৩৫ টাকা পিস, লাউ ২৫ টাকা পিস, আর সজনা বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজি। এদিকে মসলার দামও কিছুতেই কমছে না।
জিরা ৬০০ টাকা কেজি , ফল মসলা ৯০০ টাকা কেজি, সাদা এলাচ ১৬০০ টাকা কেজি, ডালচিনি ৩০০ টাকা, গোলমরিচ ৬০০ টাকা কেজি, জয়ফল ১০ টাকা পিস। সব ধরনের ফলও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি আপেল বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৬০ টাকা, কমলার কেজি ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা, আঙ্ধসঢ়;গুর (সাদা) ২৫০ টাকা কেজি, আঙ্ধসঢ়;গুর (কালা) ৪৫০ টাকা কেজি, আনারস ৬০ টাকা কেজি, বেদানা ৪৫০ টাকা, পেয়ারার কেজি ৬০ টাকা, বড়ই ৬০ টাকা কেজি,খেজুরের দামও বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কিসমিস, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, পোস্তাবাদাম এবং চেরি ফলও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
কামরুল ইসলাম নামে একজন চাকুরীজিবী বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় সব দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে আমার যা অবস্থা আগেতো মাসে কখনো ১৫ দিনে মাংস কিনতাম এখন আর কিনতে পারবো কিনা জানি না। গরু-খাসির মাংস এখন বিলাসী পণ্য নিম্নবিত্তরা তো অনেক আগেই ভুলে গেছে এখন আমরাও বিদায় জানাচ্ছি ভালো থেকো গোস্ত।
করিমউল্লাহ নামের একজন বৃদ্ধা বলেন, এতোদিন রিকশাচালক ছেলের হাড়িতে খেয়ে কোনোমতে জীবন পার করতাম। এখন সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় ছেলেটা তেমন সংসার চালাতে পারছে না। তাই আমি ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমেছি। কারুন অনেক ঋণে পড়ে গেছি। ফায়েজ আলী নামের এক দিনমজুর বলেন, ‘আমার ৭ সদস্যের সংসার। বর্তমানে যেভাবে জিনিপত্রের দাম বেড়েছে, সেভাবে আয় বাড়েনি। এর
আগে করোনা ধকল না সামলাতেই এখন জিনিপত্রের বেসামাল দামে দিনে দিনে সংসারে ঋণের বোঝা ভারী হচ্ছে।
কৃষক আমির হোসেন জানান, ধানসহ অন্যান্য কৃষি ফসল উৎপাদনে পরিবারের মৌলিক চাহিদাপূরণ করে আসছিলেন। এরই মধ্যে কৃষিপণ্যসহ সার-কীটনাশক, বিদ্যুৎ-ডিজেলের অস্বাভাবিক দামের কারণে চরম হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। নাম না বলা শর্তে এক সমাজসেবক বলেন, আগের তুলনায় মানুষের আয় বেড়েছে। কিন্তু জীবনযাত্রায় ব্যয়ও বেড়েছে অনেকটাই। তাই গ্রামীণ পর্যায়ে সহজ শর্তে ঋণদানসহ বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো দরকার।