স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদষ্টা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের ঘনিষ্ঠ সহচর, ভাষা সৈনিক ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বীরমুক্তিযোদ্ধা, নারায়ণগঞ্জের উজ্জ্বল নক্ষত্র, বিশিষ্ট শিল্পপতি আলহাজ¦ মহিউদ্দিন আহমদ খোকার আজ সাতাইশ তম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষ্যে মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকে আজ দিনব্যাপী বিভিন্ন ধর্মীয় কর্মসূচী পালন করা হবে। যার মধ্যে রয়েছে পবিত্র খতমে কোরআন, মরহুমের কবর জিয়ারত ও ফাতেহা পাঠ, নগরীর উত্তর নলুয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসার এতিমদের মাঝে ইফতার ও উন্নতমানের খাবার বিতরন। পাশাপাশি উত্তর নলুয়া জামে মসজিদ এবং মরহুমের বাড়ীতে রোজাদার, অসহায় গরীব মুসলমানদের মাঝে ইফতার বিতরণ।
১৯৩৫ সনের ১৬ আগষ্ট নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৮ নং ওয়ার্ড শীতলক্ষার উত্তর নলুয়া এলাকায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতা মরহুম আব্দুল আজিজ সরদারের তিনি বড় সন্তান। তিনি ঐতিহ্যবাহী পাইক পাড়া এলাকার চেয়ারম্যান বাড়ীতে বিবাহ করেন। তিনি ৫ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন।
তিনি বঙ্গবন্ধুর অতি আদরের ছিলেন। তাকে তিনি আদর করে খোকা বলে ডাকতেন। এছাড়াও তিনি এলাকায় ও বিভিন্ন মহলে মহিউদ্দিন নামে ব্যাপক পরিচিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ¯েœহ ভাজন ও ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে মহিউদ্দিন আহমদ খোকা দেশের বিভিন্ন মহলে সুপরিচিত ছিলেন। আলহাজ¦ মহিউদ্দিন আহমদ খোকা ছিলেন এক বর্ণাঢ্য রাজনীতি জীবনের অধিকারী। ছাত্র জীবন থেকেই তিনি রাজনীতি জড়ান। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা আন্দোলন,৬৯ এর গনআন্দোলন,৭০’র নির্বাচন এবং বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাংলাদেশ স্বাধীন করার নিমিত্তে সংগঠিত মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। তৎকালীন শীতলক্ষা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের প্রথম সাধারন সম্পাদক ছিলেন তিনি। ষাটের দশকে তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এবং সত্তর দশকে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু রচিত কারাগারের রোচনামচা নামক গ্রন্থের বেশ কয়েক স্থানে মহিউদ্দিন আহমদ খোকার নাম উল্লেখ রয়েছে।
১৯৫৭ সনে যখন তিনি কারাগারে বন্দি ছিলেন তখন তার সন্তান এহছান উদ্দিন আহমদ জুয়েল মৃত্যু বরন করেন। তাখন তার বয়স ছিল মাত্র ছয় বছর। সে সময় তিনি কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে সন্তানের দাফন কার্য সম্পন্ন করে পুনরায় কারাগারে ফিরে যান। স্বাধীনতা পরবর্তিতে তিনি তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার কমিশনার নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু পৌরসভার নির্বাচনে আলী আহাম্মদ চুনকাকে মনোনয়ন না দিয়ে মহিউদ্দিন খোকাকে চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনয়ন প্রদান করেন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী ও মিল্পপতি হিসেবে ব্যাপক সুনামের অধিকারী ছিলেন। এই দেশ স্বাধীনের পূর্ব হতেই তিনি ব্যবসা বানিজ্যে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেন। সে সময় পাটের ব্যবসার ছিল স্বর্ণ যুগ। মহিউদ্দিন আহমদ খোক পাটের ব্যবসায়ে প্রচুর সুনাম কুড়াতে সক্ষম হয়েছিলেন। এছাড়াও জানাজানি নামক বাংলা চলচিত্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে চলচিত্র নির্মাণ পেশায় যুক্ত হন এবং চিত্রলেখা নামে চলচিত্র প্রযোজনা সংস্থা গড়ে তোলেন। তিনি আরো কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঐ সময়ে গড়ে তোলেন। যার মধ্যে গুলশান সিনেমা,গুলশান টেক্সটাইল, গুলশান মার্কেট, এস.এম বেলিং কোম্পানী লিমিটেড, তোলারাম প্রেস হাউস, বিশ^ বিখ্যাত কেমি ঘড়ির ও টিসিবির এজেন্ট ইত্যাদী।
১৯৯৬ সালের এই দিনে বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ, কৃতিমান পুরুষ আলহাজ¦ মহিউদ্দিন আহমদ খোকা এই ধরার সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে মহান রাব্বুল আলামিনের ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে পাড়ি জমান। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, চার পুত্র ও এক কন্যা সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী আত্মীয় স্বজন রেখে যান। মরহুমের বড় সন্তান আনিস উদ্দিন আহমদ দুলু ছিলেন নারায়নগঞ্জ পৌরসভার শীতলক্ষা ইউনিয়নের সফল কমিশনার। তার মেজো সন্তান আলহাজ¦ ফয়েজ উদ্দিন আহমদ লাভলু বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিল নারায়ণগঞ্জ জেলার ও বাংলাদেশ পাট আড়ৎদার সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বেগম রোকেয়া খন্দকার উচ্চ বিদ্যালয় ও গনবিদ্যা নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সেসাথে বহুল প্রচারিত দৈনিক সবারকণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে বস্তÍুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে নিয়োজিত আছেন।
মরনহুম আলহাজ¦ মহিউদ্দিন আহমদ খোকা নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের সাংসদ এ.কে.এম শামীম ওসমানের একমাত্র পুত্র অয়ন ওসমানের দাদা শ^শুড়। প্রতি বছরের এই দিনে মরহুমের মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণে তার পরিবারের পক্ষ থেকে এবং মহিউদ্দিন আহমদ খোকা স্মৃতি সংসদের আয়োজনে বিভিন্ন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করা হয়ে থাকে। এদিন নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষ গভীর শ্রদ্ধায় মরহুম আলহাজ¦ মহিউদ্দিন আহমদ খোকাকে স্মরণ করে থাকেন।