নারায়ণগঞ্জের সবজির বাজার গুলোতে আবারও অস্থিরতা দেখা গিয়েছে। এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে গরীবের মাংস খ্যাত গোল আলু। সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে আলুর দাম বেড়েছে কেজিতে ১০টাকার। আর পাইকারী বাজারে বেড়েছে ৫টাকা।
ঊর্ধ্বমুখী বাজারে আলুর দাম বাড়ায় নিম্নআয়ের পরিবারগুলোতে বাড়তি চাপ পড়েছে। প্রয়োজনীয় এ পণ্যের চড়া দাম প্রভাব ফেলেছে মধ্যবিত্ত পরিবারেও।
সরেজমিনে শহরের প্রধান কাঁচাবাজার দিগুবাবুর বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারের প্রতিটি সবজির দোকানেই আলুর বেশ সরবরাহ লক্ষ্য করা গেছে। প্রায় প্রতিটি দোকানেই বস্তা বস্তা আলু সাজিয়ে বা ঢেলে রাখা হয়েছে। এরপরেও পণ্যটির দাম ঊর্ধ্বমুখী যতই দিন যাচ্ছে ততই দাম বাড়ছে। বাজারে দেশীয় গুটি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে যা পূর্বে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল।
দিগুবাবুর বাজারে আলু কিনতে আসা আনোয়ার হোসেন বলেন, বাজারে যে হারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে তাতে করে আমাদের মত নিম্ন আয়ের মানুষদের বেঁচে থাকাই খুব কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সারাদিন যে আয় তা দিয়ে কোনরকম করে হয়তো একটু চাল সঙ্গে একটু আলু কিনে খাবো কিন্তু সেই অবস্থাও নাই। গরীব মানুষ যে আলু ভর্তা ভাত খাবে সেই দিনও আর নাই। এখন দেখছি আলু বড়লোকের খাবার হয়ে গেছে এটি আর আমাদের মত মানুষদের সাধ্যের মধ্যে নেই। বর্তমানে এক কেজি আলুর দাম ৫০ টাকা এত দাম দিয়ে কিভাবে কিনবো আর কিভাবে খাবো। বাধ্য হয়ে এখন দেখছি আলু খাওয়াও ছেড়ে দিতে হবে তাছাড়া তো কোন উপায় দেখছিনা আমরা।
আলু কিনতে আসা অপর ক্রেতা সুমাইয়া আক্তার বলেন, আলু এমন একটি সবজি এটি ছাড়া কোনো তরকারিই রান্না করা অসম্ভব। যার কারণে প্রতিটি পরিবারের জন্যই আলু একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজি। কিন্তু দিন দিন সেই আলুর দাম বাড়তে বাড়তে আমাদের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে যাচ্ছে। আলু যে ৫০ টাকা কিনে খেতে হবে, এটিই আমার জীবনে এই প্রথম দেখছি। একে তো বেশ কিছুদিন ধরেই সবধরনের আলুর দাম বাড়তি, এর উপর নতুন করে সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দাম কেজিতে প্রকারভেদে ১০ টাকার উপরে বেড়েছে। যে দেশি গুটি আলু কয়েকদিন আগে ৪০ টাকা ছিল তা থেকে বেড়ে ৫০ টাকা হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, বাড়তি দামের কারণে আমাদের সংসার চালাতে যেমন হিমশিম খেতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে যতটুকু প্রয়োজন সেই পরিমাণ ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে না বাড়তি দামের কারণে। যে হিসেব করে বাজার করতে টাকা নিয়ে আসছি বাজারে এসে পণ্যের দামের কারণে সব হিসেব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। এতে করে আমাদের সংসারের ব্যয়ভার মেটানো খুব কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
দিগুবাবুর বাজারের আলু বিক্রেতা আব্দুর রহিম বলেন, এবারে অনেক কৃষক আলু না আবাদ করে সরিষার প্রতি ঝুঁকেছিলেন যার কারণে এবারে অন্যান্য বছরের তুলনায় আলুর উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে। সেই সঙ্গে যেসব আলু উৎপাদন হয় তার অর্ধেকের বেশি কৃষকরা তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে বাড়িতে সংরক্ষণ করেন আর বাকিটা হিমাগারে রাখেন। কৃষকদের বাড়িতে রাখা আলু নিজেরা যেমন খান তেমনি পর্যায়ক্রমে বাজারে বিক্রি করেন। কিন্তু এবারে একধরনের পোকার আক্রমণে কৃষকদের বাড়িতে সংরক্ষণ করা আলু নষ্ট হয়ে গেছে এতে করে বাজারে আলুর সরবরাহ অনেক আগে থেকেই কমে গেছে। বর্তমানে বাজারে যেসব আলু বিক্রি হচ্ছে সবগুলোই হিমাগারের আলু।
তিনি আরও বলেন, কৃষকদের সংগ্রহে থাকা আলু শেষ হয়ে যাওয়ায় এবার অনেকটা আগেভাগেই হিমাগার থেকে আলু বাহির হতে শুরু করেছে। যার কারণে হিমাগারেই আলু শেষের দিকে হওয়ায় দাম বাড়তি। যার কারণে আমাদের বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে সেই হিসেবে বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। মূলত চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমের কারণেই আলুর দামটা বাড়তি হচ্ছে। আমরা পাইকারদের নিকট থেকে যে দামে আলু কিনছি তার সঙ্গে ২ থেকে ৩ টাকা লাভ যোগ করে বিক্রি করি। বাজারে নতুন আলু না উঠা পর্যন্ত দাম কমার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।