বার বার উচ্ছেদ হয় কিন্তু দখলমুক্ত হয়না। সকালে উচ্ছেদ হলে সন্ধ্যায় আবারও দখল হয়ে যায় নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ের ভুমি । অবৈধ দখলদাররা এভাবেই রেলের জাগয়া দখল করে লাখ লাখ টাকার মালিক হয়েছেন এবং হচ্ছেনও।
রেলের যাত্রীরা বলছেন, কতিপয় কিছু রেলের অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে অবৈধ দখলদাররা রেলের ভুমি দখল করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলছেন। তারা অবৈধ স্থাপনা ভাড়া দিয়ে রাতের আধাঁরে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছেন।
অপরদিকে এ অবৈধ স্থাপনার কারণে রেলের জায়গা সংকট হয়ে যাওয়ায় যাত্রীরা ঠিকমত চলাফেরা করতে পারছেনা। ফলে প্রতিনিয়তই তারা দূর্ঘটনার কবলে পড়ছেন।
যাত্রীরা আরও বলেন, একটি দূর্ঘটনা হলে কিছুদিন প্রশাসন নড়েচরে বসে, তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। কিন্তু তদন্তের রির্পোট সহজে জমা পড়েনা। দিনের পর দিন আর রাতের পর রাত পাড় হয়ে গেলেও তদন্ত চলে কচ্ছপ গতিতে। এভাবে একসময় সব কিছুই ধামাচাপা পড়ে যায়। কিন্তু দূর্ঘটনায় যে পরিবারটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়, সেই পরিবার প্রাথমিকভাবে আর্থিক কিছু সহযোগীতা পেলেও সারাটি জীবন স্বজন হারানো বেদনা তাদেরকে বহন করতে হয়।
২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনে সামনে বাস- ট্রেনের সংঘর্ষে ঘটে এক ভয়াবহ দূর্ঘটনা। ওই দূর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই দুই জনের মৃত্যু হয়। আহত হয় কমপক্ষে ৭ জন। এদের মধ্যে বেশ কয়েজন পথচারীও ছিলো।
জানাগেছে, রেলের জায়গা অবৈধ দখল হওয়ায় সেদিন বাসটিকে রেলক্রসিং থেকে সরাতে পারেনি চালক। রেললাইনের দুপাশ এমনভাবে দখল করা হয়েছিলো যে, বাসটিকে একচুল পর্যন্ত সরানো সম্ভব হয়নি। যদি সম্ভব হতো, তাহলে হয়তো বেঁচে যেতো অনেক প্রাণ।
এ ঘটনার পর পরই অনেকটাই নড়েচরে বসে প্রশাসন ও রেলকর্তৃপক্ষ। তারা দ্রুত রেলের জাগয়া অবৈধ দখলমুক্ত করেন। তবে তার কিছুদিন পরই পাল্টে যায় এর চিত্র। আবারও পুরনো রূপে ফিরে যায় নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশন।
ঠিক তেমনি গত মাস দুয়েক আগে তিনজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। বড় দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, তার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই আবারও দখল হয়ে যায় রেলের আশাপাশ এলাকা। রেলের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে ভাতের হোটেল, চা-সিগারেটের দোকান, ফলের আড়ৎ ও থান কাপরের দোকান ও বাজারসহ আরও অনেক দোকানপাট।
অভিযোগ রয়েছে, এসব অবৈধ দোকানপাটের পেছনে খোদ স্টেশন মাস্টার কামরুল ইসলামেরই নাকি হাত রয়েছে। এসব দোকানপাট থেকে স্টেশন মাস্টারের নামে সুইপার মো: মুফাজ্জল হোসেন প্রতিদিন হারে একটা চাঁদা তোলেন। সেই টাকা পদ মর্যাদা অনুসারে ভাগবন্টন করা হয়। শুধু তাই নয়, এই সুইপার মুফাজ্জলকে দিয়ে বহু অফিসিয়াল কাজও করা হয়। টিকিট বিক্রি থেকে শুরু করে অনেক বড় বড় দায়িত্ব এখন এই মুফাজ্জলই করে থাকেন।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ স্টেশন মাস্টার কামরুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, মুফাজ্জল আমার নামে টাকা তোলে এটা আমি জানিনা। আমার নামে যদি টাকা তোলা হতো, তাহলে আমি জানতাম। মুফাজ্জল আমাদের এখানকার পরিচ্ছন্নতাকর্মী (সুইপার)। যদি সে আমার নামে টাকা তোলে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের জনবল কম থাকায় তাকে দিয়ে অনেক সময় আমরা অফিসিয়াল অনেক কাজ করিয়ে থাকি। তবে তার মূলত কাজ হলো রেলস্টেশন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
‘একজন স্টেশন মাস্টার থাকা সত্বেও কিভাবে রেলের জায়গা অবৈধভাবে দখল হয় এবং সেখানে কিভাবে রাতে আধাঁরে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠে, তাদের বিরুদ্ধে কেন স্টেশন মাস্টার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না’ এমন সব প্রশ্নের কোন প্রতিউত্তর দিতে পারেননি নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশন মাস্টার কামরুল ইসলাম।