সিদ্ধিরগঞ্জের পেশাধার ছিনতাইকারী, একাধিক মামলার আসামি, কিশোরগ্যাং বাহিনীর লিডার ও শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী, মাদকের গড ফাদার জসিমসহ ৫ জনকে ইয়াবা ট্যাবলেট ও হেরোইনসহ নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসীর মধ্যে ফিরে আসে স্বস্তি।
এলাকাবাসীসহ অনেকেই নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশকে সাধুবাদ জানান।
এ সময় এলাকাবাসী জসিমের বিভিন্ন অপরোধ সাম্রাজ্যের সহযোগীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
জানাগেছে, দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে এলাকার একটি প্রভাবশালী মহলের আশ্রয়-প্রশয়ে জসিম মাদক সাম্রাজ্য পরিচালনা করে আসছে। একাধিকবার গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে আটকের জন্য চেষ্টা করে।
অবশেষে গত শুক্রবার (৫ মে) দিনগত রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি টিসি রোডস্থ পূর্বপাড়া এলাকা থেকে মাদক চোরাকারবারির মূলহোতাসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের দেহ তল্লাশি করে ৩০০ পিছ ইয়াবা ও ৩০ পুরিয়া হেরোইন উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পাগলাবাড়ী এলাকার সায়েদ মিয়ার ছেলে জসিম মিয়া। এরআগেও বিদেশী একটি চাকু (সুইচ গিয়ার) ও ছিনতাইকৃত দুটি মোবাইল ফোনসহ জসিমকে গ্রেপ্তার করেছিলো থানা পুলিশ।
এছাড়াও নাসিক ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলামের কার্যালয়ে হামলায় মামলার আসামী, নারী কেলেঙ্কারি, ধর্ষণের অভিযোগ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মৃত সুন্দর আলীর ছেলে শরিফ এর বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও হত্যার হুমকির অভিযোগ, চাঁদাবাজী মামলাসহ বিভিন্ন অপরাধের মামলা রয়েছে এই পেশাদার ছিনতাইকারী ও শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী জসিমের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, অসংখ্য মাদক স্পট রয়েছে জসিমের বাহীনির। এদিকে মাদক সাম্রাজ্যের গডফাদার মাদক ব্যবসায়ী জসিমসহ ৫ জন গ্রেপ্তার হলেও তার সিন্ডিকেটের মাদকের অন্যতম হোতা রানা ওরফে ইয়াবা রানা ধোরা ছোয়ার বাইরে।
সিদ্ধিরগঞ্জের পুলের দক্ষিন পাশে আইডিয়াল স্কুলে গলি ও মদিনা সুপার মার্কেটের পিছনে মৃত নওয়াব আলীর ছেলে মাদক ব্যবসায়ী রানার বাড়িতে দির্ঘদিন যাবৎ চলে মাদক ব্যবসা, মাদক সেবন ও জুয়ার আসর।
গোপন সুত্রে জানা যায়, মাদক ব্যবসায়ী রানার বাড়িতে যে ঘরে বসে মাদক সেবন ও জুয়ার আসর জমে সেই ঘরের বাহির থেকে তালা মেরে ভিতরে রানা নিরতা পালন করে। আর রানাকে কেউ খোজতে গেলে রানার ভাই/ভাবি/বাড়ির অন্যান্য লোকেরা বলে রানা বাসায় নাই। আর ফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন কৌশলে রানার বাহীনিদিয়ে মাদক আদান-প্রধান ও বেচা কেনা করছে। রানার বাহীনিরা হলো- বেলায়েত, সাব্বির, আকাশ ও মাদক মামলার অন্যতম আসামি শহিদুলসহ নামে বেনামে আরো অনেকেই। এছাড়াও সিআই খোলা এলাকার মাদক ব্যবসায়ী ইকবাল, রতন ওরফে কাইল্লা (রতন), মিজমিজি পূর্বপাড়া এলাকার মো. আরিফ ওরয়ে গাঁজা আরিফ, মোশারফ হোসেন, হৃদয়, ওমর ও সোলায়মান জসিমের মাদকের অন্যতম হোতা। এরা মাদক স্পট ছাড়াও সরবারহের কাজে নিয়োজিত রয়েছে।
অপরদিকে সিদ্ধিরগঞ্জের নাসিক ১নং ওয়ার্ডের র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া চিহিৃত মাদক ব্যবসায়ী ফরহাদ ওরফে ফেন্সি ফরহাদের চলছে জমজমাট মাদক ব্যবসা। র্যাব-৩ এর সদস্যরা গত ১৭ এপ্রিল রাতে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড় থেকে রাকিব, ওমর, সোলায়মান, ফরহাদ ওরফে ফেন্সি ফরহাদ ও অয়নকে ৯৬ বোতল ফেনসিডিল ও ১৮ কেজি গাঁজাসহ গ্রেফতার করে। এ সময় মাদকের কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার জব্ধ করা হয়।
স্থানীয়রা আরও জানান, জসিমের সরবারহ মাদকের ভয়াল ছোবলে ধ্বংস হচ্ছে সমাজ ব্যবস্থা। বাড়ছে নানা মাত্রার অপরাধ। মাদকের কারণেই সমাজের উচ্চ ও নিম্নবিত্ত পরিবারের যুবক-যুবতী থেকে শুরু করে কিশোর-কিশোরীরাও মাদকাসক্ত হয়ে ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। মাদকের অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর অপরাধীরা। আগে মাদক সেবীরা টাকার জন্য নিজ পরিবারের সদস্যদের সাথে বিবাদে জড়িত হলেও এখন তারা চুরি, ছিনতাই, অস্ত্র ব্যবসাসহ নানা অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। সিদ্ধিরগঞ্জে জসিমের একাধিক চলমান মাদক স্পটের কারণেই মাদকের সহজলভ্যতাই অধিকহারে বিপথগামী হচ্ছে উঠতি বয়সী কিশোরেরা।
স্থানীয়রা বলছেন অচিরেই এসব মাদক স্পট ও মাদকের ছড়াছড়ি প্রতিরোধ না করলে স্বাভাবিক জীবণযাত্রা ব্যাহত হবে। এমনকি মাদকাসক্তরা সমাজের জন্য বোঝা হয়ে দাবি। এলাকার আইনশংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবেনা।
তাদের দাবি র্যাব, পুলিশ ও আইনশৃংখলাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তদারিকে মাদকের মূলহোত জসিমের অপরাধ ও মাদক সাম্রাজ্যের সহযোগীদের গ্রেপ্তার করলে সুন্দর সমাজ ও স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চয়তা ফিরে আসবে।