ঈদের আগে শ্রমিকদের চলতি মাসের বেতন ও পূর্ণ বোনাস পরিশোধ, মজুরি বোর্ড গঠন করে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৪ হাজার টাকা নির্ধারণ, ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্মেন্টস শ্রমিক শোক দিবস ঘোষণার দাবিতে শ্রমিক সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল শাখা।
বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) বিকাল ৫ টায় কাঁচপুর ব্রীজের নিচে শ্রমিক সমাবেশ ও এলাকায় এ বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল শাখার সহসভাপতি আনোয়ার খানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি আবু নাঈম খান বিপ্লব, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শরীফ, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সভাপতি রুহুল আমিন সোহাগ, কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল শাখার সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান, কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল শাখার সংগঠক আব্দুল হাকিম।
নেতৃবৃন্দ বলেন, নিত্যপণ্যের উচ্চ মূল্যের কারণে এবারের ঈদ নিয়ে শ্রমিকের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষ ঈদ আসলেই কেবল ভাবতে পারে পরিবার পরিজনের জন্য কিছু ভাল খাবার ও কিছু জামা কাপড় কেনার। গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারিত হয়েছে চার বছর আগে। এসময়ে নিত্য পণ্যের দাম অনেকগুণ বেড়েছে।
তাদের খাবার তালিকা ইতিমধ্যে সংক্ষিপ্ত করে ফেলা হয়েছে। বাজার দর, উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য পুষ্টিমান বজায় রাখা বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার গবেষণা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ ইত্যাদি হিসাবে নিয়ে একজন শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ২৪ হাজারের কম হতে পারে না।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ঈদ আসলে বেতন বোনাস নিয়ে কারখানাগুলোতে সংকট তৈরি হয়। অধিকাংশ মালিকরা বোনাস না দিয়ে ৫০০/১০০০ টাকা বকশিশ দেয়। অনেকে তাও দেয় না। সরকারি প্রতিষ্ঠানে বেসিকের সমান বোনাস দেয়া হয়। অথচ যাদের উৎপাদনের কারণে দেশে বৈদেশিক মূদ্রা আসে তাদের ঠিকমতো বোনাস দেয়া হয় না।
শ্রমিকদের সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো পূর্ণ বোনাস দিতে হবে। এপ্রিলের ২৩ তারিখে ঈদ। সকল কারখানায় সাধারণ ডিউটি করা হয়েছে ছুটি বাড়ানোর জন্য। সে হিসাবে ঈদের আগে শ্রমিকের এপ্রিলের মাসের পূর্ণ চলতি বেতন পাওয়া ন্যায্য।
শ্রমিকদের বেতন বোনাস ঈদের শেষ মুহুর্তে দিলে শ্রমিক বাড়ি যাওয়ার তাড়ায় ভালো করে কেনাকাটা করতে পারে না। বেতন বোনাস নিয়ে মালিকদের গড়িমসির কারণে শিল্প এলাকায় যদি শ্রমিক অসন্তোষ তৈরি হয় তারজন্য মালিক ও প্রশাসন দায়ী থাকবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ২৪ এপ্রিল রানাপ্লাজা ধসের ১০ বছর পূর্ণ হচ্ছে। রানাপ্লাজা ধসে ১১৩৬ জন শ্রমিক মৃত্যুবরণ করে। মানুষের প্রত্যাশা ছিল এঘটনার পরে আর কোন শ্রমিক মালিকের অতি মুনাফার লোভে নির্মম মৃত্যুর শিকার হবে না। কিন্তু এ মর্মান্তিক ঘটনায় মালিক ও সরকারের কোন শিক্ষা হয়নি।
প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় এখনও কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে, বয়লার বিষ্ফোরণে শ্রমিকের মৃত্যু হচ্ছে। মৃত্যু হলে শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ মাত্র ২ লাখ এবং মালিক ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের শাস্তির কোন যথাযথ আইন নেই।
শ্রম আইন সংশোধন করে আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুযায়ী আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ এবং মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান এবং ২৪ এপ্রিলকে রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্মেন্টস শ্রমিক শোক দিবস ঘোষণা করতে হবে।