দীর্ঘদিন ধরে গ্রেফতার হচ্ছে না ফতুল্লার আলোচিত মাদক ব্যবসায়ীরা। ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা এসব মাদক ব্যবসায়ীরা কোটিপতি বনে গেছে।
বিশেষ করে গত দুই বছরে শীর্ষ ব্যবসায়ীদের কেউ গ্রেফতার না হওয়ায় তাঁদের ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছে।
সবাই আলীশান জীবন যাপন করছেন। আগে এসব ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে আসলেও এখন তাঁরা পর্দার আড়ালে থেকে বিশাল বাহিনী নিয়ে কৌশল পাল্টে মাদক ব্যবসা করছেন। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, দুই বছর আগেও যাদের নূন আনতে পান্তা ফুরাতো এখন ওইসব মাদক ব্যবসায়ীদের কেউ বহুতল ভবনের মালিক হয়েছেন, কেউ দামী গাড়ি হাঁকিয়ে চলছেন।
আর এদের পেছনে শেল্টারদাতা হিসেবে রয়েছে কোন না কোন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা কিংবা নামধারী কোন সাংবাদিক। ফলে চিহ্নত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সাহস করে প্রতিবাদ করছে না কেউ। প্রতিবাদ কিংবা প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও নানাভাবে হয়রানীর শিকার হতে এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
সচেতন মহলের মতে, ফতুল্লার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী এবং শেল্টারদাতাদের আইনের আওতায় আনা জরুরী। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল।
তথ্যমতে, ফতুল্লার আলোচিত এবং পুলিশের তালিকা ভূক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতন হচ্ছে দাপা খোঁজপাড়া এলাকায় টিকিমারা লিটন। দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষ সন্ত্রাসী তুষার আহমেদ মিঠুর শেল্টারে থেকে মাদক ব্যবসা করে টোকাই থেকে কোটিপতি বনে গেছে। জেলার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ইব্রাহীম অরুফে ইবু ফতুল্লা জোরপুল এলাকায় অবস্থান নিয়ে ফতুল্লা এবং ফতুল্লার বাইরের মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে।
মাদক ব্যবসা করে কোটিপতি বনে যাওয়া ইবু এখন মাদকের গডফাদার হিসেবে পরিচিত। দাপা ব্যাংককলোনী এলাকার ডাকাত শাহীনের পুরো পরিবার মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে। এক ভাই বোমা লিপু কয়েক বছর আগে ডিবি পুলিশের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধ নিহত হয়েছে। ডাকাত লিপুর মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে অপর ভাই ডিসান,ডাকাত শাহীন, ভাতিজা আলামিন,রাজিব। মাদক ব্যবসা করে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছে এই পরিবার।
একই এলাকায় মহসিন, শাকিল, সুরু বাবু বিশাল বাহিনী নিয়ে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছে। ডিসান ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। ডাকাত দিন ইসলাম মাদক ব্যবসা করছে অনেক দিন ধরে। বাক প্রতিবন্ধী ভাইদের দিয়ে এই ব্যবসা পরিচালনা করছে। স্টেশন এলাকার নাসির শেঠ অরুফে গরু নাসির, তাঁর বোন হেনা, ছেলে শান্ত, ভাগ্নে বিপ্লব দীর্ঘদিন গাঁজা এবং হেরোইনের ব্যবসার সাথে জড়িত।
প্রতিদিন ভোরে মাদকের হাট বসিয়ে মাদক বিক্রি করছে দীর্ঘদিন ধরে। বহুতল ভবনের মালিক হয়েছেন তিনিও। দাপা সরদার বাড়ী এলাকার ইলিয়াস ডাইং ব্যবসার অন্তরালে দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। মাদকের বড় চালানগুলো তাঁর নিজ হাত ধরেই আসতো ফতুল্লায়। বর্তমানে অঢেল সম্পদের মালিক তিনি।
থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এইচ এম ইসহাকের ছোট ভাই ইলিয়াস দীর্ঘদিন ধরে মাদকের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে। ভাই প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় সব সময়ই অধরা থেকে যাচ্ছে এই ব্যবসায়ী। আলীগঞ্জের শান্ত,শল্টুু রাসেল বিশাল বাহিনী নিয়ে মাদকের হাট বসিয়েছে পুরো আলীগঞ্জ জুড়ে।
সুকৌশলে মাদকের রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে এই দুই ব্যবসায়ী। সেহাচর হাজী বাড়ী এলাকার মনার মাদক ব্যবসা বহু বছরের পুরনো। দাপা শৈলকুড়া এলাকার ছাত্রদল ক্যাডার দিপু আলোচনার বাইরে থেকে কয়েক বছর ধরে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছে।
সব সময়ই আলোচনার বাইরে থেকে ব্যবসা করছে তিনি। মাদকের অন্যতম ডিলার ডাকাত শাহাবুদ্দিন। দীর্ঘদিন ধরে নানা কৌশলে দাপা, শাহজাহান রোলিং মিল এলাকায় চলছে তার মাদক ব্যবসা। এছড়াও ফাহিমের পুরো পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন কয়েক বছর ধরে মাদক ব্যবসা করে আসছে। লামাপাড়া এলাকার আলোচিত চুন্নু এবং মিথুন মাদকের গডফাদার বনে গেছে। তারা দু’জনেই এখন আলোচনার বাইরে রয়েছে। জামতলার আপেল অধরা দীর্ঘদিন ধরে।
সস্তাপুরের মাদক ব্যবসায়ী মোল্লা মামুনের সহযোগী কোতালেরবাগের দিপু মাদকসহ কুমিল্লায় গ্রেফতারের পর আলোচনায় আসে বোমা মতি এবং রুবেলের মাদক ব্যবসা। ডাইং ব্যবসার আড়ালে এরা দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা করে আসছে এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। ডাইং ব্যবসার আড়ালে দাপা সরদার বাড়ী এলাকার ইলিয়াসের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগ দীর্ঘদিনের হলেও বরাবরই আলোচনার বাইরে থেকে গেছে।
মাদকের রাঘববোয়ালদের পাশাপাশী পুরান ক্যালিক্সের সাজ্জাদ, শাহজাহান রোলিং মিলের মোটা সোহেল, ভাগ্নে আলামিন, সেরুবাবু, চুইল্যা বাবু, মোল্লা রাসেল, দিল মোহাম্মদ অরুফে দিলা, সুমন, নূর মসজিদের মনির, মোরশেদ,আলম, সাইফুল, মেলা মিন্টু,ডাকাত তুজ,মাথা মোটা বাবুল, আলপনা,দাপা এলাকার ডাকাত আজমীর, আলামিন, আলী, রবীন, হাজীবাড়ীর আলতাফ, শাওন,মুন্না,খাবাড়ীর রাসেল,কাশেম বাবুর্চি, সুমন, মাইছ্যা শাহজাহান, তাঁরা মেয়ে স্মৃতি, ফাহিম, লাকি, হেনা, ডিব্বা সোহেল,পিলকুনীর ড্রাইভার অভি,বালুমাঠের টাউক্কা জাকির,লালপুরের কানা সুমন,রনি, জাফর, রোস্তম,পিলকুনি জোড়া মসজিদ এলাকার মেলা মিন্টু, মাইছ্যা আলম, সাইফুল,নাইট পারভীন হান্ড্রেড বাবু,জনি,বাবু অন্যতম। আলোচনার বাইরে থাকা এসব মাদক ব্যবসায়ীদে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হস্তক্ষেপ দাবী করেছে ফতুল্লাবাসী।
এব্যাপারে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরে বযম মিয়া জানান, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। সেলসম্যানদের পাশাপাশি গডফাদারদেরও আইনের আওতায় আনাতে কাজ শুরু করেছি। কোন মাদক ব্যবসায়ীকে ছাড় দেয়া হবে না।