এক সময়ে নারায়ণগঞ্জের সকল অপকর্মের কেন্দ্রবিন্দু ছিলো টানবাজার
র্যালিবাগান। এখানে মাদক ব্যবসা ও খুন খারাপি থেকে শুরু করে এমন কোন
অপকর্ম নেই, যা এখানে হতো না। এক কথায় সকল মাদক ব্যবসায়ী ও অপরাধীদের
স্বর্গরাজ্য ছিলো এই র্যালি বাগান।
তবে দিন যত যায়, মানুষ তার ভুল শুধরে ভদ্র হওয়ার চেষ্টা করে। ঠিক তেমনি
র্যালিবাগানের বেশিরভাগ বাসিন্দাই তাদের ভুল শুধরে ভালো হওয়ার চেষ্টা
করছেন।
র্যালিবাগানে একটি সুন্দর মাদকমুক্ত পরিবেশ গড়তে ইতিমধ্যেই এগিয়ে এসেছেন
র্যালিবাগানেরই একঝাঁক তরুণ। আর এ তরুণদের সার্বিক সহযোগীতা করে যাচ্ছেন
সকল অভিভাবকরা।
তরুণরা র্যালিবাগানকে মাদকমুক্ত করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করে ‘দক্ষিণ
র্যালিবাগন যুব সমাজ উন্নয়ন ও মাদক নির্মূল কমিটি’ নামক একটি সংগঠন গঠন
করে শুরু করে মাদকমুক্ত করার কাজ। তারা প্রথমেই সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের
সহযোগীতায় মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলে।
যারফলে অনেক মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের মাদক ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন এবং
ভালোর পথে ফিরে আসেন। তবে যারা এ ব্যবসা এখনও ছাড়তে পারেনি, তাদেরকে
র্যালিবাগানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুবসমাজরা।
এমন পরিস্থিতে এক তৃতীয়াংশেরও নিচে চলে আসে র্যালিবাগানের অপকর্ম। এভাবেই
চলতে থাকে মাসের পর মাস আর বছরের পর বছর।
দীর্ঘ ৪-৫ বছর পর একটি খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে
র্যালিবাগন। এরপরই সুযোগ নেয় র্যালিবাগানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা
ওইসকল মাদক ব্যবসায়ীরা। তারা খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভীড়তে থাকে
র্যালিবাগানে। শুরু করার চেষ্টা করে পুরোনো মাদক ব্যবসা সহ নানা অপকর্ম।
কিন্তু এবারও প্রতিরোধ গড়ে তুলে র্যালিবাগানের যুবকরা। ফলে ওই মাদক
ব্যবসায়ীদের সাথে শত্রুতার জন্মনেয় প্রতিরোধ গড়ে তোলার নেতৃত্বদানকারিদের
সাথে। চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা একেক করে নেতৃত্বদানকারি যুবকদের ওপর একের
পর এক হামলা ও মামলা সহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
সর্বশেষ চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী শাহআলম ও তানভীর বাহিনীর হামলার শিকার
হয়েছে ‘দক্ষিণ র্যালিবাগন যুব সমাজ উন্নয়ন ও মাদক নির্মূল কমিটি’ কার্যকরি সদস্য মো: আবির নামে এক যুবক। শনিবার (২৫ মার্চ) সেহেরী খেয়ে নামাজের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হলে আচমকা ওই যুবকের ওপর শাহআলম ও তানভীর বাহিনী হামলা চালায়।
এসময় আবিরকে হত্যার উদ্দেশ্যে চাপাতি দিয়ে কোপাতে থাকে। আবির দৌড়ে
পালানোর চেষ্টা করেও রক্ষা পায়নি। শাহআলম ও তানভীর বাহিনীর ধারালো
চাপাতির আঘাতে রক্তাক্ত জখম হয় আবির। এসময় ওই বাহিনীরা তার বাড়ীঘর ও
একটি অফিসে হামলা চালিয়ে ব্যপক ভাঙচুর করে। পরে তার চিৎকার চেচামেচিতে
আশেপাশের লোকজন বেড়িয়ে আসলে প্রাণে বেঁচে যায় আবির।
লোকজনের ভয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে গেলে পরে আবিরকে উদ্ধার করে নিয়ে
যাওয়া হয় হাসপাতালে। প্রথমে শহরের ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে
সেখানকার কর্তব্যরত ডাক্তার আবিরের অবস্থা গুরুত্বর দেখে অন্য একটি হাসপাতালে রেফার্ড করে। পরে সেখান থেকে আবিরকে খানপুর ৩’শ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে
জানাগেছে। এদিকে হামলাকারিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন র্যালিবাগানবাসী। তারা হামলার ঘটনার পর পর বিক্ষোভ করেন এবং চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী শাহআলম ও তানভীর বাহিনীর গ্রেপ্তারের দাবি জানান। তারা বলেন, এসকল মাদক ব্যবসায়ীদের জন্য র্যালিবাগানের যুবসমাজ থেকে কেউ শান্তি পাচ্ছেনা।
মাদক ব্যবসা করার কারণে তাদেরকে র্যালিবাগানে প্রবেশ করতে না করেছে
এখানকার যুবসমাজ। তাই তারা ক্ষিপ্ত হয়ে র্যালিবাগানে কিছু দিন পর পরই এ ধরনের হামলা চালাচ্ছে। এর আগেও বহুবার তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
মামলার পর কিছুদিন গাঁ ঢাকা দিয়ে থাকলেও আদালত থেকে জামিনে এসে আবারও এ ধরনের ঘটনা ঘটায়। তারা এসকল মাদক ব্যবসায়ীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসিসহ জেলা পুলিশ সুপারের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা
করেছেন।