নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, যে মুহুর্তে এ অনুষ্ঠান চলছে সে মুহুর্তে তো আমার এনজয় করার কথা। কিন্তু পারছিনা, আমার টেনশন হচ্ছে। কারণ উানারা (মুক্তিযোদ্ধা) যে দেশটা স্বাধীন করেছেন সে দেশের মানচিত্র ক্ষতবিক্ষত করার চেষ্টা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) রাতে বন্দরের সমরক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমানকে দেয়া এক গণসংবর্ধনায় অংশ নিয়ে একথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ শেখ হাসিনার মাধ্যমে পৃথিবীর মানচিত্রে নিজের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে বাংলাদেশকে পেছনে নেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। সেদিন এক সভায় প্রধানমন্ত্রী বললেন, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দেশকে উন্নত করেছিলেন। তাকে ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতা থেকে সরানো হল। তিনি আবারও নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি সেদিন দুঃখ করে বলছিলেন, আমি দেশকে যেখানে নিয়েছিলাম সেখান থেকে অনেক পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।
আপনার বাগানে যদি ফলগাছ লাগান তাহলে ফল পাবেন। আর ফুলগাছ লাগালে ফুল। যদি ভাবেন অন্য কেউ এসে করে দিবে তাহলে বাগান হবে জঙ্গলের মত।
আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময় বুঝতাম না। মাকে বলেছিলাম মুক্তিযুদ্ধ কী, স্বাধীনতা কী। তিনি বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু মানে স্বাধীনতা। যেদিন জাতির পিতাকে হত্যা করা হল আমার মনে হয়েছিল আমরা স্বাধীনতা হারিয়েছি। আমার ভাই নাসিম ওসমান এ এলাকার এমপি ছিল। সেদিন রাতে তার বিয়ে, সেরাতেই পঞ্চাশজন লোক নিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে বেরিয়ে গিয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু থাকলে আমরা কেউ রাজনীতি করতাম না। বঙ্গবন্ধু থাকলে বাংলাদেশ অনেক আগেই জাপানের মত উন্নত রাষ্ট্রে পরিনত হত। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে আমাদের যৌবন আমাদের কৈশরকে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, রাজনীতি একটা এবাদত। আমি যখন এমপি ছিলাম ১৯৯৬ সালে আমাকে ফেল করিয়ে দেয়া হল। বিদেশে ১৮ ঘন্টা কাজ করে খেয়েছি। সবাই বলত এমপি ছিলা কী করলা। আমি বলতাম আমার বাবা শামসুজ্জোহা, ধান্ধাবাজি করতে রাজনীতি করতে আসিনি। আজ একদল লোক বাংলাদেশকে চিবিয়ে খেতে চায়। ওদের খাওয়ার শখ মেটেনা।
তিনি আরো বলেন, আমরা কাজ করেছি আপনাদের খুশি করার জন্য। আপনারা খুশি হলে আল্লাহ খুশি হন। সেলিম ওসমান ভোটের জন্য নয় আল্লাহকে খুশি করার জন্য কাজ করেছেন। আমার মেজ ভাই আমাদের জন্য যে কষ্ট করেছে কোন পিতা এত কষ্ট করেনা।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের শুরুতে বিগত ৯ বছর যাবত সেলিম ওসমানের নানান উন্নয়ন নিয়ে তৈরি করা ‘ডকুমেন্টরি’ প্রদর্শন করা হয়। যাতে ছিল শিক্ষায় তার অবদান, সদর-বন্দরের অবকাঠাম গত উন্নয়নসহ মানবতা মুলক কর্মকান্ড। পরে দোয়া পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বক্তব্য পর্ব।
অনুষ্ঠানে বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ রশিদ এর সভাপতিত্বে ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এহসানুল হক নিপুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাবু চন্দন শীল, সেলিম ওসমানের সহধর্মিনী মিসেস নাসরিন ওসমান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, নারায়ণগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি সানাউল্লাহ সানু, বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজিম উদ্দিন প্রধান, বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বাংলাদেশ ক্লাস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রবীর কুমার সাহা, এনসিসিআই এর পরিচালক মোরশেদ সারোয়ার সোহেল, বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লিটন সাহা, বাংলাদেশ হুঁশিয়ারি সমিতির সভাপতি নাজমুল আলম, বাংলাদেশ নিটিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সেলিম সারোয়ার, বাংলাদেশ ডাইন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমজাদ হোসেন খসরু, আইনজীবী সমিতির সভাপতি হাসান ফেরদৌস জুয়েল। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন- নারায়ণগঞ্জের সাবেক নারী সংসদ সদস্য হোসনে আরা বাবলি, শামীম ওসমানের একমাত্র পুত্র ইমতিনান ওসমান আয়ন, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জিএম আরমান, মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি মোদাচ্ছেরুল হক দুলাল, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ, প্রমুখ।
পরিশেষে ক্রেস্ট ও ফুলের তোরা দিয়ে বিভিন্ন দলের, পেশার ও সাধারণ মানুষ সেলিম ওসমানকে সংবর্ধনা প্রদান করেন।