1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : Narayanaganj Press : Narayanaganj Press
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১৮ অপরাহ্ন

চাঁদাবাজিতে থেমে নেই সেই নুর হোসেনের স্বজনরা

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৩
  • ২৬৮ Time View

আলোচিত সাত খুনের ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামি নরঘাতক নুর হোসেন কারাগারে যাওয়ার পর তার অপরাধ সাম্রাজ্র্য বিভিন্ন জনের নিয়ন্ত্রনে চলে যায়।

এরপর গত বছরের ডিসেম্বরে নাসিক নির্বাচনে তার ভাই নুরুউদ্দিন অংশ নিয়ে নানা আলোচানা সমালোচান ও আতংক সৃষ্টি করে নির্বাচনে ছক পাল্টে দিয়ে হলেন কাউন্সিলর। সেই সাথে পাল্টাতে থাকে নাসিক ৪নং ওয়ার্ডের দৃশ্যপট। নুর হোসেনের অবর্তমানে ভাই-ভাতিজাদের নিয়ে নুর উদ্দিন মিয়া নুর হোসেনের অপরাধ সাম্রাজ্য ফিরে পেতে মাঠে নামেন।
তবে তিনি প্রকাশ্যে নন, নেপথ্যে থেকে ভাই, ভাতিজা স্বজনদের মাধ্যমে প্রতিটি সেক্টরের নিয়ন্ত্রন ফিরিয়ে নিতে ছক শুরু করেন। অধিকাংশই নিয়ে নেন তাদের নিয়ন্ত্রনে।

মেতে উঠেন তারা কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার মিশনে, অবাধভাবে চালু রাখেন নুর হোসেনের অপরাধ সাম্রাজ্য। চাঁদাবাজী, মাদকব্যবসা, ভুমিদসু্যুতাসহ বিভিন্ন অপরাধ সেক্টর ভাগেযোগে নিয়ন্ত্রন করেন তারা। এতে কেউ ব্যর্থ হলে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা হস্তক্ষেপ করে অপরাধ সাম্রাজ্য চলমান রাখেন।

সম্প্রতি নাসিক ৪ নং ওয়ার্ডে শিমরাইলে ডেমরা সড়কের পাশে ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদার দাবি করে ব্যবসায়ী মহলে বেশ আতংকের সৃষ্টি করে নুর হোসেনের ভাতিজা মাদকসেবী শাহিন (৩২)। ওই সড়কের ছিনতাইকারী ও মাদক ব্যবসায়ীরা তার নিয়ন্ত্রনে রয়েছে একাধিক সূত্র দাবি করে। বিশেষ করে ওই সড়কের পাশে ভাঙ্গারী ব্যবসায়ীরা নিয়মিত ভাতিজা শাহীনকে নির্ধারিত অংকের চাঁদা দিয়ে আসছেন। অনেক সময় দিতে না পারলে ভাঙ্গারী দোকানে থাকা পুরেনো মালামালকে চোরাই মাল বলে তাদের হুমকি ধামকি দিয়ে অত্যাচার করে থাকে শাহীন।

তার রয়েছে একটি ছিচকে চোর ও কিশোর গ্যাং এর দল। ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে নিজে উপস্থিত থেকে এদের মাধ্যমে চাঁদা আদায়, চাঁদা না দিলে হুমকি এমনকি ওইসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল প্রকাশ্যে কিম্বা চুরি করে নিয়ে যায়। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর ডেমরা রোড়ে ছিনতাই করে বেড়াচ্ছে শাহীন ও তার দলের সদস্যরা। তার ভয়ে ব্যবসায়ীরা আতংকে দিনাতিপাত করছে এবং ভয়ে মুখ খুলতে সাহস না পেলেও বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে ভাতিজা শাহীন গাঁ ঢাকা দিলেও চাঁদাবাজির এ সেক্টর চলমান রাখতে এগিয়ে আসেন নুর হোসেনের ছোট ভাই চিহ্নিত চাঁদাবাজ জর্জ মিয়া।

বুধবার নুর হোসেনের চঁদাবাজির উৎসস্থল আন্ত: জিলা ট্রাক চালক ইউনিয়নের কার্যালয়ে ডেমরা রোডের ভাঙ্গারী ব্যবসায়ীদের ডেকে জজ মিয়া বলেন, আমি ডিবি ও থানাকে অনেক টাকা দেই। আর আমার টার্মিনালের লোহা তোদের কাছে বেঁচে। তোরা প্রতি দোকানদার দশ হাজার টাকা করে দিবি। যাদের দোকান বড় তারা আরও বেশী টাকা দিবি। না দিলে ডিবির ১ নম্বর ওসিকে দিয়ে তোদের কে চোরাই মালের ব্যবসায়ী বানিয়ে ধরিয়ে দিবো। এরপর থেকে ব্যবসায়ীরাদের মধ্যে আরও আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
জানাগেছে, শুধুমাত্র শিমরাইল ট্রাক স্ট্যান্ডে পরিবহন সেক্টর থেকেই জজ মিয়া হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি টাকা। তিনি প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে থাকেন র‌্যাব পুলিশ, ডিবি তার টাকাতেই চলে। তার যে কোনো নির্দেশনাই তাদের নির্দেশনা।

এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগের কাউন্সিলর থাকতে তারা শান্তি মতো ব্যবসা করেছেন। নুর উদ্দিন মিয়া কাউন্সিলর হওয়ার পর থেকে তার ভাতিজার অত্যাচারে অতিষ্ট। টাকা দিয়েও আতংকে থাকতে হয়। এবার নতুন করে জজ মিয়া আতংক আমাদের মধ্যে যোগ হলো। এছাড়া এখানকার ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী মামুন শাহীনের বোন জামাই তার অত্যাচার তো রয়েছেই। এ পরিবারের ভয়ে তারা আতংকে দিনাতিপাত করছে এবং ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।

শিমরাইল ট্রাক স্ট্যান্ডের একাধিক পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা জানান, দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে নূরুজ্জামান জজ “ছোট মিয়া” ও তার বাহিনী। নানা অজুহাতে তারা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক, শ্রমিক ও ট্রান্সপোর্ট মালিকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।

এ নিয়ে চরম অসন্তোষ চলছে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক, শ্রমিক ও ট্রান্সপোর্ট মালিকদের মধ্যে। বুকস্লিপ ও বিভিন্ন খাত তৈরী করে বর্তমানে আন্তঃজিলা ট্রাক চালক ইউনিয়নের নামে গাড়ি প্রতি ৪৫০ টাকা চাঁদা আদায় করছেন। গড়ে প্রতিদিন ৫শ’ থেকে ৬শ’ গাড়ি হতে এ চাঁদা আদায় হয়ে থাকে। এছাড়াও চাঁদা আদায়ে রয়েছে আরো বেশ কয়েকটি খাত। সব মিলিয়ে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেন জজ মিয়া। গত বছর ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বার্ষিকীকে কেন্দ্র করে চাঁদা আদায় করে বেশ বিতর্কিত হন ছোট মিয়া জজ।
অন্যদিকে ভাতিজা শাহীন দুই কাউন্সিলর তার চাচা ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুউদ্দিন ও চাচাত ভাই ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাদলের নাম ভাঙ্গিয়ে সব অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। তার চাঁদাবাজি ও অপকর্মে বাধা নিয়ে নানাভাবে তারা হয়রানির শিকার হয়েছেন। এছাড়াও শাহীনের শেল্টারে ওই এলাকায় টুকুন ও সজিব মাদক ব্যবসা করে থাকে। তারা নিজেকে শাহীনের পার্টনার পরিচয়ে দাবড়িয়ে বেড়ায়।

কিছুদিন আগে শাহিনের রোষানলের শিকার হন সামছু মিস্ত্রি। সে সামছু মিস্ত্রিকে মারধর করে সামনের সব দাঁত ভেঙ্গে ফেলে। এছাড়াও সোহেল, পারভেজ, নয়নের গ্যারেজ, নজরুলের দোকানসহ আরও কয়েকটি ব্যাটারি দোকানের ৪/৫ লাখ টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে শাহীনের সন্ত্রাসী বাহিনীরা। সাত খুনের ঘাতক নুর হোসেন ও বর্তমান দুই কাউন্সিলরের ভয়ে কেউ আইনের আশ্রয় নিতেও সাহস পাচ্ছেনা না।
ডেমরা রোডে প্রত্যেক ভাংগাড়ি দোকান থেকে শাহীনের নিয়োজিত জাহিদুল চাঁদা আদায় করে থাকে।
বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর শাহিন ডেমরা রোডের সকল মাদক ব্যবসায়ী ও ছিনতাইকারিদের মঙ্গলবার রাতে মাছের বাজারে ডেকে বলে আমি শাহিন আমি মার্ডার মামলায় জেল খাটছি আমার বড় ভাই সোহেল হাবিব হত্যা মামলায় ফাঁসির আসামি ছিল। আমরা ২ ভাই মার্ডার মামলার আসামি ছিলাম আজ আমরা বাইরে। তোরা যদি প্রশাসনের কাছে আমার নাম বলছ যে বলবে, তারে মেরে ফেলবো।
এতে মাদক ব্যবসায়িরা বলে আমরা সবাই ৪/৫ বার ডিবি পুলিশের কাছে মাদক নিয়ে ধরা খেয়েও আপনার নাম বলি নাই ভাই, ভবিষ্যতেও বলবনা। এরপর শাহিন সকলকে বলে আমার পাছে পুলিশ বাজছে তোরা সবাই সাবধানে চলবি আমার মাল আমার বাসায় পাঠাইবি।

এ সময় জাহেদুলকে ডেকে বলে ১৫ টা ভাংগাড়ি দোকান থেকে ৫০০০০ টাকা তুলে পাঠাইবি আর কোন লোক খুজলে বলবি আমি নাই।

এদিকে নাম না প্রকাশের শর্তে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা বলেন, বর্তমান এই পরিস্থিতিতে চাচা-ভাতিজা আতংকে রয়েছেন তারা। এমনিতেই বেচাকেনা নেই তার উপর চাঁদার চাপে এখান থেকে পালানো ছাড়া উপায় নেই। পরিবার পরিজন নিয়ে পথে বসতে হবে।
তারা আরও বলেন, নুর হোসেনের স্বজনদের বিশেষ করে চাচা-ভাতিজা জজ মিয়া ও শাহীনের চাঁদাবাজির ফাঁদকে ধ্বংস না করতে পারলে শতাধিক পরিবারের সহস্রাধি সদস্য না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হবে।

এ বিষয়ে সুষ্ঠু ও নিরেপক্ষ তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য র‌্যাব-১১’র অধিনায়ক, নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার ও বিভিন্ন আইনশংখলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ব্যবসায়ীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© ২০২৩ | সকল স্বত্ব  নারায়ণগঞ্জ প্রেস কর্তৃক সংরক্ষিত
Designed by RIAZUL