সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে কাঁচপুর হাইওয়ে থানার শিমরাইল ক্যাম্পের টিআই একেএম শরফুদ্দিনের বিরুদ্ধে হকারদের বিক্ষোভের পর চাঁদাবাজদের সাথে টিআই শরফুদ্দিনের সমঝোতা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনার পর থেকেই ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড়ের দক্ষিণ পাশের কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সার্ভিস লেন ও ফুটপাত ফের দখলে নিয়েছেন চাঁদাবাজরা। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এই সমঝোতা হয়েছে বলে জানা গেছে। এর আগে চাঁদাবাজির টাকার ভাগ না পাওয়াতেই দীর্ঘদিন বন্ধ ছিলো শিমরাইল মোড়ের ফুটপাতের চাঁদাবাজি।
সোমবার (১০ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে শিমরাইল মোড়ে গেলে ফুটপাত দখলের চিত্র চোখে পড়ে। ফল দোকানিরা বলছেন স্যারের (টিআই শরফুদ্দিন) সাথে আমাদের মিল হয়ে গেছে। এখন আর কেউ সমস্যা করেনা।
একটি সূত্রে জানা যায়, গত দুই দিন আগে রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাংরোডস্থ ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের উপরে তাজমহল চাইনিজ এন্ড রেষ্টুরেন্টে কাঁচপুর হাইওয়ে থানার শিমরাইল ক্যাম্পের টিআই একেএম শরফুদ্দিনের সাথে ওই চাঁদাবাজদের বৈঠক হয়। ওই দীর্ঘক্ষণের বৈঠকে চাঁদাবাজদের সাথে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে টিআই শরফুদ্দিনের সাথে এই সমঝোতা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফল দোকানির সাথে কথা হলে তিনি জানান, কিছুদিন আগে একটি চাঁদাবাজ চক্র স্যারকে (টিআই শরফুদ্দিন) ম্যানেজ করার কথা বলে এখানে বসতে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রতিটি দোকানদারের কাছ থেকে অগ্রিম মোটা অংকের টাকা নিয়েছে। কিন্তু সেই টাকা স্যারকে না দিয়ে তারা (চাঁদাবাজ চক্র) নিয়ে খেয়ে ফেলেছে। দুই দিন পর শরফুদ্দিন স্যার আমাদের উঠিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু এবার তার সাথে ফাইনাল কথা হয়েছে। আমাদের আর কোন সমস্যা নেই। দৈনিক কতো টাকা করে দিতে হয় জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, প্রতিদিন ২০০/ টাকা এবং বড় দোকান হলে ৩০০/ টাকা দিতে হয়। অগ্রিম কতো টাকা দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি তা বলতে রাজি হননি।
এদিকে এক জুতার দোকানি বলেন, টাকা গেলেও সমস্যা নাই। প্রতিদিন পুলিশের দৌড়ানি খেতে ভালো লাগে না। এভাবে মনে ভয় থাকে কখন কি হয়। এতোদিন খুব কষ্টে দোকান চালাইছি। এখন একটু শান্তি পামু। টাকা গেলেও নির্ভয়ে দোকান চালাতে পারমু এটাই অনেক।
এর মধ্যে গত রোববার দুপুরে শিমরাইল মোড়ে চিহিৃত চাঁদাবাজ জামালের চাঁদাবজির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায় ফুটপাতের ফলের দোকান থেকে চাঁদার টাকা আদায় করতে গেলে এক ফল দোকানীর সাথে বাক বিতন্ডায় জড়িয়ে পরেন চাঁদাবাজ জামাল। এক পর্যায়ে ওই দোকানীকে লাঠি নিয়ে দৌড়ে মারতে গেলে আশপাশের বিভিন্ন দোকানীদের সহায়তায় চাঁদাবাজ জামালের হাত থেকে বেঁচে যান ওই দোকানি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ব্যবসায়ী বলেন, এসব চাঁদার টাকা কালেকশন করতে গিয়ে চাঁদাবাজ জামাল র্যাব ও পুলিশের হাতে একাধিকবার গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছেন। কিন্তু প্রশাসনের লোকজন জামালকে গ্রেফতার করার কিছুদিন পরই জামিনে বের করে নিয়ে আসেন চাঁদাবাজ চক্র। চাঁদার টাকা কালেকশন করতেই মূলত জামালকে ব্যবহার করছেন এই চক্রটি।
তিনি আরও জানান, গত ২০২১ সালে ৩১ জানুয়ারি ফুটপাতে চাঁদাবাজি কালে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। পরবর্তীতে আবারও চাঁদা আদায়ের সময় র্যাব-১১ এর সদস্যদের হাতে গ্রেফতার হয়ে জেল খাটেন এই চাঁদাবাজ জামাল। আর এই জামালকে কৌশলে ব্যবহার করছেন একটি শক্তিশালী চাঁদাবাজ চক্র। যারা মাসে মাসে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।
চাঁদা আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করে জামাল বলেন, আমি চাঁদার টাকার জন্য কোন দোকানদারকে মারি নাই। আমাদের নিজেদের মধ্যে মারামারি হয়েছে। আপনি চিটাগাংরোড আসেন সরাসরি কথা বলবো বলে ফোনটি রেখে দেন।
এ বিষয়ে জানতে কাঁচপুর হাইওয়ে থানার শিমরাইল ক্যাম্পের ইনচার্জ টি আই একেএম শরফুদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, আমার সাথে কারো সমঝোতা হয়নি। আমি এসব বিষয়ে কোন মাথা ঘামাই না। এসব আলতু ফালতু কথা শুইনেন নাতো। এসব বিষয় আমি কিছু জানি না