নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. গিয়াসউদ্দিন বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের এক নেতা বলেন অনেক খুনের সাথে নাকি আমি জড়িত। নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে অপরাধী ব্যাক্তি কী আমি আর আমার সন্তান। ত্বকী হত্যা কখন হয়েছিল, এ সরকারের সময়। র্যাব তদন্ত করেছে চার্জশিট দিয়েছে। আদালতে দেয়ার আগেই তা সরকারের প্রভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়।
অনেক টর্চারসেল নারায়ণগঞ্জে পাওয়া গেছে ব্যাবসায়ীদের নিয়ে পেটানো হয়েছে হত্যা করা হয়েছে। একটারও বিচার হয়নি। নারায়ণগঞ্জের মানুষ জানে কারা এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। সাত খুনের প্রধান আসামিকে ভারত পালিয়ে যেতে কে বলেছে তা দেশবাসী শুনেছে। এখন ক্ষমতায় আছেন অনেক কথা বলছেন। খেই হারিয়ে ফেলছেন।
আপনার সন্তানরা কোথায় চাঁদাবাজি করে সেটাও সবাই জানে। ডিস ব্যবসা ইন্টারনেট ব্যাবসা টেম্পো, সিএনজি, অটোরিকশা থেকে কারা চাঁদা নেয় সেটার ভাগ কোন পরিবারের সদস্যরা পায় সবাই জানে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আওতাধীন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সোমবার (১৮ এপ্রিল) সিদ্ধিরগঞ্জের গিয়াসউদ্দিন ইসলামিক মডেল কলেজে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
গিয়াসউদ্দিন বলেন, ফতুল্লায় যুবদলের ঢাকা বিভাগীয় ইফতার মাহফিল করার কথা ছিল। সেই ইফতার মাহফিল করতে দেয়া হয়নি। পুলিশ দিয়ে স্টেজ ভেঙে দেয়া হয়েছে। এখন যে নেতা বলেন তিনি নাকি জানতে পেরেছেন, শুনতে পেরেছে ওখানে ইফতার মাহফিল হলে সংঘাত হত এবং সেটার দায় নাকি তাদের দেয়া হত। উনি কী গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান? নারায়ণগঞ্জের গোয়েন্দারা কী ব্যার্থ যে এ সংবাদ তারা পেল না কিন্তু উনি পেলেন। তাকে তো গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান বানানো দরকার। প্রশাসনের জিজ্ঞাসা করা দরকার কার থেকে তিনি এ সংবাদ পেয়েছিল। ব্যাবস্থা নিতে হবে। নয়ত প্রমানিত হবে যে এটাও তার একটা ষড়যন্ত্র।
তিনি বলেন, মানুষের কাছ থেকে তিনি জনপ্রিয়তা হারিয়ে ফেলেছেন। এখানে যদি তারেক রহমান বক্তব্য দিত, বিভাগীয় নেতারা বক্তব্য দিত, তাহলে এখানে তার অনেক অপকর্মের কথা বলা হত। সে অপকর্মের কথা সহ্য করতে পারবে না। তাই ষড়যন্ত্র করে এই ইফতার মাহফিল বন্ধ করা হয়েছে।
এখন তিনি যখন কোথাও বক্তৃতা দিতে দাঁড়ান, সেটা স্কুলে হোক প্রশাসনের অনুষ্ঠান কিংবা ইফতার মাহফিল হোক সেখানে একটাই বক্তব্য দেন, সেটা হল আমার ও আমার সন্তানের বিরুদ্ধে। আমাকে খুনী বলেন, আমার সন্তানকে খুনের আসামি হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
তিনি আরও বলেন, আজ সবাই জানে আমাদের দলের এক নেতাকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল। পল্টন থানায় মামলা হয়েছিল। সেই মামলায় পল্টন থানার ওসি ও ডিসিকে প্রভাবিত করে যারা অপরাধ করেছে তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট না দিয়ে আমার সন্তান ও কর্মীদের নাম সেখনে দিয়েছে।
সে বলে বেড়ায় আহাদ নামে এক ডিসি ছিল। আমরা জানিও না। সেই ব্যাক্তির কাছে তিনি নাকি জানতে পেরেছেন আমার সন্তান জড়িত। আমি বারবার এ ঘটনার শাস্তি দাবী করেছি।
আজ যারা অর্থ সম্পদ আহরণ করছেন তারা সাবধান হয়ে যান। বেশিদিন আর এগুলো করতে পারবেন না। এসমস্ত কথাবার্তা ভুলে যান। তারা বলেন, ওরা আমার প্রতিপক্ষ না। আমরা আমাদের দলকে শক্তিশালী করতে চাই দলকে প্রতিপক্ষ বানাতে চাইনা। আমরা নিজেরা না দলকে ফ্যাক্টর করতে চাই। দলের কর্মীরা যেন নেতা হতে পারে এগিয়ে যেতে পারে সেভাবে আমি দলকে গড়তে চাই।
কোন কোন নেতা বলেন দিন তারিখ দেন। আমি নারায়ণগঞ্জে আসবো মানুষের ঘরে ঘরে যাবো। মানুষ হাসে আর বলে এরা বসন্তের কোকিল। নির্বাচন আসলে হাতে পায়ে ধরে। নির্বাচন গেলে তাদের খুঁজে পাওয়া যায়না। কর্মীদের বলতে চাই আমরা যেন এমন তিরস্কারের শিকার না হই।
আমরা ফতুল্লা সিদ্ধিরগঞ্জ ছেড়ে যেতে চাই না। আমরা প্রতিদিন আমাদের এলাকাবাসীর পাশে সুখ দুঃখের সাথী হয়ে থাকতে চাই। নারায়ণগঞ্জে বিএনপিকে ফ্যাক্টর মনে করবে না এমন যদি কেউ ভাবে ভুল করবে। আমার আহ্বায়ক হওয়ায় যদি কেউ হুমকি দেন তাহলে আমাকে দমাতে পারবেন না। বিএনপি আমাকে অনেক দিয়েছে, এখন বিএনপিকে দেয়ার পালা আমার।
বিএনপিকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কথা বলেন। ভুলে যান। যেসকল নেতাদের সামনে এসকল কথা বলতেন তারা নেই। কারও রক্তচক্ষু ভয় পাই না। আমাদের কাজ কর্ম আমাদের ফ্যাক্টর।
দেশ এমন একটি ক্রান্তিলগ্ন পার করছে যখন স্বাধীনতার চেতনা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যাবস্থা এ সরকারের হাতে বিপন্ন। অত্যাচারের মুখে যখন বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মী গৃহহারা সেই সময়ে আপনারা এই সম্মেলনে এসেছেন। এ সরকারের অধীনে দুটি নির্বাচন হয়েছে।
২০১৪ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচন আর ২০১৮ সালে আগের রাতে ভোট দিয়ে নিজেদের এমপি ঘোষণা করেছে। দেশকে তারা বিরাট দুরবস্থার মধ্যে নিয়ে এসেছে। দেশের সাধারণ মানুষ আজ দিশেহারা। এ সরকার সাধারণ মানুষের কথা ভাবে না। কীভাবে লুট করবে টাকা পাচার করবে তারা সেই চিন্তা করে।
সরকার নীল নকশা তৈরি করছে। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেখানেও ভোট ডাকাতি করে তারা আবারও নিজেদের ক্ষমতয় রাখতে চায়। কারণ মানুষের কাছে আজ তারা ধিকৃত। তাদের সামান্য জনপ্রিয়তাও নেই।
সম্মেলন শেষে মাজেদুল ইসলামকে সভাপতি, আবদুল্লাহ আল মামুন ও এসএম আসলামকে সহ- সভাপতি এবং কাউন্সিলর ইকবাল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক ও মো. আকবরকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ৫ সদস্যের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপি’র কমিটি ঘোষণা করেন প্রধান অতিথি নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপি’র ১ম যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম টিটু, ফতুল্লা থানা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার মনিরুল ইসলাম,সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ হালিম জুয়েল।
এছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপি’র সদস্য সচিব কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন, সদস্য কাউন্সিলর গোলাম মুহম্মদ সাদরিল, কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক বিল্লাল হোসেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর শ্রমিকদলের আহ্বায়ক এস এম আসলাম, জেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব গোলাম মুহম্মদ কায়সার, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জুয়েল প্রধান, জেলা মহিলা দলের সাবেক সভানেত্রী নুর নাহার বেগমসহ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপি’র আওতাধীন ১০টি ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি এবং সাধারণ ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।