দিনে সবকিছু সাধারণ আর সাদামাটা। রাত হলেই পাল্টে যায় রূপ। বেজে উঠে ঢোল, তবলা। তৎপর হয়ে উঠে মাদক ব্যবসায়ী ও নিশিকন্যারা। বেড়ে যায় মোটরসাইকেল আরোহী যুবকদের আনাগুনা। বাতাসে ভেসে বেড়ায় গাঁজার গন্ধ। শুরু হয় জুয়া।
প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় আর প্রশাসনের অদৃশ্য ঈশারায় প্রতিটি পাড়া মহল্লা যেন মাদকের বাজার। অসামাজিক কার্যকলাপ চালাতে সুবিধাজনক একাধিক স্থানে জমে গানের আসর। ফ্ল্যাট বাসাতে গড়ে তুলা হয়েছে মধুকুঞ্জ। ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে ডাকাত ছিনতাইকারিরা। এমনটাই প্রাচ্যের ড্যান্ডিখ্যাত নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকার রাতের চিত্র।
জানা গেছে, শিল্পনগরি সিদ্ধিরগঞ্জে রাতে সাইনবোর্ড প্রো-অ্যাকটিভ হাসপাতালের উত্তর পাশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন, শিমরাইল মাছ বাজারের সামনে, জালকুড়ি ও গোদনাইল লাকি বাজারে চলে গানের আসর। প্রশাসনের প্রত্যক্ষ অনুমতি না থাকলেও পরোক্ষ অনুমতিতেই এসব আসর চলছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
সরেজমিনে গানের আসরে দেখা গেছে অশ্লীলতার বাস্তব চিত্র। গান আয়োজনের আড়ালে অভিনব কৌশলে চালানো হচ্ছে দেহব্যবসা। আসর জমিয়ে তুলে নিশিকন্যারা। আসরে নারী লিপ্সুদের উপস্থিতি লক্ষনীয়। তারা নিয়মিত আসেন টাকা উড়াতে। গান ও অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি দেখে নারী শিল্পিদের শরীরে ছুড়ে মারেন টাকা। নারী লিপ্সুদের মনোরঞ্জনের জন্য শিল্পি নামধারী নিশিকন্যাদের ব্যবস্থা রয়েছে আসরে।
দরদাম ঠিক করার জন্য প্রতিটি আসরে রয়েয়ে একাধিক দালাল। একদিকে গান অপর দিকে দেদারছে চলে মাদক ও নারী বেচা কিনা। শেল্টারদাতারাও আসরে আসেন বখরা নিতে। বিভিন্ন পাড়া মহল্লার অলিগলিতে প্রবেশ করলেই পাওয়া যায় গাঁজার গন্ধ। মাদক বিক্রি চলে প্রকাশ্যে।
সিদ্ধিরগঞ্জের রাতের চিত্রের উদ্বেগ প্রকাশ করে একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, শুধু গানের আসর নয়, বিভিন্ন অভিজাত এলাকার বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট বাসায় কমপক্ষে শতাধিক মধুকুঞ্জ গড়ে তোলা হয়েছে। এসব কুঞ্জে নিয়মিত বসে মাদক সেবনের আসর। রয়েছে নারীর সঙ্গে একান্ত সময় কাটানোর ব্যবস্থা।
পাতি নেতা, শিল্পপতি, স্থানীয় সন্ত্রাসী এমনকি প্রশাসনের একশ্রেণির কর্মকর্তাদের আনাগোন রয়েছে এসব মধুকুঞ্জে। একাধিক ফ্ল্যাটে কোটি কোটি টাকার জুয়া খেলাও চলছে। আসামাজিক কার্যকলাপ ইস্যুতেই জালকুড়ি এলাকায় গানের আসর থেকে নিয়ে গত ১৯ মে নাসরিন আক্তার নামে এক নারীকে হত্যার ঘটনাটিও তুলে ধরেন তিনি।
এ প্রতিবেদকের কথা হয় শিমরাইল মাছ বাজারের সামনে গানের আসরের পাশে সিএনজি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা চালক বশিরউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রতি শুক্রবার রাত ১১ টার পর গানের আসরে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করি। আপাদের নিয়ে ভাইয়েরা যেখানে যেতে বলে সেখানে যাই। আপা ও ভাইয়েরা কারা জানতে চাইলে তিনি মুচকি হেঁেস বলেন আকামলা।
সাইনবোর্ড গানের আসরের ৫০ গজ দূরে দাঁড়িয়ে থাকা মিশুক চালক বিল্লাল মিয়াকে মৌচাক যেতে বললে তিনি রাজি না হয়ে বলেন খেফ আছে। প্রায় ১০ মিনিট পর গানের আসরের দিক থেকে ২৫ বছরের এক যুবক সমবয়সী এক নারীকে নিয়ে মিশুকে উঠে সানারপাড়ের দিকে চলে যায়। পাশের চা দোকানদারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এধরণের বহু নারী গানের আসরের আয়োজকদের সঙ্গে আঁতাত করে দেহ ব্যবসা করছে। তাদের আয়ের একটি অংশ পাচ্ছে গানের আয়োজকরা।
বিভিন্ন আসরে নিয়মিত গান পরিবেশন করা একজন শিল্পি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,আসরে শিল্পিদের কাতারে বসে থাকা যুবতীরা সবাই শিল্পি না। তারা আয়োজকদের আয়ের উৎস। খদ্দের যাকে পছন্দ করে সে এক দেড় হাজার টাকায় একান্ত সময় কাটিয়ে আবার আসরে চলে আসে। আসরের আশপাশেই এধরণের ব্যবস্থা করা আছে। আর দূর দূরান্ত থেকে বিভিন্ন বিত্তবানরা গাড়ি নিয়ে এসে পছন্দের নারীকে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকায় এক রাতের জন্য নিয়ে যায়।
মিজমিজির স্থায়ী বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন জানান, সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় কমপক্ষে দুইশতাধিক মাদক স্পট রয়েছে। এসব স্পটে দৈনিক কমপক্ষে কোটি টাকার মাদক দ্রব্য বিক্রি হচ্ছে। মাদক দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন ও মদ। গত ১৪ জুলাই গোদনাইল মন্ডলপাড়া এলাকায় ড্রেন পরিস্কার করতে গিয়ে ফেনসিডিলের কয়েক হাজার খালি বোতল পেয়েছে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নকর্মীরা।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি গোলাম মোস্তফা বলেন,গান ও জুয়ার আসরের কোন অনুমতি দেওয়া হয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ছিনতাই ডাকাতি রোধ ও মাদকে