দীর্ঘ ১৪ বছর পর সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির দ্বি- বার্ষিক সম্মেলনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন গোলাম ফারুক খোকন।
শনিবার (১৭ জুন) সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল আবাসিক এলাকার গিয়াস উদ্দিন ইসলামিক মডেল স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তাদের নাম ঘোষণা করে। পরে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এড. আব্দুস সালাম আজাদ তাদের নাম ঘোষণা করেন।
জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিলে প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
পরে তিনি জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে দলের আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন।
এদিকে দলের বৃহত্তর ঐক্যের কথা চিন্তা করে শেষ পর্যন্ত জেলা বিএনপি’র কাউন্সিল সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী থেকে সরে দাঁড়ালেন মাশুকুল ইসলাম রাজিব। যার ফলে জেলা বিএনপির কাউন্সিলে বক্তব্যে রাখতে গিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাজিব ও জেলা বিএনপির নবনির্বাচিত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন রাজিবের প্রশংসা করতে ভুলেনি।
তারা বলেন, আজকে দলের কথা চিন্তা রাজিব যে কাজটি করে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। রাজিব একজন দক্ষ ও সাংগঠনিক তার মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো সকল গুণাবলী রয়েছে। তারপরও দলের জন্য সে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়েও সরে দাঁড়িয়েছে। রাজিবের মতো সবাইকে দলের স্বার্থ চিন্তা করতে হবে।
এদিকে সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে উৎসব মুখর পরিবেশে অবিরাজ করেছে। সকাল এগারোটার মধ্যে নেতাকর্মীরা সম্মেলন মঞ্চে হাজির হয়ে সাফল্য মন্ডিত করে তোলেন।
পরে জাতীয় সংগীতের সাথে সাথে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকনের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিনা রহমান, প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এড. আব্দুস সালাম আজাদ, বিশেষ বক্তা হিসেবে ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ টিটু।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম ফজলুল হক মিলন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান মনির, মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপু, আজহারুল ইসলাম মান্নান, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু।
এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির ও প্রতিটি থানা, উপজেলা ও পৌরসভা এবং জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ২০০৩ সালে জেলা বিএনপি’র সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক রেজাউল করিম ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তৈমূর আলম খন্দকার।
ওয়ান ইলেভেনের সময় সংস্কারবাদী হিসেবে অধ্যাপক রেজাউল করিমের নাম আলোচনায় থাকায় ২০০৯ সালের ২৫ শে নভেম্বর শহরের আলী আহমেদ চুনকা পৌর মিলনায়তনে জেলা বিএনপি’র সর্বশেষ সম্মেলনে তাকে বাদ দেয়া হয়।
সর্বশেষ সম্মেলনে তৈমূর আলম খন্দকারকে সভাপতি ও কাজী মনিরুজ্জামানকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সাধরণ সম্পাদক করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ৭ বছরেও তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি।
২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয় দলের মহাসচি। সভাপতি কাজী মনির,সাধারন সম্পাদক মামুন মাহমুদ। তিন বছর মেয়াদ পূর্তির পর ২০২০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী ওই কমিটি ভেঙ্গে দেওয়া হয়। এরপর প্রায় ৮ মাস জেলা বিএনপির কোন কমিটি ছিল না।
২৯ ডিসেম্বর ২০২০ তৈমূর আলম খন্দকারকে আহ্বায়ক এবং মামুন মাহমুদকে সদস্য সচিব করে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন দেয় মহাসচিব। এই কমিটি আড়াই হাজার ও সোনারগাঁয়ের ৫টি সাংগঠনিক থানা ও পৌরসভা ইউনিট গঠন করে।
সিদ্ধিরগঞ্জে সন্মেলনের মাধ্যমে ১০টি ওয়ার্ড কমিটি করা হয়। আড়াইহাজার থানা সন্মেলনে মহাসচিব প্রধান অতিথি ছিল। রুপগঞ্জ, কাঞ্চন,তারাবো,ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জে থানা আহ্বায়ক কমিটি সার্চ কমিটি করে গঠন করা হয়েছিল।
২০২১ সালের ১৫ এপ্রিল সিদ্ধিরগজ্ঞ থানা বিএনপির সন্মেলনে প্রতিপক্ষ গ্রুপ হামলা করে। বেশ কিছু নেতা-কর্মী রক্তাক্ত জখম হয়। এর ১০ দিনের মাথায় ঢাকার পল্টনে মামুন মাহমুদকে হত্যার চেষ্টা করা হয়।তদন্ত শেষে দলের একটি গ্রুপের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।
এর আগে তৈমূর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। মনিরুল ইসলাম রবি ও নাসির উদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক দিয়ে গত বছরের ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত চলে ওই কমিটি।
একই দিন গিয়াস উদ্দিনকে আহ্বায়ক,মামুন মাহমুদকে ১ নং যুগ্ম আহ্বায়ক, গোলাম ফারুক খোকনকে সদস্য সচিব করে ৯ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষনা করা হয়। শর্ত ছিল কমিটি অনুমোদনে ৩ জনের যৌথ স্বাক্ষর লাগবে।