বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, তারেক-জুবাইদার রায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছে। সরকার অশুভ উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলার সাজাগুলো দিচ্ছে। কিন্তু এতে কোনো লাভ হয়নি, কেউ দমে যায়নি।
তিনি বলেন, জাতীয়তাবাদী শক্তির নেতাকর্মীরা আজকে উজ্জীবিত। তাই পুলিশের বুলেটকে বুকে ধারণ করে আওয়ামী লীগের গুন্ডাদের লাঠি-অস্ত্রের কোপ খেয়ে দাঁড়িয়ে আছি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য।
শনিবার (৫ আগস্ট) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য মাহমুদ হোসেনের পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাতে এসে রিজভী এসব কথা বলেন। ২৮ জুলাই ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশে অংশ নিতে গিয়ে তিনি মারা যান।
মাহমুদের প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, আমাদের প্রত্যেকটি নেতাকর্মী মানসিক চাপে আছেন। যেমনি শারীরিক নির্যাতনে শিকার, তেমনি মানসিক চাপ। বাসায় বসে থাকলেও তার নামে মামলা হয়। প্রতিনিয়ত পুলিশি আক্রমণ এবং আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। মানসিকভাবে তারা এমনভাবে বিপর্যস্থ যে, আমাদের নেতাকর্মী কখন কে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবেন তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। মাহমুদ সে ধরনেরই পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, মাহমুদের নামে মামলা আছে। কিন্তু তিনি এতই নিবেদিত ছিলেন কখনো কর্মসূচি থেকে বিরত থাকতেন না। যার কারণে অসুস্থ অবস্থায়ই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন। ঢাকার সমাবেশস্থলে গিয়ে শ্লোগান দিতে দিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। এই বেদনাবিদুর ঘটনায় শোক জানানোর ভাষা আমাদের নেই। তার মতো নিবেদিত নেতাকর্মীরা আছে বলেই জাতীয়তাবাদী শক্তি টিকে আছে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বন্দি করে রেখেছে। কিন্তু তার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আওয়াজ আজও আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। এ দলের জনপ্রিয় নেতা যিনি গোটা দেশকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে। লন্ডন থেকে যেভাবে সুসংগঠিত করছেন প্রযুক্তির মাধ্যমে তার কণ্ঠ তার নির্দেশ তার আহ্বান শুনতে পাচ্ছি। তার বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দেওয়া হচ্ছে। দুদিন আগে তিনি এবং তার সহধর্মিণীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছে। যাতে তিনি দেশে ফিরে না আসতে পারেন এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্থ হন।
জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে রায়ের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এ ভদ্রমহিলা সারাদেশে সজ্জন এবং প্রখ্যাত চিকিৎসক হিসেবে মানুষের সেবা করছেন। তিনি একজন বিখ্যাত পরিবারের সন্তান। শুধু হেয় করার জন্য সরকার তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। তারেক রহমান এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো দেওয়া হয়েছে তার একটিও সত্য নয়। মাত্র এক মাসের মধ্যে সাক্ষী জোগাড় করে দ্রুতগতিতে রায় ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ কত মামলা আছে। সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এ মামলা দিয়েছে।
বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না উল্লেখ করে রিজভী বলেন, শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে তারপর নির্বাচন করবে বিএনপি। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে ওই নির্বাচন হবে না, ওটা হবে নিশি রাতের নির্বাচন অথবা অন্য কোনো নির্বাচন। এটা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান, মহানগর বিএনপির নেতা কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকু, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন আনু, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নাহিদ হাসান ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের রহমান জিকু প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ জুলাই নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ যোগ দিতে গিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির নেতা মাহমুদ হোসেন। কিন্তু সমাবেশ পর্যন্ত আর যাওয়া হয়নি তার। মিছিলের নেতৃত্ব দিয়ে ফকিরাপুল যেতেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সেখানে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।