নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে একাধিক দলিল লিখকের বিরুদ্ধে দলিল রেজিস্ট্রির সময় সরকারি রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে দুদকে দেয়া এক অভিযোগের তদন্ত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দিন ব্যাপী আড়াইহাজারে সরেজমিনে দিয়ে সকলের বক্তব্য নিয়ে তদন্ত শেষ করেন ফতুল্লার সাব রেজিস্ট্রার মোঃ সাজ্জাদুল কবির। বুধবার বিকালে ফতুল্লার সাব রেজিস্ট্রার মোঃ সাজ্জাদুল কবির এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
অভিযোগে জানা গেছে, আড়াইহাজার উপজেলার খামারচর এলাকার আব্দুল মালেকের ছেলে উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিনের বিরুদ্ধে দুদকে দেয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, পেশায় একজন দলিল লেখক সে, সনদ নং- ৬৫। সে আড়াইহাজার সাব-রেজিষ্ট্রী অফিসে দীর্ঘকাল ধরে বেআইনি ভাবে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে নির্ধারিত গড় মূল্যের চেয়ে কম মূল্য দেখিয়ে দলিল রেজিস্ত্রী করে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে এবং সমিতির নামে চাঁদাবাজি করে অবৈধভাবে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে এমন কোনো অপকর্ম নাই যা নুরুল আমিন করে নাই। দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও যুবলীগ নেতা পরিচয়ে অবৈধ অস্ত্র এবং পেশিশক্তি প্রয়োগ করে নানান অপরাধ করে যা”েছ। নুরুল আমিনের এহেন কর্মকান্ডে এক দিকে যেমন সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব হারা”েছ ও অন্যদিকে সাধারণ জনগণ তার কাছে জিম্মি হয়ে পরেছে। একটি সাফ কবলা দলিলের নকলে দেখা যায়, গত ২৬ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে আড়াইহাজার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রীকৃত ১৪১৬৩ নং সাফকবলা দলিলে কাদমিরচর মৌজার ৯৮ শতাংশ নালজমিকে ডোবা শ্রেণী উল্লেখ করে ১৯ লাখ ৬০ হাজার টাকার পরিবর্তে ৪ লাখ টাকা দেখিয়ে ১৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে এবং নাগেরচর মৌজায় গত ০৬ আগস্ট ২০১৮ তারিখে আড়াইহাজার সাব-রেজিস্ট্রী অফিসে রেজিষ্ট্রীকৃত ৭৮০৩ নং সাফকবলা দলিল দ্বারা ১৫ শতাংশ নালজমি উল্লেখ করে ৩২ লাখ ২৬ হাজার ৫শ টাকার পরিবর্তে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্য দেখিয়ে ২৯ লাখ ৭৩ হাজার ৫শ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। নুরুল আমিনের সহযোগিতায় আড়াইহাজার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সহকারী নাসিমা আক্তার এই রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন। প্রথমে দলিল এর শ্রেণী নাল জমির পরিবর্তে অন্য শ্রেণী দেখিয়ে দলিল সম্পাদন করে পরবর্তীতে নাসিমার পুত্র তারেকের সহযোগিতায় দলিলে অস্পষ্টতা দেখিয়ে বাগানে নাল জমি বসিয়ে নিয়েছেন অভিযুক্তরা।
উল্লেখিত ৭৮০৩ নং দলিলের দাত্রী ছিলেন উল্লেখিত নাসিমা আক্তার। দলিল লেখক নুরুল আমিনসহ বেশ কয়েকজনের সিন্ডিকেটে আড়াইহাজার সাব-রেজিস্ত্রী অফিসে চলছে রাজস্ব ফাঁকির মহোৎসব। রাজস্ব ফাঁকির অবৈধ টাকায় নুরুল আমিন গড়ে তুলেছেন প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার সম্পদ। তার নামে বেনামে রয়েছে অজস্র ফ্ল্যাট, বাড়ী, জামি, দোকান, গোডাউন।
প্রাথমিক তদন্তে ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত জড়িত হিসেবে পাওয়া গেছে দলিল লিখক নুরুল আমিন, জাকারিয়া জাকির, কাজল ঢালী, ও অফিস সহকারী নাছিমা আক্তার।
এদিকে এ ঘটনায় মঙ্গলবার তদন্তের কাজে জবানবন্দি গ্রহণ করা হয় দলিল লিখক নুরুল আমিন, সাজ্জাদ পারভেজ, জাকারিয়া জাকির, মকবুল হোসেন, কাজল ঢালী, মহিতুল ইসলাম, অফিস কর্মকর্তা নাছিমা আক্তার (অফিস সহকারী), নার্গিস, নাছিমা, তারেকের।
দলিল লিখক মকবুল জানান, আমার নাম ব্যবহার করে আমাকে না জানিয়ে সবকিছু করেছে দলিল লিখক কাজল ঢালী। এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা।
ফতুল্লার সাব রেজিস্ট্রার মোঃ সাজ্জাদুল কবির জানান, সবার স্বাক্ষি নেওয়া হয়েছে। সঠিক তদন্ত করে রিপোর্ট আমি পাঠিয়ে দিব।