রানাপ্লাজা ভবস ধ্বসে ১১৩৬ জন শ্রমিকের মৃত্যুর জন্য দায়ী সোহেল রানার সর্বোচ্চ শাস্তি, সরকারি তদারককারী কর্মকর্তাদের শাস্তি, আইএলও কনভেনশন ১২, ১৫৫, ১৮৭ ধারা মোতাবেক আজীবন আয়ের মানদণ্ডে ক্ষতিপূরণ আইন করা, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং রহিমা ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স লিমিটেড এর শ্রমিক হত্যার জন্য দায়ী মালিককে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখা।
সোমবার (৮ মে) সকাল ১১ টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখা সভাপতি আবু নাঈম খান বিপ্লব, রি-রোলিং স্টিল মিলস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক এস এম কাদির, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শরীফ, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সভাপতি রুহুল আমিন সোহাগ, কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল শাখার সহসভাপতি আনোয়ার খান, গাবতলী পুলিশ লাইন শাখার সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম।
নেতৃবৃন্দ বলেন, রানাপ্লাজা ধসের ১০ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। রানাপ্লাজা ধসে ১১৩৬ জন শ্রমিক মৃত্যুবরণ করে। নেতৃবৃন্দ রানা প্লাজা ধসে শ্রমিকের মৃত্যুকে মালিকের অবহেলা জনিত হত্যাকাণ্ড আখ্যা দিয়ে বলেন, মানুষের প্রত্যাশা ছিল এঘটনার পরে আর কোন শ্রমিক মালিকের অতি মুনাফার লোভে নির্মম মৃত্যুর শিকার হবে না। কিন্তু এ মর্মান্তিক ঘটনায় মালিক ও সরকারের কোন শিক্ষা হয়নি। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় এখনও কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে, বয়লার বিষ্ফোরণে শ্রমিকের মৃত্যু হচ্ছে। মৃত্যু হলে শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ মাত্র ২ লাখ টাকা। মালিক ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের শাস্তির কোন যথাযথ আইন নেই। শ্রম আইন সংশোধন করে আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী আজীবন আয়ের মানদণ্ডে ক্ষতিপূরণ আইন করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, রানা প্লাজা ভবনে ৫টি গার্মেন্টস ছিল। ভবন নির্মাণে ও গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠা-পরিচালনায় সরকারি তদারকি সংস্থা আছে। রানা প্লাজা ভবন মালিক সোহেল রানা জেলে থাকলেও কোন গার্মেন্টস মালিক বা সরকারি তদারকি সংস্থার কেউ কারাগারে নেই। ভবন মালিক ছাড়া আসামি সকলে জামিনে আছে। বিচার কাজে দীর্ঘসূত্রিতা চলছে। ভবন মালিকও এখন জামিন নেয়ার পাঁয়তারা করছে। অতীতে ভবন ধস বা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কারো শাস্তি হয়নি।
নেতৃবৃন্দ বলেন, রূপগঞ্জের ভুলতায় অবস্থিত রহিমা ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স লিমিটেডে চুল্লি বিষ্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ইতিমধ্যে ৬ জন শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেছে। ২ জন আশঙ্কাজনকভাবে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারী ইন্সটিটিউটে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। গত বৃহস্পতিবার বিকালে এ ঘটনা ঘটে। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ স্টিল এবং রি-রোলিং মিলগুলোতে যে ধরণের সেফটি ব্যবস্থা থাকা দরকার, শ্রমিকদের সেফটি পোশাক থাকার কথা এর কোনটাই এখানে ছিল না। অগ্নি নির্বাপনেরও কোন ব্যবস্থা ছিল না। ছাড়পত্র ছিল না বলে কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর জানিয়েছে। বাস্তবে মালিকের অতি মুনাফার লোভ, অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। এটাকে দুর্ঘটনা বলা যায় না, এটা হত্যাকাণ্ড। অবিলম্বে মালিককে গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে।
নেতৃবৃন্দ রানাপ্লাজা, তাজরীন গার্মেন্টস, টাম্পাকো ফয়েলস, সেজান জুস, বি এম কন্টেইনার ডিপো, রহিমা ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সসহ সমস্ত ভবন ধস ও অগ্নিকাণ্ডের জন্য মালিকের অতিমুনাফা লোভ, সরকারি তদারকি সংস্থার দ্বায়িত্বহীনতাকে দায়ী করে এটাকে হত্যাকাণ্ড আখ্যায়িত করে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন এবং এর জন্য প্রয়োজনে আইন সংশোধন করার কথা বলেন।