সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি নিয়ে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। এরই মাঝে সম্প্রতি ওয়ার্ড সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও অনুষ্ঠান স্থলে কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। এতে কর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
তৃনমুল নেতাকর্মীদের প্রশ্ন যিনি কোনো স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য বা নেতা নন অর্থের বিনিময়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ লুফে নিতে চান কে এই খন্দকার মানিক? তাহলে কিভাবে এই পদের জন্য তিনি লবিং তদবির করছেন? যারা দীর্ঘদিন ত্যাগ স্বীকার করে রাজনীতি করেছেন তাহলে তারা কি বঞ্চিত হবেন? তাকে তো এই সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় কখনো রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হতে দেখা যায়নি? তাহলে হঠাৎ করে এসে কিভাবে তিনি সাধারণ সম্পাদক হতে চান? তাছাড়া তাকে নিয়ে থানা আওয়ামী লীগ কতিপয় একজন নেতৃবৃন্দের এতো আগ্রহই বা কেন? শেষ পর্যন্ত কি অর্থের বিনিময়ে তিনি সেই পদ পেয়ে যাবেন? স্থানীয় বাসিন্দা সহ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের তৃণমূল নেতা কর্মীদের মাঝে এমন নানা প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জে বিভিন্ন সময়েই নানা কর্মকান্ডে বিতর্কিত একাধিক অভিযোগ ও হত্যা, বিস্ফোরক সহ বহু মামলার আসামি মানিক মাস্টার সেচ্ছাসেবক লীগের থানা এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে কোন পদে না থেকে নেতৃত্ব ছাড়াই সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী হতে বিভিন্ন দফতরে ইতিমধ্যে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন।এ নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জসহ পুরো আদমজী এলাকায় চলছে আলোচনা সমালোচনা।
কেউ কেউ বলছেন কেন্দ্রীয় নেতারা টাকা পেলেই যে কোন ব্যক্তিকেই পদ দিয়ে দেন। এখন আর ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ান করা হয় না। এদিকে জানা গেছে বিতর্কিত এই মানিক মাস্টার সুমিলপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক পদে রয়েছেন। মানিক এলাকায় দূর্নীতি মামলার আসামি কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে পরিচিত। ইতোমধ্যে খন্দকার মানিক মাষ্টার থানা সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ বাগিয়ে নিতে বিভিন্ন দফতরে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন।
একাধিক স্থানে ব্যানার ফেস্টুন টানিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের বিভিন্ন ভাবে ইমপ্রেস করার চেষ্টাও করছেন এই মানিক মাষ্টার।তবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবি মানিক মাষ্টার সেচ্ছাসেবক লীগের কোন মিটিং মিছিলে কখনো অংশ গ্রহন করেন নি। সেচ্ছাসেবক লীগের থানা ও ওয়ার্ডের কোন স্থানেই নাম নেই মানিক মাষ্টারের। সে কিভাবে থানা সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী হতে প্রচার প্রচারনা চালাচ্ছেন। মানিক মাষ্টার সুমিলপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হলেও তাকে কখনও ইউনিয়ন যুবলীগের মিছিল মিটিং করতে দেখিনি।
সম্মেলন শেষ হওয়ার পর কমিটি ঘোষণার কথা থাকলেও পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় সেসময় কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। এলাকায় কখনও দলীয় রাজনীতির সাথে তিনি সেভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন না, এখন টাকার বিনিময়ে সাধারণ সম্পাদক পদ হাতিয়ে নিতে চান, আমরা তাকে কখনো গ্রহণ করবোনা, তাকে এ পদ দেওয়া হলে আমরা গণহারে পদত্যাগ করব।
কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সিদ্ধিরগঞ্জের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা বলেন যারা আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ দলের দু:সময়ে রাজপথে থেকে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন তাদেরকে মূল্যায়ান করতে হবে। যারা ত্যাগী কর্মী তাদেরকে মূল্যায়ন না করলে সিদ্ধিরগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতি পথ হারাবে বলে জানান তারা। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুমিলপাড়া এলাকার এক প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, মানিক মাষ্টার মূলত সুমিলপাড়া এলাকায় একজন লজিং মাষ্টার ছিলেন।
মতির কাছের লোক খোকনের মার্ডার ও শফিকুলের ক্রসফায়ারে মৃত্যু এবং মতিউর রহমান মতি কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই মানিকের ভাগ্যের চাকা খুলে যায়।
মারামারি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ইপিজেডের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণসহ অসংখ্য অপকর্মে জড়িয়ে যান এই মানিক মাষ্টার। তাঁর বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় রয়েছে কিশোরীকে পিটিয়ে হত্যাসহ একাধিক মামলা। মতির হাত ধরেই রাজনীতিতে প্রথম নাম লেখান মানিক।
বাগিয়ে নেন সুমিলপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক পদ। এরপর থেকেই মানিক মাষ্টারকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন সে কোটি কোটি টাকার মালিক। টাকার পরিমান বেশি হওয়ায় মানুষকে কোন প্রকার তোয়াক্কা করেন না মানিক মাষ্টার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতা জানান, মানিকের মূল শক্তিই হচ্ছে কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি। মতির হাত ধরেই মানিক আজ কোটি কোটি টাকার মালিক। গুরুর সাথে তাল মিলিয়ে শিষ্য মানিক মাস্টারও করেছেন আলিসান বাড়ি। মানিক মূলত মতির একান্ত সহযোগী এবং ক্যাশিয়ার। মতির সব কিছুই এখন নিয়ন্ত্রণ করেন মানিক মাষ্টার। মানিক মাষ্টারকে থানা সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক করতে মতি কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছেও তদবীর করছেন। তিনি আরও জানান শুনেছি যতো টাকাই লাগেনা কেনো যে কোন কিছুর বিনিময়ে মানিক মাষ্টারকে এই পদ নিয়ে দিবেন কাউন্সিলর মতি।
গোপন সূত্রে জানা গেছে, সেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন ও মানিক মাষ্টারের থানা সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী নিয়ে যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংঙ্কা রয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জে। কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করলে সিদ্ধিরগঞ্জে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে কোন্দলের সৃষ্টি হবে। নেতা কর্মীদের মাঝে কোন্দল সৃষ্টি হলে দল ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে ধারনা করছেন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতারা।
এদিকে কাউন্সিলর মতি ও শিষ্য মানিক মাস্টারের এমন কর্মকান্ডের পর মুখ খুলতে শুরু করেছেন নাসিক ৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। তারা বলছেন দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অন্যের জমি দখল করে প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে গত ২২ ডিসেম্বর কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পৃথক চার্জশিট দাখিল করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এরপর থেকে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন মতি ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী। তাদের এই নোংরা রাজনীতি থেকে মুক্তি চায় সিদ্ধিরগঞ্জের তৃনমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে মানিক মাস্টারের নম্বরে ফোন দিলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।