দলত্যাগ করে ঘরে বাইরে সমালোচনার মুখে পড়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির বহিস্কৃত আহবায়ক অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। স্থানীয় রাজনীতিতে তাকে নিয়ে মুখরোচক নানা সমালোচনার ঝড় বাইছে। শুধু তাই নয়, তৃণমূল বিএনপিতে যোগদানের বিষয়টিকে তার ঘরের লোকও ভালোভাবে নেয়নি। গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে তারা তাদের অবস্থান পরিস্কার করেছেন।
অপরদিকে তৈমূর আলম বিএনপিতে থাকা অবস্থায় তার সহযোগী হিসেবে যারা ছিলেন, তারাও তাকে নিয়ে কঠোর বিষদাগার করছেন। তারা বলেন, তৈমূর আলম ছিলেন আওয়ামীলীগে। আবার আওয়ামীলীগের টোপে ফিরে গেছেন। মাঝে বিএনপি থেকে সূবিধা ভোগ করেছেন। তাকে লোভ লালসা পেয়ে বসেছে। মন্ত্রী এমপি হওয়ার জন্য বেঈমানি করেছে। দেড় বছর আগে তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা বিএনপিতেই আছে। সুবিধাবাদী তৈমূরের সঙ্গে বিএনপির কেউ নেই। তবে তৈমূর আলমের দাবি, তার অনুসারীদের তার কাছ থেকে আলাদা করা যাবে না।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি ও তৈমূর আলম খন্দকারের ছোট ভাই নাসিক কাউন্সিলর মাকছুদুর রহমান খন্দকার খোরশেদ গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে বলেন, আমাদের পরিবারের একমাত্র ভরসাস্থল ও নীতি নির্ধারক তৈমুর আলম খন্দকার। তবে তার বর্তমান রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমরা একমত নই। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি একটি মহাসমুদ্র। এই মহাসমুদ্রে আমার মত নগন্য একজনের থাকা না থাকায় কিছু আসে যায় না। তবুও বলতে চাই আমৃত্যু আমি বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল হয়ে বিএনপিতেই থাকতে চাই। বিএনপি যদি আমাকে বহিষ্কারও করে তবুও আমি ধানের শীষের একজন ভোটার, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী আদর্শের একজন অনুসারী ও শুভাকাঙ্ক্ষী হিসাবে জাতীয়তাবাদী দলের প্রতি আস্থাশীল ও দলের সঙ্গে থাকবো ইনশাআল্লাহ। আমাকে ভালবাসেন এমন নেতাকর্মীদের ও নারায়নগঞ্জবাসীকে বিভ্রান্ত না হয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান রইলো।
নারায়ণগঞ্জজ মহানগর কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক ও তৈমূর আলম খন্দকারের ভাগ্নে রাশেদুর রহমান রশু গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে বলেন, তৈমূর আলম খন্দকার আমাদের পরিবারের একমাত্র অভিভাবক। তবে তার বর্তমান রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমি একমত নই। আমি বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল হয়ে বিএনপিতেই আছি এবং আমৃত্যু বিএনপিতেই থাকবো।
নাসিক নির্বাচনে তৈমূর আলম খন্দকারের পক্ষে সিদ্ধিরগঞ্জ সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা জেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক মনিরুল ইসলাম রবি বলেন, যেই নেতার (তৈমূর) জন্য জেল খেটেছি তার দল পরিবর্তনে আমি ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, ‘তৈমূর আলম আমাদের দলের লোক ছিল না। সে আওয়ামী লীগ করতো, সেখান থেকে তাকে দলে আনা হয়েছিল। সে বিএনপি থেকে সকল বেনিফিট নিয়েছে। পাঁচ বছর বিআরটিসির চেয়ারম্যান ছিল, দুই বার জেলা বিএনপির সভাপতি, একবার সেক্রেটারি, একবার আহবায়ক ছিল। তার তো প্রাপ্তির শেষ নেই। দলে যতদিন সুবিধা পেয়েছে, থেকেছে। এখন সুবিধা পায় না, তাই চলে গেছে। এরা সবসময়েই সুবিধাবাদী মানুষ।’
তৈমূর আলম খন্দকারের একসময়ের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ নেতা ও বর্তমান মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, ‘আমি তার আদর্শের রাজনীতি করি নাই। আমি করেছি জিয়ার আদর্শের রাজনীতি। সে আওয়ামী লীগ থেকে এসেছে, আবার আওয়ামী লীগ লালিত তৃণমূল বিএনপিতে চলে গেছে। তাকে লোভ লালসা পেয়ে বসেছে। মন্ত্রী এমপি হওয়ার জন্য বেঈমানি করেছে। সে এখন আওয়ামী লীগের দালালি করে মন্ত্রী এমপি হবে। আমাদের পক্ষে এমন কাজ করা সম্ভব না।’
জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন বলেছেন, তৈমূর আলম শৃংখলাভঙ্গের কারণে দল থেকে বহিস্কার হয়েছেন। বহিস্কৃত ব্যক্তি কখন কি করবে এটা তার একান্ত বিষয়। এতে বিএনপির কোন কিছু যায় আসে না। বিএনপি দেশের একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। এখানে কেউ আসে আবার কেউ যায়। বহিস্কৃত ব্যক্তি তৃণমূল বিএনপিতে গেছে, এতে বিএনপি চুল পরিমান ক্ষতি হয়েছে বলে আমি মনে করি না।
প্রসঙ্গত: তৈমূর আলম খন্দকার বিলুপ্ত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রয়াত চেয়ারম্যান আলী আহাম্মদ চুনকার (মেয়র আইভীর বাবা) অনুসারী ছিলেন। সেসময় চুনকার সঙ্গেই রাজনীতি করতেন। পরবর্তীতে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে এক পর্যায়ে ২০০৩ সালে তৈমুর আলম নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক হন। এরপর ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। ২০১১ সালের ৩০শে অক্টোবর অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি’র দলীয় মেয়র প্রার্থী হওয়ার পর ভোটের মাত্র ৭ ঘণ্টা আগে দলীয় চেয়ারপারসনের নির্দেশে তিনি নির্বাচন থেকে সরে আসেন। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৈমূর আলমকে পুনরায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক করা হয়। ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়।