1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : Narayanaganj Press : Narayanaganj Press
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪৯ অপরাহ্ন

চরম ভোগান্তিতে নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে সেবা প্রত্যাশীরা

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ৭ আগস্ট, ২০২৩
  • ২২৯ Time View

একদিকে দালালদের দৌরাত্ব অন্যদিকে দায়িত্বরত চিকিৎসকের অবহেলার কারনে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে সেবা নিতে আসা সাধারন মানুষদের। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসা সেবা প্রত্যাশীরা হাসপাতালে ছুটে গেলেও দায়িত্বরত চিকিৎসকের অবহেলার কারনে অনেকটাই হতাশাগ্রস্থ হয়ে ফিরতে হচ্ছে চিকিৎসা সেবা প্রত্যাশীদের।

 

সোমবার ৭ (আগষ্ট) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে সরজমিনে পরিদর্শনকালে এমন চিত্রই ফুটে উঠে এ প্রতিবেদকের কাছে। এসময় ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা সাধারন মানুষ, হাসপাতালের কর্ত্যবরত চিকিৎসক সাবিনা ইয়াস মিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, জরুরী বিভাগের বাহিরে লাগানো সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে রোগী দেখে প্রেসক্রিপশন লিখে দিচ্ছেন তিনি। রোগীর অবস্থা অতিরিক্ত খারাপ পর্যায়ের হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক সাবিনা ইয়াস মিন এগিয়ে আসলেও দায় সর্বস্ব রোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদানের মাধ্যমে ঢাকা রেফার্ড করছেন।

 

অথচ, সেবা প্রত্যাশী সাধারন রোগীদের গুরুত্ব সহকারে প্রত্যাশিত সেবা দেয়া হলে সাধারন রোগীরা অনেকটাই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। যত্ন নেয়া হলে হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসকের। এমন পরিণতিতে হাসপাতালে আসা রোগীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। দীর্ঘদীন ধরে চলে আসা নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার নামে চলমান নৈরাজ্য ও নির্মমতা! দেখার যেন কেউ নেই নারায়ণগঞ্জ জেলায়!
নারায়ণগঞ্জ নিউজ পেপারর্স ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি এবং স্থানীয় দৈনিক ডান্ডিবার্তার প্রকাশক ও সম্পাদক হাবিবুর রহমান বাদল জানান, তার দেড় বছরের নাতি বারাকা শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষনিক আমরা নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে ছুটে যাই। এসময় জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক সাবিনা ইয়াসমিন নাম সর্বস্ব ভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন।

 

এক পর্যায়ে তিনি তার পরিচয় দিলেও ডাক্তার সাবিনা ইয়াসমিন জানান, তাদের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়ছে। একই অভিযোগ করেন, হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা একাধিক ভোক্তভোগী সেবা প্রত্যাশী সাধারন মানুষ।
সূত্রমতে, একটু ভালো আর বিনামূল্যে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা পেতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বড় আশা নিয়ে দরিদ্র রোগীরা হাসপাতালে ছুটে আসে। কিন্তু এখানে এসেই তাদের পড়তে হয় বিপাকে, নানা বিড়ম্বনায়। হাসপাতালের প্রবেশ গেট থেকে শুরু করে কেবিন, বেড পর্যন্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এক শ্রেণির দালাল।

 

নানা প্রলোভন, যেমন দ্রুত ডাক্তার সেবা পাইয়ে দেয়া, প্রয়োজনীয় ঔষধ, থাকার জন্য কেবিন ইত্যাদি দেখিয়ে তারা দরিদ্র ও সহজ সরল রোগীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে এক রকম সর্বস্বান্ত করে ছাড়ে। বিষয়টা অনেকটা এমনই- আগে টাকা পরে চিকিৎসা সেবা।

 

এদের খপ্পরে পরে অনেকেরই চিকিৎসা সেবা তো দূরের কথা উল্টো দ্বিগুণ অসুস্থ হয়ে কখনো হাসপাতালের বারান্দায়ও শুয়ে কাতরাতে দেখা যায়। ওই সব দালালই এই পর্ব শেষে আবার সরকারি মেডিকেলের কাজের হতাশাপূর্ণ বর্ণনা দিয়ে প্রাইভেট ডাক্তারদের কাছে চিকিৎসা নিতে উদ্বুদ্ধ করে।
অভিযোগ আছে, এরা সরকারি ডাক্তারদের দ্বারা নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রিত আর রোগী প্রতি এসব দালালদের ডাক্তাররা কমিশন দিয়ে থাকে। এদিকে হাসপাতালের অদক্ষ কর্মকর্তারা ও স্বার্থান্বেষী ডাক্তারদের কারনে হাসপাতালে এক্স-রে, মেশিন, ডেন্টাল যন্ত্রপাতি, প্যাথলজিস্ট যন্ত্রপাতি, আর্ট বিভাগের যন্ত্রপাতি ইত্যাদিসহ বহু নাম না জানা মূল্যবান চিকিৎসা সামগ্রী ব্যবহারের অভাবে অকেজো হয়ে পড়ে আছে হাসপাতালে। কারন রোগীকে দরকারি ও অদরকারি প্যাথলজি টেস্টের জন্য লম্বা স্লিপ দিয়ে মনোনীত ক্লিনিক কিংবা ল্যাবরেটরি থেকে পরীক্ষা করার জন্য পাঠানো হচ্ছে নিজেদের কমিশনের জন্য।
মনোনীত ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক ছাড়া অন্য কোথাও থেকে করলে সেগুলো অগ্রহণযোগ্য বলেন ডাক্তাররা এবং পুনরায় পরীক্ষা করতে বলছে বিভিন্ন অজুহাতে। ফলে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার আশায় আগত সাধারণ মানুষ ওই সমস্ত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

 

কারন ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের ডাক্তাররা তাদের সরকারি কর্মক্ষেত্রের চেয়ে নিজের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। হাসপাতালে প্রতিটি ডাক্তারের কক্ষের সামনে সিরিয়ালে রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কেউ আবার পরীক্ষা করতে ছুটছে ডাক্তারের মনোনীত বিভিন্ন ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোতে।
এমনই কিছু ভুক্তভোগী রোগীদের সাথে কথা হলে তার মধ্যে জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক সাবিনা ইয়াসমিনের কক্ষের বাহির দাড়িয়ে থাকা মিনারা বলেন, আমার শরীরে ব্যথা তাই ডাক্তারের কাছে আইছি। গত ৫ দিন ধইরা ঘুরতাছি। ডাক্তারকে দেখানোর পর আমারে কতগুলো পরীক্ষা করতে ইউনিক কেয়ারে।
আমি ডাক্তার দেখাইয়া বের হবার পর ডাক্তারের রুমের সামনে একজন দাঁড়িয়ে ছিলো সে বললো আমার সাথে আসেন তিনি আমাকে নিয়ে গেলো। সেই লোক আমাকে বলছে স্যার (ডা.মোঃ ইউনুস আলী সরদার) চাষাড়ায় চেম্বারে ২০০ টাকা ভিজিট দিয়ে রোগী দেখে স্যারের কাছে যাইতে কইছে।

 

আমি পরীক্ষা করতে গেছি সেইখানে ৩ হাজার টাকা পরীক্ষায় আমার কাছ থেকে মাত্র ৩০০ টাকা কম রাখছে। আমি গরীব মানুষ বাবা তাই আমি চেম্বারে যাই নাই তাই আমাকে ২য় তলায় পাঠাইছে। গতকাল আসতে কইছে কিন্ত গতকাল ডাক্তারের রুম বন্ধ আছিলো তাই আজকা আইছি।

 

একই জায়গায় ২ বছরের শিশু আহসানউল্লাহর পা ভাঙা নিয়ে মা রমেজা বেগমকে ইউনাইটেড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাত ভাঙা সমস্যা নিয়ে ৪০ বছর বয়স্ক বৃদ্ধা ইব্রাহিম রহমানকে মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিস সহ একাধিক রোগীদের এক্সে-রে হাতে নিয়ে বসে ডাক্তার দেখানোর সিরিয়ালে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।

 

আল্ট্রাসোনগ্রাম করতে হাসপাতাল থেকে বের হওয়া রোজিনা বেগমের সাথে কথা হলে তিনি জানায়,ডাক্তার আল্ট্রাসোনগ্রাম করতে দিছে মেডিনোভায় সেটা করাতে যাচ্ছি। গার্মেন্টস কাজ করে খাই। এখন এই পরীক্ষা করতে ৬০০-৭০০ টাকা লাগবে এত টাকা কি আমাদের মত গরীবদের দিয়ে পরীক্ষা করা সম্ভব।
হাসপাতালে পরীক্ষা দিতে কইলাম ডাক্তার কইলো মেশিন নাকি নষ্ট বাহিরে করতে হবে। আর বেশি কথা কইতে না করলো। পাগলা থেকে ফাতেমা বেগম শারীরিক সমস্যা নিয়ে আসা তাকে ইউনাইটেড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রক্ত পরীক্ষা, প্রেসাব পরীক্ষা, আল্ট্রাসোনগ্রাম করতে দেওয়া হয়েছে। এত গুলোর পরীক্ষা করতে লাগবে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। এত টাকার পরীক্ষা নিয়ে বিপাকে পড়েছে তিনি বলে জানান এই ভুক্তভোগী রোগী।

 

হাসপাতালের এক কর্মচারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি জানায়, হাসপাতালের প্রতিটি ডাক্তার নিজেদের আলাদা চেম্বার খুলে বসেছে। এবং বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে কন্ট্রাক্ট করে রেখেছে তারা রোগী পাঠাবে বিভিন্ন পরীক্ষা করতে বিনিময়ে তাদের কমিশন দেওয়া হবে। কমিশনের লোভে ডাক্তাররা দরকারি ওদরকারি বিভিন্ন পরীক্ষা করতে ওই ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে পাঠানো হচ্ছে।

 

হাসপাতালে আল্ট্রাসোগ্রাম,এক্স-রে সহ অন্যান্য পরীক্ষা কিভাবে করবে এই মেশিন ঠিক করলে দুইদিন পর পর নষ্ট হয়।ঠিক করার পর আবার ভূল রিপোর্ট আসে।পুরাতন জিনিস দিয়েই বা আর কত দিন। আমার হচ্ছে মেশিনে সমস্যা তা পরিবর্তন না করে যদি তেল দিয়ে বারবার ঠিক করি তাহলে মেশিন তো নষ্ট হবেই আর ভূল রিপোর্টও আসবে।

আর সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডাক্তাদের পেটের ক্ষুদা বেশি তাই তারা সকল পরীক্ষা বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে পাঠায় নিজদের কমিশনের জন্য। তাছাড়া রোগী দেখার সময় ডাক্তাররা তাদের বিভিন্ন রকম মিটিং নিয়ে থাকে ব্যস্ত। দুপুরের খাবারের আগেই ডাক্তারসহ নাসরা বিরতিতে চলে যায়। নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরেও তাঁদের দেখা মেলে না।

 

অন্যদিকে হাসপাতালে ডাক্তাররা কর্তব্যরত থাকা অবস্থায় বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের উপস্থিতি। দামী গিফট কিংবা বড় ধরনের সুবিধা পাওয়ার আশায় অনেক সময় ওই সব প্রতিনিধির সাথে ডাক্তারদের গল্প ও আলাপ-চারিতায় মেতে উঠতে দেখা যায়। তাদের এই কার্যক্রমের মাধ্যমেও লাইনে অপেক্ষামান থাকা রোগীদের নানা হয়রানির শিকার হতে হয়।

ডাক্তারদের অবহেলা ও অনুপস্থিতির সুযোগে নার্স, ওয়ার্ড বয় ও আয়ারাই হয়ে উঠে সর্বেসর্বা। রোগী দেখা থেকে শুরু করে অস্ত্রোপচার পর্যন্ত করছে এসকল নার্স, ওয়ার্ড বয় ও আয়ারাই অবলীলায়। সুযোগ-সুবিধাহীন সরকারি জেনারেল হাসপাতালে একশ্রেণির ডাক্তার, নার্স, আয়া-কর্মচারীর চরম দুর্ব্যবহারের সামনে রোগীরা থাকছেন বড়ই অসহায়।

হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীসহ অন্যান্য রোগীরা পর্যাপ্ত ঔষধ থাকা সত্তেও সঠিকভাবে ঔষধ পায় না। ডাক্তারদের লেখা স্লিপ নিয়ে ঔষধ আনতে গেলেই ২/১টা সস্তা ঔষধ দিয়ে বলা হয়, বাকীগুলো স্টোরে নেই তাই বাহির থেকে কিনতে হবে। অথচ বাহিরের ফার্মেসীতে গেলেই দেখা যায় না পাওয়া ঔষধগুলো অগ্নিমূল্য।

এতসব দামী ঔষধ তাহলে যায় কোথায়?দেশের বেশিরভাগ চিকিৎসকদের বাণিজ্যিক মন-মানসিকতার কবলে পড়ে সাধারণ মানুষ সরকারি চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না।

নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের দালাল, ডাক্তার, নার্সদের দৌরাত্ম্যে রোগীদের বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক থেকে পরীক্ষার দূর্ভোগের বিষয় সম্পর্কে হাসপাতালের তত্বাবধায়ক বলেন, এগুলোতে পুরান খবর নতুন কিছু থাকলে তা বলতে পারেন।
হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষাগুলো কেন বাহিরে ডাক্তারের মনোনীত ডায়গনিষ্টিকে পাঠানো হচ্ছে তাহলে হাসপাতালে এক্স-রে মেশিনসহ সবগুলো কি অকেজো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাসপাতালের এক্সরে মেশিনটি এনালগ, ডিজিটালটি নষ্ট। তাছাড়া সে সকল ডাক্তারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের সাথে কথা বলুন।
তিনি আরও বলেন, এমন কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে সেই রোগীকে বলবেন আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করতে।

নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. এ এফ এম মুশিউর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলে তা ব্যস্ত পাওয়া যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© ২০২৩ | সকল স্বত্ব  নারায়ণগঞ্জ প্রেস কর্তৃক সংরক্ষিত
Designed by RIAZUL